চলছে পাত পেড়ে খাওয়ানো। নিজস্ব চিত্র
এক জনের কর্মস্থল মধ্যপ্রাচ্য, কাতার। অন্য জন পেশায় শিক্ষক। কিন্তু দু’জনেরই উদ্দেশ্য অপুষ্টিতে ভোগা আসানসোলের নানা এলাকার শিশুদের দু’বেলা পুষ্টিসম্মত খাবার দেওয়া। সেই উদ্দেশ্যই দু’জনকে এক সূত্রে বেঁধেছে। প্রথম জন, মহম্মদ সাদাব, অন্য জন শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু। আসানসোলের বাসিন্দা এই দু’জন মিলে তৈরি করেছেন, ‘প্রোটিন ক্লাব’। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন, মঙ্গলবার থেকেই এই ক্লাবের ব্যানারে বস্তি এলাকার শিশুদের দু’বেলা পুষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করলেন।
মঙ্গলবার আসানসোলের পলাশডিহা ভুঁইয়াপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, প্রায় ২৫ জন শিশুকে খাওয়ানো চলছে। পাতে পড়ছে ভাত, মুরগির মাংস ও পাঁপড় ভাজা। রান্না করেছেন বস্তির মহিলারাই। খাবার পরিবেশন করছেন সাদাব ও চন্দ্রশেখরবাবু। এলাকার বাসিন্দা গঙ্গা ভুঁইয়া জানান, বাড়ির ছেলেরা সবাই প্রায় দিনমজুর, মহিলারা পরিচারিকার কাজ করেন। অল্প রোজগারে শিশুদের পাতে পুষ্টিসম্মত খাবার দেওয়া সবসময়ে সম্ভব হয় না।
কিন্তু এমন ভাবনা কী ভাবে মাথায় এল? জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনী, বছর ৪০-র সাদাব বলেন, ‘‘এখানে শিশুরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয়। অপুষ্টিতে ভোগে। অনেক বার ভেবেছি কিছু করা দরকার। তাই চন্দ্রশেখরবাবুকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের আগে এই উদ্যোগ শুরু করলাম।’’ সাদাব আসানসোলের ছেলে হলেও বছর তিনেক ধরে কাতারে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন দু’মাসের ছুটি নিয়ে এসেছি। যখন শহরে থাকব না, তখনও প্রোটিন ক্লাবের পাশে থাকব সবরকম ভাবে।’’
গত কয়েক বছর ধরেই খাদ্য অপচয় রোধ সচেতনতা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চন্দ্রশেখরবাবু। যে কোনও অনুষ্ঠানবাড়ি বা হোটেল, রেস্তরাঁয় বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে শহরের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় নিয়ে গিয়ে শিশুদের খাইয়ে আসেন। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সূত্রে চন্দ্রশেখরবাবুর এমন উদ্যোগের কথা জানতে পারেন সাদাব। দু’জনের যোগাযোগ হয় ফেসবুকে। তার পরেই ঠিক হয় এই পরিকল্পনা।
চন্দ্রশেখরবাবু জানান, দেশে পাঁচ বছরের কমবয়স্ক শিশুদের মধ্যে গড়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ চরম অপুষ্ঠিতে ভুগছে বলে সমীক্ষায় জানা যায়। এর ফলে শিশুর শরীর ও বুদ্ধির বিকাশ বাধা পাচ্ছে। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রোটিন ক্লাবের মাধ্যমে শিশুদের পাতে ডিম, মাংস, সয়াবিন, ডাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘আমরা চাই শহরের সমস্ত ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই কাজে এগিয়ে আসুক।’’ দুপুর ও রাতে শিশুদের খাবার দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।