মঙ্গলকোটের হিমঘরে আলুর সঙ্গেই পচা ছানা

মোবাইলের মাধ্যমে পাওয়া একটি তথ্যের সূত্র ধরে মঙ্গলকোটের কৈচর ২ পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধানকে নিয়ে এ দিন যজ্ঞেশ্বরডিহির ওইহিমঘরে যান মহকুমাশাসক সৌমেন পাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০২:১৬
Share:

পচা: উদ্ধার হওয়া ছানা। নিজস্ব চিত্র

পুরসভার হানায় সোমবার কাটোয়া শহরের বিভিন্ন রেস্তরাঁ ও খাবারের দোকান থেকে মিলেছিল পচা মাছ, মাংস, মশাল। সেই ঘটনায় চার ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে কাটোয়া থানার পুলিশ। এ বার পচা ছানা ও সন্দেশ উদ্ধার হল মঙ্গলকোটের যজ্ঞেশ্বরডিহিতে। প্রশাসনের দাবি, আলুর হিমঘরের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ছানা মজুতের ব্যবসা চালাচ্ছিলেন হিমঘরের মালিক। মঙ্গলবার খোদ মহকুমাশাসকের (কাটোয়া) অভিযানে উদ্ধার হওয়া ছানা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

মোবাইলের মাধ্যমে পাওয়া একটি তথ্যের সূত্র ধরে মঙ্গলকোটের কৈচর ২ পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধানকে নিয়ে এ দিন যজ্ঞেশ্বরডিহির ওইহিমঘরে যান মহকুমাশাসক সৌমেন পাল। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আদপে আলু মজুত রাখার হিমঘর হলেও তারই এক কোণায় ফুট চল্লিশেক লম্বা ও ফুট ছয়েক চওড়া ঘরের মধ্যে থরে থরে সাজানো রয়েছে প্লাস্টিকের ড্রাম। সেগুলির মধ্যে ফুলে ফেঁপে ওঠা বাসি ছানা, সন্দেশ,খোয়া ইত্যাদি। সেই গন্ধে প্রশাসনিক আধিকারিকদের গা গুলিয়ে ওঠে।

ড্রামগুলির ঢাকনার উপরে ক্রেতার নাম, ঠিকনাও জ্বলজ্বল করছে। তবে ওই ঘরে ছানা শীতলীকরণের জন্য বিশেষ কোনও যন্ত্রের দেখা মেলেনি। প্রশাসনের কর্তারা জানান, আলু মজুত রাখার ঘরে নীচের দিকে ফুট তিনেকের জানলা রয়েছে। সেই জানলায় নেট ও থার্মোকল লাগানো রয়েছে। তার মাধ্যমেই আলুর ঘরের ঠান্ডা হাওয়া ছানাকেও ঠান্ডা রাখত। এ দিন উদ্ধার হয় ৭৫ ড্রাম ছানা এবং ২০ ড্রাম মাখা সন্দেশ। এক একটি ড্রামে ১৫ কেজি করে ছানা ছিল বলে জানা যায়।

Advertisement

হিমঘরের মালিকের দেখা না মিললেও ম্যানেজার তুষার মল্লিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন প্রশাসনের কর্তারা। হিমঘর থেকে প্রাপ্ত একটি খাতায় ১ মে-র ছানা নেওয়ার হিসাব পাওয়া যায়। অর্থাৎ, প্রায় আট দিনের পুরনো ছানা মজুত ছিল সেখানে। হিমঘরটির মালিক, বর্ধমানের বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘কৃষি বিপণন দফতরের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া ছানা ও সন্দেশের নমুনা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। মালিককে শীঘ্রই শোকজ করা হবে।’’

কিন্তু, এই ছানা যেত কোথায়? প্রশাসন সূত্রে খবর, ছানা ও মাখা সন্দেশের খদ্দের ছিল কাটোয়ার ভালশুনি, কারুলিয়া, মঙ্গলকোটের নতুনহাট, যজ্ঞেশ্বরজিহি, কৈচর-সহ বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় মিষ্টির দোকানে পাঠানো হত। কাটোয়া শহরের বেশ কিছু দোকানেও ছানা ও সন্দেশ সরবরাহ হত বলে জানা যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে, ছানার বাজারদর কম থাকার সময় এই হিমঘরে তা মজুত করে রাখা হত। পরে দাম বাড়লে ছানা বার করা হত। তা করতে গিয়েই ছানা পচে যায়। এ বিষয়ে হিমঘর মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন।

অন্য দিকে, সোমবার কাটোয়া পুর-এলাকার ১০টি হোটেল, রেস্তরাঁ ও মাংসের দোকানে পুরকর্তাদের পরিদর্শনের ভিত্তিতে কাছারি রোড ও সুবোধ স্মৃতি রোডের চারটি রেস্তরাঁ এবং হোটেলের মালিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা হলেন গণেশ ঘোষ, বুদ্ধদেব মণ্ডল, ওয়াসিম খান ও মৌসুমী ভট্টাচার্য। কাছারি রোডের আরও এক হোটেলের বিরুদ্ধে পচা ও বাসি মাছ-মাংস, মোমো, চাউমিন, বাটা মশলা, মেয়াদ উত্তীর্ণ জলের বোতল বিক্রির অভিযোগ দায়ের করেছেন পুরসভার স্যানিটারি ইনসপেক্টর মলয়কান্তি ঘোষ। তবে, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে এখনও কেউ গ্রেফতার হননি। ধৃত চার জনকে এ দিন মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে ১৪ই মে পর্যন্ত জেল হাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুরসভার হঠাৎ হানা এবং গ্রেফতারির খবর কাটোয়া শহরে দ্রুত ছড়িয়েছে। এই সূত্র ধরে ছড়াচ্ছে গুজবও। তার জেরে ব্যবসা মার খাচ্ছে বলে দাবি কাটোয়ার রেস্তরাঁ মালিকদের একাংশের। ডাকবাংলো রোডের এক রেস্তরাঁ কর্তা পুলক বিশ্বাস বলছেন, ‘‘সোমবার ১৭ প্লেট চিকেন বিরিয়ানির অর্ডার পেয়েছিলাম। পরিদর্শনের খবর চাউর হতেই অর্ডার বাতিল করে দেওয়া হয়।’’ এখন সব্জি ও ডিমের পদই বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা বলেও তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন