পট থেকে পাথরের দুর্গা, আস্থা সাবেক রীতিতেই

খরায় ফসল না হওয়ায় সে বার মৃৎশিল্পীকে পুজো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন উখড়ার তিলিপাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কর্তা রামধনবাবু। কথিত রয়েছে, মৃৎশিল্পী ফিরে যাওয়ার পথে তাঁকে লালপাড় সাদা শাড়ির এক মহিলা জানান, ফিরে যেতে হবে না।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২৫
Share:

চক্রবর্তী বাড়িতে পুজোর প্রস্তুতি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

খরায় ফসল না হওয়ায় সে বার মৃৎশিল্পীকে পুজো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন উখড়ার তিলিপাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কর্তা রামধনবাবু। কথিত রয়েছে, মৃৎশিল্পী ফিরে যাওয়ার পথে তাঁকে লালপাড় সাদা শাড়ির এক মহিলা জানান, ফিরে যেতে হবে না। দুর্গামন্দিরে কৌটোতে রাখা পয়সাতেই এ বারের পুজো যাবে। কৌটোয় রাখা বীজ দিয়েই সে বার পুজোর প্রসাদ করা হয়। তারপর থেকে এই পরিবারের দেবী ‘বীজখেকো দুর্গা’ নামে পরিচিত।— এমনই জনশ্রুতি ছড়িয়ে রয়েছে উখ়ড়া গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন পারিবারিক পুজোগুলিতে।

Advertisement

উখড়ার হান্ডা পরিবারে পুজো শুরু হয়েছিল ১২৪৮ বঙ্গাব্দে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শম্ভুনাথলাল সিংহ হান্ডার মেয়ে আলপনার অকাল মৃত্যুর শোক ভুলতে কূলগুরু দুর্গাপুজোর নিদান দেন। পরে শম্ভুনাথবাবুর নির্দেশে তাঁর মেয়ের মুখের আদলে তৈরি হয় দেবীর মুখ। পরিবারের সদস্য শোভনলাল সিংহ হান্ডা জানান, সাবেক প্রথা মেনে এখনও মূর্তি গড়া হয়। আবার সেই শুরু থেকেই পুজোয় কোনও আলপনা আঁকা হয় না।

পরের বছর শম্ভুনাথবাবুর অনুরোধ তাঁর বন্ধু শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায় পুজো শুরু করেন। ১৬৮৫ খ্রিস্টাব্দে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো শুরু করেছিলেন দর্পনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আধ্যাত্মিক আবেগ থেকেই তিনি পুজো শুরু করেছিলেন। ৩০৬ বছর আগে চক্রবর্তী বাড়িতে পুজো শুরু হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবী কল্যাণেশ্বরী গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারের এক সদস্যকে স্বপ্নাদেশে জানান, এলাকার চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গা প্রতিমাতে তিনি প্রকট হবেন। সেই থেকে পূর্বপুরষ কালিচরণ চক্রবর্তী প্রতিষ্ঠিত এই দুর্গা এলাকায় ছোট-কল্যাণেশ্বরী বলে পরিচিত। আগে সপরিবারে যুদ্ধরতা দেবীর পট আঁকা হতো। এখন পাথরের স্থায়ী মূর্তি তৈরি করে পুজো হয়। এ ছাড়াও গ্রামের অন্য একটি বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির প্রায় দু’শো বছরের ‘পটের পুজো’ও প্রতিবারই নজর কাড়ে। ২৬৫ বছরে পা দিল ময়রাপাড়ার রায়দের পুজো। পাণ্ডে পরিবারে এক ফুট উঁচু কষ্টিপাথরের দুর্গামূর্তি পূজিতা হন প্রায় দুই শতাব্দী ধরে। দু’শো বছরের পুরনো ভট্টাচার্য পরিবারের রনংদেহী দেবীর আটটা হাত ছোট ও দু’টো বড়। শতবর্ষ পেরিয়েও পারিবারিক ঐতিহ্য অমলিন রয়েছে বাগদী বাড়ির, ধীবর বাড়ি, কর্মকারদের পুজো।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement