রূপম দেবনাথ ও শান্তনু দে। নিজস্ব চিত্র
টিনের চালের ঘর। কালনা শহরের স্টেডিয়াম মার্কেটে ব্যাগ সেলাইয়ের ছোট দোকান রয়েছে বাবার। তবে অর্থকষ্ট দমিয়ে রাখতে পারেনি পূর্ব সাতগেছিয়া পঞ্চায়েতের পূর্ব সাহাপুর গ্রামের শান্তনু দে-কে। মাধ্যমিকে ৬৫৯ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কালনা মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্র।
নিতাইচাঁদ দে জানান, তাঁরা চার জন মিলে একটা ঘরে থাকেন। অল্প রোজগারেই দুই ছেলেমেয়েকে বড় করছেন তিনি। মেয়ে তিথি এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে বসেছেন। ছেলেকে আরও একটু সাহায্য করতে পারলে সে আরও ভাল ফল করত, মনে করেন তিনি। নিতাইবাবুর দাবি, ‘‘দোকান ভাল চলে না। তার উপরে ছেলের মতো অনেক ছাত্র আসে ব্যাগ সারাতে। তাদের থেকে পারিশ্রমিকও চাইতে পারি না। আমি চাই, বড় হয়ে ছেলে এমন কিছু করুক যাতে সমাজের উপকার হয়।’’ শান্তনু জানায়, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার। তবে সাধ আর সাধ্যের ফারাকে কতখানি ইচ্ছেপূরণ হবে, জানে না সে। শান্তনুর কথায়, ‘‘স্কুলের শিক্ষকেরা ছাড়া, এক জন টিউটর ছিলেন। যে ভাবে সাহায্য চেয়েছি, ওঁরা করেছেন। মাস্টারমশাইদের জন্যই এই ফল।’’ কালনা মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষ বলেন, ‘‘শান্তনুর প্রতিভা রয়েছে। সুযোগ পেলে, আগামী দিনে ও নিজেকে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে। স্কুল ওর পাশে আছে সব সময়।’’
কার্যত নুনের জোগাড় করতে পান্তা ফুরনোর সংসারে বড় হয়েছে পূর্বস্থলীর দক্ষিণ শ্রীরামপুর এলাকার রূপম দেবনাথও। নবদ্বীপের বকুলতলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়ে ৬৪৯ পেয়েছে সে। তাঁর বাবা ঝন্টু দেবনাথ ট্রেনে হকারের কাজ করতেন। কিন্তু ‘লকডাউন’-এর জেরে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প পেশা খুঁজে নেন তিনি। নানা জায়গায় ঘুরে জামাকাপড় বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন আপাতত। ঝন্টুবাবুর কথায়, ‘‘ভাল ফলের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল ছেলে। আমরা খুশি কষ্টের মধ্যেও ও ভাল করায়।’’ ফল প্রকাশের পরে, ওই ছাত্রের বাড়ি গিয়েছিলেন পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক। রূপম জানায়, সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চায় সে।
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে