রাজনীতি না ব্যবসা, ধন্দ কারণে

‘আক্রান্ত’ দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য), গ্রেফতার যুবক

ঘটনার পরেই দুর্গাপুর পুরসভার কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ রাখি তিওয়ারির বাড়ি গিয়েছিলেন তৃণমূলের দুর্গাপুর ২ ব্লক সভাপতি সরবিন্দু বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি, ধৃত যুবক পবন প্রধানের সঙ্গে বিজেপি-র যোগাযোগ রয়েছে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৯
Share:

সাতসকালে হামলার খবর চাউর হওয়ার পরে মেয়র পারিষদের বাড়ির সামনে ভিড়। শুক্রবার দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র

সাতসকালে মেয়র পারিষদের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে কামড়ে দেওয়া এবং অস্ত্র হাতে হামলার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। কিন্তু কেন হামলা, তা শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। তৃণমূল এই ঘটনার জন্য বিজেপি-কে দায়ী করেছে। বিজেপি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আবার পুলিশের একটি সূত্রের মতে, এই ‘হামলা’র নেপথ্যে ব্যবসাগত কোনও টানাপড়েনও থাকতে পারে।

Advertisement

ঘটনার পরেই দুর্গাপুর পুরসভার কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ রাখি তিওয়ারির বাড়ি গিয়েছিলেন তৃণমূলের দুর্গাপুর ২ ব্লক সভাপতি সরবিন্দু বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি, ধৃত যুবক পবন প্রধানের সঙ্গে বিজেপি-র যোগাযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে বিজেপি-র এক নেতা আমাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। তার পরেই এই ঘটনা। তাই আমরা ধরে নিচ্ছি, দু’টি বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্র থাকতেও পারে।’’ যদিও বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দুর্গাপুরের বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘নিজেদের মধ্যে কোনও ভাগ-বাঁটোয়ারা, আখের গোছানো নিয়ে গোলমাল। ‘ট্রেড লাইসেন্স’ বা যে কোনও শংসাপত্র পেতে ওই কাউন্সিলরকে টাকা দিতে হয় বলে বাসিন্দাদের ক্ষোভ রয়েছে।’’ যদিও টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাখিদেবী।

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানিয়েছে, ধৃত পবনকে জেরা করে জানা গিয়েছে, তিনি প্রায় বছর দশেক ধরে কেব্‌ল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ঘটনাচক্রে, রাখিদেবীর স্বামী কৌশিকবাবুও কেব্‌লের ব্যবসা করেন। কৌশিকবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘ওই যুবকটিকে আমি কখনও দেখিনি। নাম শুনেছি। বাড়ি বাড়ি কেব্‌লের টাকা আদায় করেন।’’

Advertisement

পুলিশের একটি সূত্রের মতে, কেব্‌ল-ব্যবসা সংক্রান্ত কোনও বিবাদ থেকেই এমন ঘটনা কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেব্‌ল অপারেটরদের একটি সংগঠনের অভিযোগ, অতীতে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কেব্‌লের ব্যবসা চালাতেন গোবিন্দ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি। ওই সংগঠনের অভিযোগ, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে গোবিন্দবাবুর কাছ থেকে ব্যবসা দখল করেন কৌশিকবাবু। যদিও কৌশিকবাবুর কথায়, ‘‘ব্যবসা-দখলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। হামলার ঘটনার সঙ্গে ব্যবসার কোনও যোগও নেই। দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।’’

প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, কেব্‌ল ব্যবসায়ী গোবিন্দবাবুর ব্যবসায়িক সঙ্গী পবন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেব্‌ল ব্যবসা হাতছাড়া হওয়ার ক্ষোভ থেকেই এ দিন পবন কৌশিকবাবুর সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’ করতে গিয়েছিলেন, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তাই তদন্তকারীদের অনুমান, রাখিদেবী তাঁর স্বামী বাজারে গিয়েছেন বলার পরেও পবন তা বিশ্বাস না করে জোর করে বাড়িতে
ঢুকতে চেয়েছিলেন।

ঘটনার নেপথ্যে অতীতের কোনও গোলমালের যোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাখিদেবীও। তাঁর কথায়, ‘‘আমার তো কারও সঙ্গে কোনও অশান্তি নেই।’’ কৌশিকবাবুর বক্তব্য, ‘‘কেন এমনটা ঘটল, জানি না।’’ তবে ব্যবসাগত বিবাদের বিষয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘কেব্‌ল ব্যবসা নিয়ে অশান্তির জেরে এ দিনের ঘটনা ঘটে থাকতেও পারে। গোবিন্দবাবুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’ সে ক্ষেত্রে কি কৌশিকবাবুকেও জেরা করার কথা ভাবছে পুলিশ? অভিষেকবাবুর বক্তব্য, ‘‘তদন্তে যাঁর যাঁর নাম জানা যাবে, তাঁকেই ডেকে জেরা করা হবে।’’

এমন ঘটনায় পবনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁর বৌদি মিঠু প্রধান। মিঠুদেবীর কথায়, ‘‘ও তো বাড়িতে তেমন কথাই বলে না। তবে কেব্‌ল-ব্যবসা করে। সকালে স্নান সেরে খাওয়া-দাওয়া করল। কিছুই
টের পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন