অবসরের পরেও ভোটের ডিউটি থেকে রেহাই পেলেন না কোরবান শেখ। বীরভূমে বদলি হয়ে যাওয়ার পরেও বর্ধমানেই ভোটের ডিউটি পড়েছে উপল রজকের। আবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের বেশিরভাগ চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাছেই ভোটের ডিউটির চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকে এ রকম হাজারো গরমিলে নাজেহাল কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন।
দফতরের এক কর্মী তো বলেই ফেললেন, প্রথম দিনেই পাগলের মতো অবস্থা। আর যে কত গরমিল ধরা পড়বে কে জানে। এ দিন কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে এসে একের পর এক অভিযোগ জানাতে থাকেন বিভিন্ন সরকারি দফতরের আধিকারিকেরা। একাধিক স্কুল শিক্ষক ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরাও বুথের দায়িত্ব সামলাতে পারবেন না বলে ভোটের ডিউটি থেকে নাম কাটানোর জন্য ওই দফতরে তদ্বির করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের যুক্তি, ‘প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব সামলাতে পারব না। কারণ আমি ইংরাজিতে দক্ষ নই।’ কেউ আবার অসুস্থতার দোহাই দিয়ে ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। তবে কাটোয়া কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের (কেডিআই) প্রধান শিক্ষক সুধীন মণ্ডলের ভোটের ডিউটি আসায় সবচেয়ে বেশি ফাঁপরে পড়েছে মহকুমা প্রশাসন। কারণ ওই স্কুলেই বর্ধমান পূর্ব ও বোলপুর লোকসভার ডিসিআরসি হয়েছে। এ দিন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকও ভোটের ডিউটি থেকে রেহাই চেয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে আসেন। তিনি বলেন, “আমার ডিউটি পড়েছে শুনে প্রশাসনের কর্তারাই হতবাক। তাঁরা বলেন, আপনি ডিউটিতে চলে গেলে ডিসিআরসি কেন্দ্রে ঘরের কোনও সমস্যা হলে মেটাবে কে? আপনার নাম বাদ দিয়েই বর্ধমানে পাঠানো হয়েছিল।”
কর্মীদের এ হেন ভোটের ডিউটির চিঠি পাওয়ার খবর পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে ছুটে আসেন মহকুমা কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) রবিউল ইসলাম। তবে বেলা তিনটে পর্যন্ত মহকুমাশাসকের দফতরে বসে থেকেও তিনি সমস্যার কথা আধিকারিকদের বলতে পারেননি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কোরবান শেখের নামে ভোটের ডিউটি এসেছে। কিন্তু গত অক্টোবরেই অবসর নিয়েছেন তিনি। এরপরেও তাঁ হাতে চিঠি কী করে দেবেন রবিউলবাবু। কোরবান শেখ থাকেন কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামে। ঘটনাটা শেনার পরে তিনিও বলেন, “নির্বাচন কমিশন অবসরপ্রাপ্তদেরও ভোটের ডিউটিতে নিচ্ছে নাকি?” সরকারি গাড়ির চালক উপল রজক মাস ছয়েক আগে বদলি হয়ে সিউড়ি চলে গিয়েছেন। অথচ তাঁর নামেও চিঠি এসেছে। এক সরকারি আধিকারিক তো বলেই ফেললেন, “বারবার পরিমার্জন করে কর্মীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তারপরও কী করে যে ভুল হয়!”
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালেও একই দশা। বেশিরভাগ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ভোটের ডিউটি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এখন সেই কর্মচারীদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন সুপার বর্ণমান টুডু। তিনি বলেন, “হাসপাতাল চালাতে গেলে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী খুবই প্রয়োজন। সেখানে ৪০ জনের মধ্যে ২৫ জনই ভোটের ডিউটিতে চলে গেলে হাসপাতাল চালানো মুশকিল হয়ে যাবে।”
বিষয়টি জেনে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “ডেটা বেসে নাম থাকায় সম্ভবত ভোটের ডিউটি চলে গিয়েছে। তবে আবেদন করলে ওই সব নাম বাদ পড়ে যাবে। আর হাসপাতালের কর্মীদেরও ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’