বরাকর বাসস্ট্যান্ড

দখলদারের দাপটে জায়গা পায় না বাসই

বাসস্ট্যান্ড জুড়ে রয়েছে বাজার। এক পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে অটো। ফলে বাসই ঢুকতে পারছে না স্ট্যান্ডে। এ ভাবেই চলছে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী বরাকর বাসস্ট্যান্ড। পুরসভা থেকে অনুরোধ করা হলেও পুনর্বাসন না পেলে বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বরাকর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৪
Share:

বাসস্ট্যান্ড জুড়ে বাজার। বরাকরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বাসস্ট্যান্ড জুড়ে রয়েছে বাজার। এক পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে অটো। ফলে বাসই ঢুকতে পারছে না স্ট্যান্ডে। এ ভাবেই চলছে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী বরাকর বাসস্ট্যান্ড। পুরসভা থেকে অনুরোধ করা হলেও পুনর্বাসন না পেলে বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

Advertisement

জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নব্বইয়ের দশকে এই বাসস্ট্যান্ডটি তৈরি হয়েছিল। রাজ্য সরকারের বিশেষ তহবিলের টাকায় এটি নির্মাণ করেছিল কুলটি পুরসভা। কুলটি পুর এলাকার মানুষ এই বাসস্ট্যান্ডের উপরেই নির্ভর করেন। বর্তমানে বাস ও মিনিবাস মিলিয়ে প্রতি দিন অন্তত শ’দুয়েক যাত্রিবাহী বাস এখান থেকে নিয়মিত ছাড়ে। প্রতি দিন যাতায়াত করেন প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী। কিন্তু বাসস্ট্যান্ড চত্বর জুড়ে সব্জি ও মাছ বিক্রি হওয়ায় যাত্রীদের দাঁড়ানোর জায়গাই প্রায় নেই। তার উপর রয়েছে অটোর দাপাদাপি। ফলে যানজট হয় নিয়মিত। কয়েকটি মিনিবাস ঢুকতে পারলেও দূরপাল্লার বাসগুলি বাসস্ট্যান্ডে ঢুকতেই পারে না। ফলে সংলগ্ন রাস্তা থেকেই যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ করে তারা। জেলা পরিবহণ দফতরের এক কর্তার আক্ষেপ, “স্ট্যান্ডটি বর্তমানে দখলদারদের হাতে চলে গিয়েছে। প্রশাসন এটি দখলমুক্ত করার কোনও চেষ্টা করছে না।”

বরাকর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বাসস্ট্যান্ডের মধ্যেই পলিথিনের অস্থায়ী ছাউনি খাটিয়ে মাছ, সব্জি ও ফলের বাজার বসেছে। বাসস্ট্যান্ড চত্বরে রয়েছে একাধিক খাবারের দোকান। রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রচুর অটো। দূরপাল্লার বাসগুলি বাসস্ট্যান্ডমুখী রাস্তায় দাঁড়িয়েই যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরা। মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ছেন বাসকর্মীরা।

Advertisement

এই বাসস্ট্যান্ডের আশপাশে প্রতি দিনই পুলিশের গাড়ির দেখা মেলে। কিন্তু তার পরেও যানজট থেকে মুক্তি ঘটছে না কেন? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসস্ট্যান্ড তৈরি হওয়ার কিছু দিন পর থেকেই এটি সব্জি, মাছ ও ফল বিক্রেতাদের দখলে চলে যায়। যেহেতু এই বাসস্ট্যান্ডটি কুলটি পুরসভা তৈরি করেছিল তাই এটি দেখাশোনার দায়িত্বও তাদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভার পক্ষ থেকে বাসস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করার জন্য তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। যদিও কুলটি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা এলাকার বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “আমরা এর আগে বাসস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যাঁরা সেখানে ব্যবসা করছেন তাঁরা উপযুক্ত পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন। পুনর্বাসনের জায়গা পাওয়া যায়নি। তাই শেষ পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে।’’

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, বাসস্ট্যান্ডটি দখলমুক্ত করে সেখানে বাস ঢোকার ব্যবস্থা করতে হবে। একমাত্র তা হলেই বরাকর শহরকে যানজট মুক্ত রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু পুনর্বাসন না পেলে বাসস্ট্যান্ড চত্বর ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। বরাকর বাসস্ট্যান্ডের সব্জি বিক্রেতা রঞ্জিত মোদকের দাবি, “২০ বছর ধরে এখানে বসে সব্জি বিক্রি করছি। আমাদের অন্য জায়গা দেওয়া হলে তবেই উঠে যেতে পারি।’’

কিন্তু বাসস্ট্যান্ড আদৌ দখলমুক্ত করা সম্ভব কি না সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন নিত্যযাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। বরাকর বাসস্ট্য্যান্ডের যানজট মুক্তির জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে গভীর ভাবে ভাবছি। এলাকার বাসিন্দাদের এই সমস্যা মেটাতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন