শিক্ষার অধিকার আইনে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা খরচে পড়া যায়। তবু স্কুল চালানোর খরচের জন্য পড়ুয়াদের কাছে সর্বাধিক ২৪০ টাকা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে বলে জানিয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতর। অথচ দুর্গাপুরের ভারতী হিন্দি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের কাছে ভর্তি ‘ফি’ বাবদ ৫২০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের অভিযোগ, তাঁদের অধিকাংশেরই স্থায়ী রোজগার নেই। সেখানে ভর্তি ফি জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধর্মেন্দ্র প্রসাদের অবশ্য দাবি, স্কুল চালানোর খরচ জোটাতেই এমন ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শহর ও শিল্পাঞ্চলের স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের কাছ থেকে বার্ষিক সর্বাধিক ২৪০ টাকা নেওয়া যায়। তবে পড়ুয়াদের আর্থিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অধিকাংশ স্কুলই কম ফি নেয়। গ্রামের দিকে ফি-এর পরিমাণ আরও কম। এই ফি-এর টাকা থেকে স্কুলের উন্নয়ন, খেলাধুলো, ম্যাগাজিন, গ্রন্থাগার, নৈশপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে বিদ্যুত্, টেলিফোন এমনকী পরীক্ষার খরচও করা হয়। ভারতী হিন্দি হাইস্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, স্কুলের উন্নয়ন খাতে ২৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া স্বাস্থ্যের জন্য ১০ টাকা, সরস্বতী পুজো বাবদ ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে স্কুলে কম্পিউটার শেখানোর জন্য মাসিক ২০ টাকা হারে সারা বছরের জন্য এককালীন ২৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে ভর্তির সময়। ফলে ফি-এর মোট পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫২০ টাকায়। অথচ অন্য স্কুলগুলিতে সরস্বতী পুজোর চাঁদা হিসেবে কোনও টাকা নেওয়া হয় না বলেও জানা গিয়েছে।
দুর্গাপুর ও আশেপাশের গ্রামের বহু হিন্দিভাষী পরিবারের পড়ুয়ারা এই স্কুলে পড়াশোনা করে। অভিভাবকদের অনেকেই রিকশা চালান, কেউ দিনমজুরি করেন। তাঁদের প্রশ্ন, পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সিলেবাসে কম্পিউটারই নেই। তাহলে তা বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে কেন? তাঁদের দাবি, যাঁদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তাঁরা ছেলেমেয়েদের বাইরে কম্পিউটার শেখাতে পারেন। কিন্তু যাঁদের রোজগার কম তাঁদের উপর খরচ চাপিয়ে দেওয়া অনুচিত। এছাড়া ভর্তির রসিদ ঠিক দেওয়া হচ্ছে না, বা হলেও তাতে হিসেবের গড়মিল থাকছে বলে অভিভাবকদের দাবি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধর্মেন্দ্র প্রসাদ অবশ্য বলেন, “স্কুল চালাতে বহু খরচ হয়। বাধ্য হয়েই পড়ুয়া পিছু ফি নিতে হয়।” সহকারী স্কুল পরিদর্শকের দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।