Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: বিবেকানন্দের পথেই কুমারী পুজো বেলুড়ে

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে এ বছর আরও সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন মঠ-কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২১ ০৭:২০
Share:

বেলুড়মঠে কুমারীপুজো। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

একশো একুশ বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দের হাতে যার সূচনা, বুধবার, মহাষ্টমীর সকালে বেলুড়ে মঠে সেই কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হল চিরাচরিত প্রথা মেনেই। কিঞ্চিৎ পার্থক্য অবশ্য এনে দিল করোনা। অন্যান্য বছর কুমারী-রূপিণী দুর্গার এই পুজো দেখতে অসংখ্য ভক্ত-দর্শক ভিড় করেন। কিন্তু অতিমারিকালের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বারের পুজোয় সেই সাধারণের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ।

Advertisement

১৯০১ সালে বেলুড় মঠে দুর্গাপুজো শুরু এবং তখন থেকেই চলে আসছে কুমারী পুজো। প্রথম বছর একসঙ্গে ন’জন কুমারীকে পুজো করেছিলেন স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ। এখন পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সের এক জন কুমারীকেই পুজো করা হয়। এ বছর দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা সোমশেখর চক্রবর্তী ও শ্বেতশ্রী চক্রবর্তীর মেনে শরণ্যাকে বেলুড় মঠের কুমারী করা হয়েছে। তন্ত্রসারে এক-এক বয়সের কুমারীর এক-এক রকমের নাম রয়েছে। সেই সূত্রেই পাঁচ বছর ন’মাস পঁচিশ দিন বয়সের শরণ্যাকে এ দিন উমা-রূপে পুজো করা হয়। শরণ্যা ফিউচার ফাউন্ডেশনের কেজি টু-র ছাত্রী। মঠের মূল মন্দির সংলগ্ন মাঠে বড় মণ্ডপ বেঁধে দুর্গা ও কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়ে আসছিল বহু বছর ধরে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এ বার মূল মন্দিরের পশ্চিম দিকের বারান্দাতেই কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। গত বছর কুমারীর মুখে মাস্ক না-থাকায় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল বিস্তর। হইচই হয়েছিল সমাজমাধ্যমেও।

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে এ বছর আরও সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন মঠ-কর্তৃপক্ষ। অষ্টমীর ২৪ ঘণ্টা আগে পুজোয় যুক্ত সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী-সহ কুমারী এবং তার বাবা-মায়ের করোনা পরীক্ষা করানো তো হয়েছেই। এ বার কুমারীকে মাস্ক পরিয়েই পুজোর জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই অবস্থাতেই তাকে বসানো হয় সিংহাসনে। তবে পুজোর সময় কিছু ক্ষণের জন্য মাস্ক খোলা হয়েছিল কুমারীর। পুজো শেষ হতেই আবার নতুন মাস্ক পরিয়ে তাকে মন্দিরের নীচে বসে থাকা সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীদের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখানো হয়। উপস্থিত সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীরা মাস্ক পরেছিলেন। এ দিন কুমারী পুজো দেখতে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দ, ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী সুহিতানন্দ এবং সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ।

Advertisement

দুর্গাপুজোর সঙ্গে কুমারী পুজো তান্ত্রিক ঐতিহ্যেরই উত্তরাধিকার বলে পুরাণবিদদের অভিমত। প্রবীণ সন্ন্যাসীরা জানাচ্ছেন, দেবী দুর্গা স্বয়ংসম্পূর্ণা, পরমানন্দরূপিণী এবং স্বয়ংসিদ্ধা। বৃহদ্ধর্ম পুরাণ মতে, “কন্যারূপেণ দেবানামগ্রতো দর্শনং দদৌ।” অর্থাৎ দেবী চণ্ডিকা কুমারী-রূপেই দেবতাদের সামনে আবির্ভূতা হয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের অনুরোধে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের শিষ্যা গৌরীমা মঠে কুমারী পুজোর ব্যবস্থা করেন। প্রথম বারের পুজোয় ন’জন কুমারীর মধ্যে এক জন এত অল্পবয়স্কা ছিলেন এবং পুজোর সময় এমন ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন যে, তাঁর কপালে রক্তচন্দন পরানোর সময় স্বামী বিবেকানন্দ শিউরে উঠে বলেছিলেন, ‘‘আহা, দেবীর তৃতীয় নয়নে আঘাত লাগেনি তো!’’ শ্রীশ্রীমা সারদা সে-দিন সেই সব কুমারীকে ‘এয়োরানি পুজো’ করেছিলেন। সূচনাবর্ষের কুমারী পুজোয় ‘জীবন্ত দুর্গা’র চরণে পাদ্য-অর্ঘ্য-শঙ্খবলয়-বস্ত্রাদি অঞ্জলি দিয়ে এবং মিষ্টান্ন ও দক্ষিণা নিবেদন করে ভূমিষ্ঠ হয়ে কুমারীদের প্রণাম করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সেই ধারাবাহিকতা আজও চলছে। এ দিনেও পুজোর শেষে কুমারীকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেন পূজারি ব্রহ্মচারী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন