নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বলতে আর কিছু নেই। সোমবার দিনভর রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে আর প্রান্ত পর্যন্ত শাসক আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ভয়ঙ্কর দাপাদাপির পরে এমনই মন্তব্য করা হল বিজেপির তরফে। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিও তুলে দিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূলকে। ময়দানে নেমে প্রতিরোধের ডাক দিলেন। আর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় যথারীতি যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করে বললেন, এই সবই উন্নয়ন ভেস্তে দেওয়ার ছক। বিরোধীরা নির্বাচনে নামতে ভয় পাচ্ছেন বলেই অপপ্রচার করছেন, দাবি পার্থবাবুর।
রাজ্য বিজেপির তরফে এ দিন দফায় দফায় সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সন্ত্রাসের নিন্দা করা হয়। দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন শমীক ভট্টাচার্য। কোথাও মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হচ্ছে না বিজেপি-কে, নেতা-কর্মীদের উপরে হামলা হচ্ছে, বিজেপি কর্মীকে সিউডিতে খুন করা হয়েছে— অভিযোগ করেন শমীক।
বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুকুল রায়। বিভিন্ন এলাকায় কী ভাবে হামলা হয়েছে, তার ভিডিও ফুটেজ সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন তিনি। নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে বলে তিনিও দাবি করেন।
আরও পড়ুন:
ঝুলে রইল ভোটের দিন ঘোষণা
রাজ্য জুড়ে তীব্র সন্ত্রাস, আক্রান্ত বিধায়ক, সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যটি করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারির দাবি তোলেন। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘এ রাজ্যে আর বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই গণতন্ত্র। নির্বাচন কমিশন মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ। প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা বহাল রাখতে ব্যর্থ। এই রকম পরিস্থিতি যখন হয়, তখন ৩৫৬ ধারা জারি করা ছাড়া আর কোনও পথ থাকে না। বাংলায় এ বার ৩৫৬ ধারা জারি করা হোক। আমরা সেই দাবিই তুলছি।’’
কেন্দ্রে বিজেপি-র সরকার। লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র। কোনও রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি করে সেই শাসনভার নিজের হাতে নিয়ে নেওয়া (রাষ্ট্রপতি শাসন) কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের পক্ষে খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তাই রাজ্য বিজেপির সভাপতির মুখ থেকে ৩৫৬ ধারা জারির দাবি ওঠা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বিরোধীদের উপর যে আক্রমণ, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দরকার, প্রতিরোধ দরকার। কেবল আইন-আদালতের উপরে ভরসা করে, কমিশনের উপরে ভরসা করে বা প্রশাসনের উপরে ভরসা করে কাজ হবে না। ময়দানে নেমে এর মোকাবিলা করতে হবে।’’ বামেরা এ বার সরাসরি সন্ত্রাসের মোকাবিলা করবে বলে তিনি জানান।
তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিরোধীদের কোনও অভিযোগকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি সোমবার বলেছেন, ‘‘এটা আসলে উন্নয়ন আটকানোর ছক।’’ বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, বিরোধীরা নির্বাচনের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন। সেই কারণেই বার বার সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আদালতে গিয়ে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘জনগণের কাছে যাব না, নির্বাচনে নামব না, আমরা শুধু জোট-ঘোঁট করব। আরে ভাই, যাই করো, আমড়া গাছে কি আম ফলে?’’