State News

‘বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে ওরা বলল, ছবি তুললেই মেরে দেব’

পুনর্নির্বাচনেও রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সশস্ত্র ‘উন্নয়ন’। ছবি তোলার চেষ্টা করতেই বুকে ঠেকানো হল পিস্তল। নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন আনন্দবাজার পত্রিকার চিত্রসাংবাদিক।সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পৌঁছলাম ওই বুথের কাছাকাছি এলাকায়। তবে বুথের রাস্তা ভুল করে ফেলেছিলাম। গুদার স্কুলের বদলে মোটরবাইক নিয়ে ঢুকে পড়েছি মুশাপুর বলে একটি জায়গায়। রাস্তা সুনসান।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ১৩:৫৪
Share:

সুব্রত জানা।

সকাল থেকেই খবর পাচ্ছিলাম, হাওড়ার উলুবেড়িয়া-১ নম্বর ব্লকের ৫০ নম্বর বুথে ফের ভোট শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই ছবি তুলতে যাওয়ার কথা ছিল গুদার প্রাইমারি স্কুলে। ভোরবেলাতেই মোটরবাইক করে ক্যামেরা কাঁধে রওনা হয়েছিলাম। সঙ্গী ছিলেন বেশ কয়েক জন সাংবাদিক বন্ধু।

Advertisement

সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পৌঁছলাম ওই বুথের কাছাকাছি এলাকায়। তবে বুথের রাস্তা ভুল করে ফেলেছিলাম। গুদার স্কুলের বদলে মোটরবাইক নিয়ে ঢুকে পড়েছি মুশাপুর বলে একটি জায়গায়। রাস্তা সুনসান। গ্রাম প্রায় জনশূন্য। কেউ কোত্থাও নেই। আশপাশের বাড়ি-ঘরের সব ক’টি দরজা-জানলাও বন্ধ। হঠাৎই চোখে পড়ল, একটি বা়ড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। বাইকটা বেশ খানিকটা দূরে রেখে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে একা একাই এগিয়ে যাই সে দিকে। সঙ্গের বন্ধুরা তখন আমার থেকে অনেকটাই দূরে। ওই বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দেখি, আগুনে পুড়ে যাচ্ছে বাড়িটি। আশপাশে তখন কেউ নেই। সেই ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা তাক করতেই দেখি, কোত্থেকে যেন এসে আমাকে ঘিরে ধরেছে শ’খানেক লোক। বেশির ভাগের মুখে ফেট্টি বাঁধা। চোখ-মুখ প্রায় দেখা যাচ্ছে না। হাতে লাঠি-তরোয়াল-পিস্তল। ওদের মধ্যে এক জন এগিয়ে এসে সোজা আমার শার্টের কলার টেনে ধরল। বুকে ঠেকিয়ে দিল পিস্তল। বলল, “ছবি তুললেই মেরে দেব।” ভয়ে তখন আমার হাত-পা পেটে সেঁধিয়ে গিয়েছে। ওই লোকটা ফের বলল, “এখান থেকে সোজা বেরিয়ে যা!” এক বার মনে হল, এ বার বুঝি গুলিই চালিয়ে দেবে। আমি বললাম, “ছবি তুলছি না।” তা-ও জামার কলারটা ছাড়ল না। ফের বললাম, “আমি ছবি তুলব না।” বলল, “তোর বাইক ভেঙে দেব।” বাইকটা ভাঙতেও যাচ্ছিল কয়েক জন। বললাম, “বাইকটা অন্তত ভেঙো না। চলে যাচ্ছি।” কি জানি কী বুঝল, আমার জামার কলারটা ছেড়ে দিল। কোনও মতে ওখান থেকে ক্যামেরা নিয়ে একছুট লাগালাম। ভয়ে-তেষ্টায় তখন গলা শুকিয়ে কাঠ। কিন্তু, আশপাশের সব দরজাই বন্ধ। তা-ও একটা বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিলাম। প্রথমটায় কিছুতেই দরজা খুলল না। অনেক ধাক্কাধাক্কি করার পর শেষে দরজা খুললেন এক মহিলা। বললাম, “একটু জল খেতে চাই।” আমার কথা শুনে এগিয়ে দিলেন এক গ্লাস জল। তা খেয়ে ফের ছুট লাগালাম।

ওই জায়গাটা থেকে বুথ প্রায় ৫০০-৬০০ মিটার দূরে। বুথের সামনে তখন জনা পঞ্চাশেক পুলিশকর্মী। ভিতরে ভোট চলছে। হাঁফাতে হাঁফাতে কয়েক জন পুলিশকে জানালাম গোটা ব্যাপারটা। আমার কথা শুনে এগিয়ে এলেন জনা দশেক পুলিশকর্মী। তাঁদের পিছু পিছু আমিও গেলাম ওই বাড়ির কাছে। সেখানে তখনও ওই লোকগুলি দাঁড়িয়ে। পুলিশকর্মীরা তাদের দিকে ধেয়ে যেতেই দৌড়ে পালাল ওরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: দলের ছাপ্পার প্রতিবাদে সরে দাঁড়ালেন তৃণমূল প্রার্থী

আরও পড়ুন: কড়া নিরাপত্তায় ১৯ জেলায় ৫৭৩ বুথে চলছে পুনর্নির্বাচন

উলুবেড়িয়া-১ নম্বর ব্লকের ৫০ নম্বর বুথে চলছে ভোটগ্রহণ। ছবি: সুব্রত জানা।

ফেরার পথে হঠাৎই ঝেঁপে ঝড়-বৃষ্টি নামল। ওই জায়গাটার আর কোনও ছবি তোলা হল না। ফিরে এলাম বুথ থেকেও। ফেরার পথে ফোন করলাম উলুবেড়িয়া-১ নম্বরের বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায়কে। পুরোটাই জানালাম। তিনি বললেন, “বিষয়টা দেখছি।” এর পর ফোন করলাম হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের সুপার গৌরব শর্মাকে। ছবি তুলতে গিয়ে কী বিপাকেই পড়েছিলাম, কী ভাবে প্রাণে বেঁচে ফিরেছি— সব জানালাম। আশ্বস্ত করলেন, “আমি ওখানে আরও পুলিশ পাঠাচ্ছি। ওই দিকটায় আজ বেশি পুলিশ ফোর্স ছিল না।”

দুপুর পর্যন্ত পুলিশে লিখিত অভিযোগ করিনি। তবে এখনও চোখে ভাসছে, কী ভাবে প্রাণে বেঁচে ফিরেছি আজ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন