কীর্তি: দক্ষিণ মেরুতে পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত।
পেঙ্গুইনের দেশে পা রেখেছিলেন গত বছরেই। ভিনসন ম্যাসিফ শৃঙ্গে আরোহণ করে দেশের প্রথম অসামরিক বাঙালি হিসেবে সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গজয় (সেভেন সামিট) করেছিলেন তিনি। ১১১ কিলোমিটার স্কি করে পৌঁছোন কুমেরুতেও। তবে এখানেই থামতে রাজি নন সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি (সেভেন ভলক্যানিক সামিট) জয় করে বিশ্ব রেকর্ডের লক্ষ্যে আগামী জানুয়ারিতে ফের আন্টার্কটিকা পাড়ি দিচ্ছেন বাঙালি এই পর্বতারোহী। এ বার তাঁর গন্তব্য আন্টার্কটিকার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি সিডলি (৪,২৮৫ মিটার)। লক্ষ্যপূরণ হলে বিশ্বের কনিষ্ঠতম পর্বতারোহী হিসেবে জোড়া-খেতাব (সপ্তশৃঙ্গ এবং সপ্ত আগ্নেয়গিরি) জয়ের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হবেন বছর পঁয়ত্রিশের এই বাঙালি।
সপ্ত আগ্নেয়গিরি জয়ের পথে ইতিমধ্যেই বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছেন সত্যরূপ। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরিতে আরোহণ হয়ে গিয়েছে তাঁর। বাকি চারটি মহাদেশের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরিগুলিতে শীর্ঘই অভিযান করতে চান। তবে বর্তমানে ‘পাখির চোখ’ আন্টার্কটিকাই।
এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ১২ জন আরোহী সপ্ত আগ্নেয়গিরি জয় করেছেন। জোড়া-খেতাবের কৃতিত্ব রয়েছে মাত্র পাঁচ জনের দখলে। সত্যরূপ বলছেন, ‘‘কোনও ভারতীয় এখনও পর্যন্ত সিডলি আগ্নেয়গিরিতে অভিযান চালাননি। এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারলে বিশ্বের পর্বতারোহণ মহলে ভারতকে তুলে ধরার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।’’
সপ্তশৃঙ্গজয়ী বাঙালির সামনে রয়েছে বিশ্ব রেকর্ডের হাতছানিও। সবচেয়ে কম বয়সে জোড়া-জয়ের কৃতিত্ব বর্তমানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ড্যানিয়েল বুলের দখলে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে বুল যখন ওই রেকর্ড গড়েন, তখন তাঁর বয়স ছিল ২৬ বছর ছ’মাস। বহরমপুরে বড় হওয়া, অধুনা ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা সত্যরূপ জানুয়ারিতে জোড়া-খেতাব জয় করতে পারলে বুলের ওই বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে দেবেন। কারণ, তখন সত্যরূপের বয়স হবে ৩৫ বছর আট মাস।
কেমন হবে এই সিডলি-অভিযান? বেঙ্গালুরুতে কর্মরত সত্যরূপ জানাচ্ছেন, চিলের পুন্টা এরিনাস শহর থেকে একটি বিশেষ বিমানে আন্টার্কটিকার ইউনিয়ন হিমবাহ হবে তাঁর প্রথম গন্তব্য। তার পরে বিমানে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছনো আগ্নেয়গিরির বেসক্যাম্পে। এর পরে শুরু আরোহণ পর্ব। মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা, তুষারঝড়ের আশঙ্কা— অভিযান খুব একটা সহজ নয়!
সহজ নয় এর প্রস্তুতি পর্বও। সিডলি-যাত্রার খরচ ৪০ লক্ষ টাকা, যা আগামী ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অভিযান অনুমোদনকারী সংস্থার কাছে জমা দিতে হবে অভিযাত্রীকে। গত বছর ভিনসন ম্যাসিফ
অভিযান বাস্তবায়িত করতে গিয়ে এখনও ৩০ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্কঋণের বোঝা রয়েছে সত্যরূপের কাঁধে। ফলে এ বার ‘চাপ’ অনেক বেশি। এখনও পর্যন্ত প্রয়োজনীয় অর্থের এক চতুর্থাংশ (১০ লক্ষ) জোগাড় হয়েছে। বাকি টাকার জন্য ফেসবুকে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করছেন সত্যরূপ। সাহায্যের আশায় সম্ভাব্য সকলের দুয়ারে কড়া নাড়ছেন। বলছেন, ‘‘আশা করছি সাহায্য পাব। কারণ, এ শুধু আমার একার সাফল্য নয়। দেশের নামও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।’’
সত্যরূপের এই ‘অদম্য’ মানসিকতার প্রশংসা করছেন প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে আন্টার্কটিকায় যাওয়া ভূতত্ত্ববিদ ও পর্বতারোহী সুদীপ্তা সেনগুপ্ত। তিনি বলছেন, ‘‘এ দেশে বিনোদন জগতের জন্য টাকা ঢালতে লোকে পিছপা হন না। কিন্তু অন্যেরা টাকার অভাবেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। সরকার তো বটেই, বেসরকারি সংস্থাগুলিরও সত্যরূপের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত।’’