গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বীরভূমের সেই আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি ও তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল বিএসএফের বিরুদ্ধে। ২৯ বছরের সেই মহিলা, তাঁর স্বামী এবং তাঁদের আট বছরের পুত্রসন্তানকে এ বার ও-পারের পুলিশও গ্রেফতার করল।
স্বামী-পুত্রকে নিয়ে বাংলাদেশের শহরে-গ্রামে ঘুরে বে়রাচ্ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা সোনালি। বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে তাঁদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশের পুলিশ। সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে ও-পারের পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে পুশব্যাক হওয়া বীরভূমেরই বাসিন্দা সুইটি বিবি এবং তাঁর দুই নাবালক সন্তানকেও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেছেন, ‘‘অসম সীমান্তের কুড়িগ্রাম থেকে ওঁদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছিল। ওঁরা ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছেন। সম্প্রতি ওঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকছিলেন। ওঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ওঁদের কাছ থেকে ভারতীয় নথি উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার ওঁদের আদালতে হাজির করানো হবে। এ বার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, আদালতই নেবে। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। যে হেতু মহিলা এবং বাচ্চারা রয়েছে, আমরা বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখছি।’’
বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা সোনালি, স্বামী দানিশ শেখ এবং তাঁদের বছর পুত্রসন্তান র কয়েক ধরে দিল্লির রোহিণী এলাকার ২৬ সেক্টরে থাকতেন। দিল্লিতে প্রায় দুই দশক ধরে সোনালি ও তাঁর পরিবার কাগজকুড়ুনি এবং গৃহ-পরিচারিকার কাজ করে আসছিলেন। পরিবারের দাবি, গত ১৮ জুন তাঁদের আটক করে দিল্লির কে এন কাটজু মার্গ থানার পুলিশ। একই সময়ে দিল্লিতে পরিচারিকারকাজে যুক্ত মুরারইয়ের ধিতোড়া গ্রামের সুইটি বিবি ও তাঁর দুই নাবালক সন্তানকেও আটক করেছিল পুলিশ।
গত জুন মাসে সোনালিরা আটক হওয়ার পর প্রথমে দিল্লি আদালতে মামলা হয়েছিল। পরে সেটি তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের সাহায্যে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন পরিবারের সদস্যেরা। তা এখনও বিচারাধীন।
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সোনালির গ্রেফতারির খবর পেয়েছি। কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। যত ক্ষণ না ওঁকে আর ওঁর পরিবারকে ফিরিয়ে আনতে পারছি, তত ক্ষণ আমাদের উদ্যোগ থামবে না।’’
বুধবার হাই কোর্টে সোনালিদের মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকায় আপাতত এই মামলার শুনানি পিছিয়ে দেয় উচ্চ আদালত।
বুধবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামী ২৯ অগস্ট সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের দায়ের করা মামলার শুনানি থাকায় হাই কোর্টের মামলার শুনানি হবে ১০ সেপ্টেম্বর। ঘটনা হল, সুপ্রিম কোর্টে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা ও নিগ্রহের ঘটনায় নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক মামলা বিচারাধীন।
হাই কোর্টে শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার কথা জেনে মন ভেঙেছে সোনালি এবং সুইটির পরিবারের। সবচেয়ে চিন্তায় সোনালির বাপের বাড়ির সদস্যেরা। সোনালির মামাতো ভাই রকি শেখ বলছেন, ‘‘খুব আশা ছিল, আদালত দিদিদের দেশে ফেরানোর নির্দেশ দেবে। ঠিক জানি না, কী হল।’’ রকির সংযোজন, ‘‘দিদি অন্তঃসত্ত্বা। এ নিয়েই আমাদের সবচেয়ে বেশি চিন্তা। কোনও কারণে ও দেশে শিশুর জন্ম দিলে আমরা চরম আইনি জটিলতায় পড়ে যাব।’’