কুরবান শা খুনে আটক আনিসুরের ভাই

সোমবার, নবমীর রাতে দলীয় কার্যালয়ে খুন হন কুরবান। মঙ্গলবার রাতে কুরবানের পরিবারের তরফে আনিসুর রহমান-সহ চার জনের বিরুদ্ধে পাঁশকুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৫৯
Share:

কুরবান শা। —ফাইল চিত্র।

পুজোর সময় কিছু যে একটা ঘটতে পারে তা আঁচ করে দলীয় কর্মীদের নাকি বলেছিলেন দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি তথা পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুরবান শা। তৃণমূলের একাংশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ষষ্ঠীর দিন পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে একটি রেস্তরাঁয় আনিসুর কয়েক জনকে নিয়ে বৈঠক করেছেন এমন খবর ছিল কুরবানের কাছে। সেখানে ঠিক কী হয়েছে, তা জানার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনার সত্যতা বিচার করতে ওই রেস্তরাঁর সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তবে খুনের পর দু’দিন কেটে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

Advertisement

সোমবার, নবমীর রাতে দলীয় কার্যালয়ে খুন হন কুরবান। মঙ্গলবার রাতে কুরবানের পরিবারের তরফে আনিসুর রহমান-সহ চার জনের বিরুদ্ধে পাঁশকুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনায় আনিসুরের ভাই পাঁশকুড়া পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশিকুর রহমান-সহ আটক করা হয়েছে আরও দুই আনিসুর অনুগামীকে। কুরবানের সর্বক্ষণের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথ বেরাকেও এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ঘটনার রাতে মাইশোরা বাজারে নিজের অফিসে বসেছিলেন কুরবান। সঙ্গে ছিলেন আরও চার জন। পুজোর জন্য মাইশোরা বাজারে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, রাত ১০টা নাগাদ তিনটি বাইকে জনা সাতেক দুষ্কৃতী কুরবানের অফিসের সামনে হাজির হয়। অভিযোগ, বাইক থেকে নেমে চার জন দুষ্কৃতী ঢুকে যায় কুরবানের অফিসে। এক জন দরজায় পাহারায় ছিল। দুষ্কৃতীরা অফিসে ঢুকে কুরবানের সঙ্গে থাকা চার জনকে রিভলভার উঁচিয়ে চুপ থাকার হুমকি দেয়। বিপদ আঁচ করতে পেরে কুরবান টেবিলের আড়ালে লুকোতে যান। ওই চার জনের দাবি, সেই সময় দুই দুষ্কৃতী কুরবানের মাথায় পর পর গুলি করে। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন কুরবান। কুরবানের মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে দুষ্কৃতীরা বাইকে চড়তে গেলে কুরবানের অনুগামীরা তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। দুষ্কৃতীরা পাল্টা গুলি ছুড়লে ভয়ে তারা পিছু হটে। দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গেলে স্থানীয় এক চিকিৎসককে ডেকে আনেন কুরবানের অনুগামীরা। তিনি কুরবানকে মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

দলীয় সূত্রে খবর, কুরবানের সব সময়ের এক জন দেহরক্ষী থাকলেও ওই দিন তিনি তাঁকে ছুটি দিয়েছিলেন। দেহরক্ষীর ছুটিতে থাকার সুযোগই কি দুষ্কৃতীরা নিল, কুববান খুনে সেই প্রশ্ন উঠেছে দলে। বুধবার ময়নাতদন্তের পরে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী কুরবানের দেহ নিয়ে আসেন মাইশোরায়। তিনি দাবি করেন, ‘‘পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা আনিসুর রহমানই কুরবানকে খুন করিয়েছেন।’’ কুরবানের দাদা আফজল শা বলেন, ‘‘আমাদের সন্দেহ আনিসুর ভাইকে খুন করিয়েছে। আমরা সিআইডি তদন্ত চাই।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভি সুলেমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘কুরবান খুনে ১০ রাউন্ড গুলি চলেছে। আমরা গুলির খোল উদ্ধার করেছি। তবে খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

খুনের ঘটনায় আনিসুরের নাম জড়ানো প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘বিজেপি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। এই দল খুনের রাজনীতিকে সমর্থন করে না। আমাদের দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা দেখার জন্য আইন রয়েছে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন