ফোঁটা দিতে আসা বোনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল জঙ্গলে, দাদাকে ফেলে মার মত্ত যুবকদের

এই নিয়ে ধূপগুড়ি থানায় এফআইআর হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০২
Share:

প্রতীকী ছবি।

দাদা কাজ করেন ধূপগুড়ির একটি গ্যারাজে। ভাইফোঁটার আগের দিন বিকেলেই কোচবিহারের বড় শোলমারি থেকে তিন বোন আর ছোট ভাই চলে এসেছিলেন দাদার কাছে। ইচ্ছে ছিল, ধূপগুড়ির কালীপুজো দেখে, রাতে দাদার কাছে কাটিয়ে সকালে পাঁচ জনে মিলে বাড়ি ফিরবেন। রাতে দাদার গ্যারাজে আশ্রয় নিয়েছিলেন সকলে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সেখানে হানা দেয় তিন মত্ত যুবক। তারা দাদা ও ভাইকে মারধর করে ও বোনেদের যৌন নিগ্রহের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ছোট বোনকে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তারা। শেষে চেঁচামেচি করে লোকজন জড়ো করে হেনস্থাকারীদের হাত থেকে নিস্তার পান তাঁরা। এই নিয়ে ধূপগুড়ি থানায় এফআইআর হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

Advertisement

ঘটনার পর থেকে ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছেন যুবকের ছোট বোন। মেজ বোন বলেন, ‘‘জানি না কাল ছোট বোনকে ওরা নিয়ে গেলে কী হত! আজ ভাইফোঁটা। কিন্তু দাদার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। গোটা মুখে মারের দাগ। এমন ভাইফোঁটা যেন কোনও বোনকে না দেখতে হয়!’’

নিগৃহীত যুবক বলছেন, ‘‘আমার বাড়ি কোচবিহার জেলায়। এখানে কাউকেই চিনি না। যারা মারধর করেছে, তাদের মধ্যে এক জনের নাম জানতে পেরেছি। পার্থ। নামটা পুলিশকে বলেছি।’’

Advertisement

ওই যুবকের ছোট ভাই পরে ফোনে বলেন, ‘‘মারের চোটে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি না। বড় বোনের কপালে কালসিটে পড়ে গিয়েছে। দাদাও অসুস্থ। ভাইফোঁটায় খরচ করব বলে আমার কাছে দশ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা ও আমার মোবাইল ফোন দুটোই কেড়ে নিয়েছে মদ্যপ যুবকরা। আমরা এফআইআর করে বাড়ি চলে এসেছি। খুব ভয়ে আছি।’’

ওই ভাইবোনেদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ঠাকুর দেখে এসে গ্যারাজেই ঘুমের বন্দোবস্ত করছিলেন তাঁরা। রাত এগারোটা নাগাদ হঠাৎই দরজায় ধাক্কা।

অভিযোগ, দরজা খুলতেই গ্যারাজকর্মী ওই দাদাকে ঘিরে ধরে তিন জন যুবক চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। প্রশ্ন করে, ‘‘মেয়েগুলো কারা? কী মতলবে তুই মেয়েগুলোকে গ্যারাজে ঢুকিয়েছিস?’’ ওই যুবক যত বারই বলেন, ‘ওরা আমার বোন’, মদ্যপরা আরও বেশি করে তাঁকে মারতে থাকে বলে অভিযোগ।

বাধ্য হয়ে ছোট ভাই ছুটে এসে ওই যুবকদের হাতে নিজের মোবাইল ফোন ধরিয়ে দিয়ে বাড়িতে ফোন করতে বলেন। তিনিও বলেন, ‘‘ওরা আমাদের বোন। বিশ্বাস না হলে ফোনে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলুন।’’

তখন ছোট ভাইকেও পেটানো হয় বলে অভিযোগ। এমনকি, গোলমাল শুনে গ্যারাজ মালিক ছুটে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। এক সময় মদ্যপরা ছোট বোনের হাত ধরে তাঁকে জঙ্গলের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত কোনও রকমে ওই যুবক দৌড়ে রাস্তায় বার হয়ে এসে চিৎকার চেঁচামেচি করলে আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাতে ওঁরা রক্ষা পান। ভাইবোনেদের নিয়ে রাতটা কোনও মতে কাটিয়ে পরদিন ধূপগুড়ি থানায় এফআইআর করেন তারা।

এলাকার বাসিন্দারা একান্তে ঘটনার নিন্দায় করলেও ওই যুবকদের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

ধূপগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশকুমার সিংহ বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। পুলিশকে বলেছি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।’’ জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ডেন্ডুপ ভুটিয়া বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন