কোথায় গেল টাকা, প্রশ্ন ক্যানসার আক্রান্তের

৭০ টাকার জন্যেও লড়াই। আর পেরে উঠছেন না ভারতী!

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল 

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৬
Share:

ভারতী ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র

লড়াই ঘরে-বাইরে!

Advertisement

অভাবের সঙ্গে লড়াই। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই। আমানতকারীদের সঙ্গে ‘লড়াই’। এমনকি, ৭০ টাকার জন্যেও লড়াই। আর পেরে উঠছেন না ভারতী!

নিজেদের ১৩ লক্ষ টাকা গিয়েছে রোজ ভ্যালিতে। আমানতকারীদের আরও ৩০ লক্ষ। কোথা থেকে টাকা আসবে জানেন না। সবেধন নীলমণি বাগুইআটির বাগুইপাড়ার দু’কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট। সেটাও এ বার ভাড়া দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির মেয়ের স্কুলের ধারেকাছে সস্তার ভাড়াঘরে চলে যেতে চান মধ্য পঞ্চাশের মানুষটি।

Advertisement

কেন? “দায়ে না-পড়লে কেউ নিজের ঘর ছাড়ে? চিকিৎসার এত খরচ, সংসারের খরচ! মেয়েটাকে স্কুলে পাঠাতেই রোজ ৭০ টাকা লাগে। কোথা থেকে পাব? স্কুলের কাছে বাড়ি পেলে স্কুল যাতায়াতের খরচটা বাঁচে।’’— বড় অসহায় শোনায় ভারতী ভট্টাচার্যের গলা।

কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সরকারি প্রাথমিক স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে। ১২ বছরেও চাকরি পাকা হয়নি। শুরু করেছিলেন ছাত্র পড়ানো। স্বামী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। ২০০৯ সালের অক্টোবরে মোটা কমিশনের হাতছানিতে রোজ ভ্যালির এজেন্ট হন। পরে স্বামী তপনও এই কাজে যোগ দেন। তপনবাবু জানান, তাঁর অবসরের সময়ে পাওয়া টাকা, স্ত্রীর জমানো সঞ্চয়—সব মিলিয়ে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু চাকা ঘুরল উল্টো দিকে।

‘‘২০১৩-য় সারদার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পরেও রোজ ভ্যালির কর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিচ্ছু হবে না। কিন্তু ভরসা করেই কাল হল,’’— বলছেন ভারতী। তত দিনে দম্পতি নিজেদের অধীনে অনেক এজেন্ট নিয়োগ করে ফে‌লেছেন। লগ্নিও কম হয়নি। শেষ পর্যন্ত রোজ ভ্যালিও বন্ধ হল। চাপ শুরু হল আমানতকারীদের। ভারতী বলেন, “একটা সময় হাতে কানাকড়িও ছিল না। জিনিসপত্র বেচে কিছু আমানতকারীর টাকা ফেরত দিয়েছি। মেয়ের গান-আঁকা শেখা বন্ধ হয়। পোশাকের ব্যবসা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিছু আমানতকারী সেই পোশাক নিয়েও চলে যান।’’ ‘মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা’ পড়ল দু’বছর আগে। ভারতীর স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। ধারদেনা করে চিকিৎসা-অস্ত্রোপচার হয়। ‘ফি’ দিতে পারবেন না বলে এখন আর নিজের চিকিৎসকের কাছে যান না ভারতী। তাঁর এক প্রাক্তন ছাত্র এখন চিকিৎসক। তিনিই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

‘‘মেয়েটা সবে ক্লাস সিক্স। আমার তো শরীরের এই অবস্থা। ওর বাবার কাজ নেই। আদালত, প্রশাসন সত্যিই কি কিছু করবে? হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় আছে, তা কি খুঁজে বার করতে পারবেন তদন্তকারীরা? — উত্তর খুঁজছেন ভারতী।

ভারতীরা উত্তর খুঁজেই চলেছেন।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন