cbi

সিবিআই বনাম রাজীব কুমার: মুখোমুখি হওয়ার আগে কোমর বেঁধে তৈরি হচ্ছে দু’পক্ষই

রাজীব কুমারকে জেরা করার জন্য যখন পাঁচ সদস্যের দল গড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই, তখন সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে পুলিশ কমিশনার কীজবাব দেবেন, তা নিয়ে লালবাজারে চলছে চূড়ান্ত তোড়জোড়। কেমন তা?

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:০৩
Share:

কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রস্তুতি তুঙ্গে। কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমারকে জেরা করার জন্য যখন পাঁচ সদস্যের দল গড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই, তখন সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে পুলিশ কমিশনার কীজবাব দেবেন, তা নিয়ে লালবাজারে চলছে চূড়ান্ত তোড়জোড়।

Advertisement

বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ দাবি করেন, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সিবিআই শীর্ষ আদালতে হলফনামা দিয়ে তদন্তে অসহযোগিতার যে অভিযোগ করেছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা। শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের একজনের দাবি, সারদা তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার তিন বছর পর ২০১৭-র ১৯ অক্টোবর সিবিআই সাক্ষী হিসাবে পুলিশ কমিশনারকে তাঁর বয়ান রেকর্ড করার জন্য ই-মেলে নোটিস পাঠায়।

লালবাজার থেকে দাবি করা হয়েছে, সিবিআইয়ের করা ওই ই-মেলের জবাব সঙ্গে সঙ্গেই দেন নগরপাল। এক পুলিশ কর্তার দাবি, ‘‘ওই ই-মেলে রাজীব কুমার সিবিআইকে অনুরোধ করেছিলেন, সারদা মামলার তদন্তকারী আধিকারিককে তাঁর অফিসে আসতে অথবা একটি প্রশ্নমালা পাঠাতে যাতে তিনি লিখিত ভাবে জবাব দিতে পারেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দলের বোঝা উচিত, শুধু বন্দুক আর গো-রক্ষক দিয়ে দেশ চলে না’

লালবাজারের একাংশের দাবি, ওই মেলে ইঙ্গিত দেওয়া ছিল যে,তার পরের মাস অর্থাৎ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি ফাঁকা থাকবেন। সেই সময়ে তিনি সিবিআইকে তদন্তে সহযোগিতা করতে পারেন। লালবাজারের দাবি, ওই নোটিসে যখন নগরপালকে যেতে বলা হয়েছিল, সেটা ছিল কালীপূজো-দীপাবলীর সময়। ওই সময়ে পুলিশ কমিশনারের পক্ষে যাওয়ার উপায় ছিল না।

কলকাতা পুলিশের ওই কর্তাদের অভিযোগ, সিবিআই কর্তারা ওই ই-মেলের কোনও উত্তর দেওয়ার সৌজন্য না দেখিয়ে ২৩ অক্টোবর ফের নোটিস পাঠান। লালবাজারের দাবি, গোটা প্রক্রিয়াতে অপমানিত বোধ করে ২৭ অক্টোবর সিবিআইয়ের তৎকালীন অধিকর্তা অলোক বর্মাকে চিঠি পাঠান নগরপাল।সেই চিঠিতে তিনি গোটা বিষয়টি উল্লেখ করেন। কিন্তু তারপরেও সিবিআই অধিকর্তার কাছ থেকেও কোনও জবাব আসেনি।

সিবিআই তাদের হলফনামায় অভিযোগ করেছে যে, এ রাজ্যের শাসক দল অর্থাৎ তৃণমূলের সহায়তায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাজে বাধা দিচ্ছেন এবং হেনস্থা করছেন রাজীব কুমার। সেখানে লালবাজারের পাল্টা দাবি, রাজীব কুমারকে নিয়ে সারদা মামলায় টানাপড়েন শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক বিজেপি নেতার নির্দেশে। অলোক বর্মাকে লেখা চিঠিতেও রাজীব কুমার লিখেছেন, ওই কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানি মামলা করায় ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে।মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়েই রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ গোটা ঘটনার পিছনে ওই নেতার ইন্ধনকেই দায়ী করছেন।

আরও পড়ুন: ময়নাগুড়িতে ৮ ফেব্রুয়ারি মোদী, লোক টানতে ঘরে ঘরে চিঠি!

সিবিআইয়ের অভিযোগ, সারদা-কাণ্ডের তদন্তে রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর প্রধান হিসাবে কলকাতার নগরপাল চিটফান্ড মামলার বিভিন্ন নথির পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীর থেকে ধৃত সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যপ্রমাণও নষ্ট করেছেন। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নগরপাল নিজেও জানেন তাঁকে জেরার সময় ওই বিষয়গুলিই গুরুত্ব পাবে। সে ক্ষেত্রেও কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের পাল্টা প্রশ্ন, সারদা কর্তাকে গ্রেফতার করেছিল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। তাঁরাই সুদীপ্ত সেনের মোবাইল থেকে শুরু করে বাকি সমস্ত কিছু বাজেয়াপ্ত করেছিল। তা হলে কেন সিবিআই আগে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে জেরা করেননি এখনও?কলকাতা পুলিশের আরও প্রশ্ন, যে সিজার লিস্টের ভিত্তিতে সিবিআই এই প্রশ্ন তুলছে, সেই সিজার লিস্ট তৈরির সময় সেখানে কোনও নিরপেক্ষ সাক্ষী কি আদৌ ছিলেন?

তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেরাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ২০১৮-র ২৮ অগস্ট এবং ২০১৯-এর ৪ জানুয়ারি— রাজ্য পুলিশের ডিজি দু’দফায় সিবিআই অধিকর্তাকে তদন্তে সহযোগিতা করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। ওই পুলিশ কর্তার দাবি, ডিজি ওই চিঠিতে জানিয়েছিলেন চিটফান্ড তদন্তের জন্য গঠিত সিট এখন ভেঙে দেওয়া হয়েছে।ফলে, সমস্ত আধিকারিকরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত। সিবিআই একটি দিন স্থির করলে রাজ্য পুলিশ একটি যৌথ বৈঠক করতে পারে, যেখানে সিটের সমস্ত আধিকারিকরা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে সিবিআই কর্তারা তাঁদের প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে পারবেন। রাজ্য পুলিশের ওই কর্তার অভিযোগ, সিবিআই ওই চিঠিরও কোনও জবাব দেয়নি।

তবে সিবিআই আধিকারিকরা এই সব অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ওই গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার যে অভিযোগ তারা তুলেছে, তার সপক্ষে প্রচুর প্রমাণ আছে হাতে। আর সেই প্রমাণ তারা আদালতে যেমন দিয়েছে, তেমনই নগরপালকে জেরা করার সময়েও সব হাতে নিয়েই বসবেন গোয়েন্দারা।

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেবাংলায় খবরজানতে পড়ুন আমাদেররাজ্যবিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন