ধর্নামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা পুলিশের ফুটবল অ্যাকাডেমির উদ্বোধনে রাজীব কুমার। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী, সুমন বল্লভ
‘‘আমাদের অফিসারেরা এবং সাধারণ মানুষ এ বার নিশ্বাস ফেলার একটা জায়গা পাবেন।’’ রাজীব কুমার সংক্রান্ত মামলায় মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জানার পরে এটাই ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া। তাঁর কথা, ‘‘গণতন্ত্র ও সংবিধান ধ্বংস করতে উদ্যত দেশের শাসকদের ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে এই রায়। দেশের সংবিধান এর ফলে সুরক্ষিত থাকবে। নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দলের এ বার বোঝা উচিত, শুধু বন্দুক আর গো-রক্ষক দিয়ে দেশ চলে না। দেশ সংবিধান দিয়ে চালাতে হয়।’’
ধর্মতলার ধর্নামঞ্চ থেকে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা হবে না। আদালতের এই নির্দেশে আমরা কৃতজ্ঞ। মোদীর বিরুদ্ধে ২০১৯-এ আমাদের লড়াই আরও শক্তিশালী হল। নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল যে ক্ষমতায় ফিরবে না, সেই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। আজকের রায় দেশের জনতার জয়, রাজ্যবাসীর নৈতিক জয়, সংবিধানের জয়।’’ পাশাপাশি তদন্তে সহযোগিতার জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, তাকেও স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘রাজীব কথা বলতে সব সময় রাজি এবং তা তিনি পাঁচ বার সিবিআইকে জানিয়েছিলেন। ওরা উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।’’
ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের অভিমত, সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের রায় কার্যত মমতার পক্ষে গিয়েছে। কারণ, তিনি পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআইয়ের আচমকা অভিযান রুখতে এবং রাজীব কুমারকে যাতে ‘গ্রেফতার’ করা না হয়, তার জন্য ‘সংবিধান রক্ষা’র দাবি তুলে রাজপথে ধর্নায় বসেছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত রাজীবকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে রায় দিয়েছে। তাঁর সঙ্গে সিবিআই কোথায় ‘কথা বলবে’, তার একটি ‘নিরপেক্ষ’ জায়গাও স্থির করে দিয়েছে। ফলে মমতার এই ধর্নার ‘সাফল্য’কে সামনে রেখে সমগ্র বিরোধী শিবির ভোটের মুখে আবার একসঙ্গে দাঁড়ানোর মতো শক্ত জমি পেয়ে গেল। যার পরবর্তী পদক্ষেপ দিল্লিতে করা হবে বলে বিরোধীরা সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রায় জানার পরে তাই বিরোধীরা একে রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির ‘পরাজয়’ বলে ব্যাখ্যা করছে। এক নেতার কথায়, ‘‘মমতাই শেষ পর্যন্ত টেক্কা দিলেন।’’
আরও পড়ুন: কলকাতার ধর্না তুলে মমতার ঘোষণা, এবার ২ দিনের ধর্না দিল্লিতে
কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেন, রাজীব কুমারকে সিবিআই রবিবার গ্রেফতার করতে যায়নি। আর এখন আদালতের নির্দেশে তাঁর সঙ্গে কথা বলে তাঁর বক্তব্য যদি তারা নথিভুক্ত করে, তবে সেটাও জিজ্ঞাসাবাদেরই সামিল। কিন্তু ব্যাখ্যা যা-ই হোক, রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রাজনীতির ময়দানে বিরোধীদের পক্ষে বেশি কার্যকর হবে বলেই অধিকাংশের ধারণা। আর সেখানেই আদালতের রায়কে ‘মমতার জয় এবং সিবিআই তথা বিজেপি সরকারের পরাজয়’ বলার কারণ থাকছে।
সিবিআইয়ের সোমবারের আবেদনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালেই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। রায়ে দৃশ্যতই খুশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কথায় কথায় গ্রেফতার করে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া আর যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া— আমরা মনে করি, এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়। যার তার ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। আর যখন তখন ডাকছে। কথা বলতে এলেই তাঁকে গ্রেফতার করে ওড়িশা পাঠিয়ে দিচ্ছে। যাতে ভোটে কোনও কাজ করতে না পারে।’’ পাশাপাশি সিবিআই তৎপরতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে আক্রমণ
করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০১৩-১৪ সালে একটা মামলা হয়। ছ’ বছর হয়ে গেছে। ভোটের আগে সব মনে পড়ে!’’
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত পুরনো বিতর্কও টেনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘চিটফান্ড আমাদের সময়ে হয়নি। এগুলো হয়েছে সিপিএমের আমলে। আমাদের সরকার এসেই মানুষকে ৩০০ কোটি টাকা ফেরৎ দিয়েছি। কাশ্মীর থেকে সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করেছি। আর আমাদেরই চোর বলা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy