রাজীবের বাড়িতে ঢুকছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। ইনসেটে রাজীব।
লুক আউট নোটিস ইস্যু করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সারদা মামলায় কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে ফের ডেকে পাঠাল সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে সল্টলেকের সিজিও দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে তাঁকে। সিবিআইয়ের একাংশের ইঙ্গিত, হাজিরা এড়ানোর চেষ্টা বা কোনও ধরনের অসহযোগিতা করলে, তাকে হাতিয়ার করে রাজীবের বিরুদ্ধে আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদনও করতে পারে সিবিআই।
রবিবার যদিও রাজ্যের এই শীর্ষ আইপিএসের দেখা পর্যন্ত পায়নি সিবিআই। তাঁর সরকারি বাসভবন বা বর্তমান অফিস— কোথাও রাজীব কুমারের হদিস পাননি সিবিআই গোয়েন্দারা। সরকারি বাসভবনের দরজায় এবং অফিসে নোটিস দিয়েই রবিবার রাতে সিজিও কমপ্লেক্সে ফেরেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
রাজীব কুমারের নোটিস নিয়ে এ দিন সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ সিবিআইয়ের চার জনের একটি দল সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের দফতর থেকে রওনা হন। নগরপাল থাকাকালীন লাউডন স্ট্রিটে রাজীব কুমারের সরকারি বাংলো ছুঁয়ে তাঁরা পৌঁছন ৩৪ নম্বর পার্ক স্ট্রিটে আইপিএস কোয়াটার্সে। নগরপালের পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর ৩৪ নম্বর পার্ক স্ট্রিটের দোতলাতেই রাজীব কুমারের সরকারি কোয়াটার্স। সেখানে পৌঁছে তাঁরা সরাসরি চলে যান রাজীব কুমারের ফ্ল্যাটে। সিবিআই সূত্রে খবর, ফ্ল্যাটে রাজীব কুমার ছিলেন না, ছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজন। সূত্রের খবর, তাঁর পরিবারের সদস্যরা নোটিস গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে ফ্ল্যাটের দরজাতেই টাঙিয়ে দেওয়া হয় আগামিকালের হাজিরার নোটিস। সিবিআই আধিকারিকদের একাংশের দাবি, পৌনে ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তাঁরা ছিলেন রাজীব কুমারের ফ্ল্যাটে। সেই সময় রাজীবকে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তাঁরা। ইতিমধ্যে সিবিআই আধিকারিকদের কাছে খবর আসে, রাজীব কুমারকে ফের এডিজি সিআইডি পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে শেষ দফা ভোটের ঠিক আগে রাজীব কুমারকে এডিজি সিআইডি পদ থেকে অপসারিত করে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। এ দিন আদর্শ আচরণবিধির মেয়াদ ফুরনোর পর নবান্ন তাঁকে পুরনো পদে ফিরিয়ে আনে। এডিজি সিআইডি হিসাবে রাজীর কুমারের অফিস ভবানী ভবনে। পার্ক স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে সিবিআই আধিকারিকেরা রওনা দেন ভবানী ভবনের উদ্দেশে। সেখানেও রাজীর কুমার ছিলেন না। সিআইডি-র কন্ট্রোল রুমে নোটিস জমা দিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে ফেরেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন: তৃণমূল উঠে যাওয়ার মুখে, মমতার কথা আর কেউ বিশ্বাস করেন না, বললেন মুকুল রায়
পার্ক স্ট্রিটে রাজীব কুমারের বর্তমান বাসভবন।
ফেব্রুয়ারিতে রাজীর কুমারের লাউডন স্ট্রিটের বাড়িতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের কাছে থেকে যে প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকেরা, আজকের গোটা পর্বে তার পুনরাবৃত্তি হয়নি। ৩৪ পার্ক স্ট্রিটের বাসভবনে পৌঁছে সিবিআই আধিকারিকেরা তাঁদের পরিচয় দেন। সেখানে পুলিশ তাঁদেরকে রাজীব কুমারের ফ্ল্যাটে পর্যন্ত পৌছে দেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পার্ক স্ট্রিট এবং শেক্সপিয়র সরণী থানার অফিসারেরা। তবে সিবিআই সূত্রে খবর, কলকাতা পুলিশ এ দিন যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে। ভবানী ভবনেও কোনও ধরনের অসযোগিতার মুখে পড়তে হয়নি সিবিআই দলকে। সূত্রের খবর, আগামিকালও ফের নিম্ন আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানাবেন রাজীব কুমার। শুক্রবার বিকেলে বারাসত আদালত তাঁর আইনজীবী আগাম জামিনের আবেদন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু আইনগত কিছু ত্রুটি থাকায় সেই আবেদন বাতিল করেন জেলা বিচারক। সোমবার সেই জামিনের আবেদন আদালতে জমা পড়ার আগেই রাজীব কুমারকে নিজেদের অফিসে ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই, যা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিবিআই আধিকারিকদেরও একাংশের ইঙ্গিত, সোমবার রাজীব কুমার যদি সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেন এবং শিলংয়ের জেরা পর্বের মতোই তদম্তে অসহযোগিতা করেন, তা হলে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে না নেওয়ার কোনও কারণ নেই সিবিআইয়ের কাছে। অন্য দিকে, রাজীব কুমার যদি আগামিকালের নোটিস পেয়ে হাজিরা এড়ানোর চেষ্টা করেন, সে ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের হাতে পর্যাপ্ত হাতিয়ার থাকবে তাঁর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করার। সেই সঙ্গে ওই অসহযোগিতাকেই অস্ত্র করে রাজীবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদনও করতে পারে সিবিআই।
আরও পড়ুন: অভিষেকের দায়িত্বে কোপ পড়তেই টিএমসিপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে, বৈঠক ঘিরে উত্তপ্ত তৃণমূল ভবন