Mamata Banerjee

Alapan Bandyopadhyay: আইএএস রুলসে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয় বুঝেই কি আলাপনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি প্রক্রিয়া

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কেন্দ্র ফৌজদারি প্রক্রিয়া করলে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত নতুন মাত্রা নেবে বলেই রাজনীতিকদের মত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২১ ০৫:৪৮
Share:

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফৌজদারি প্রক্রিয়ার মুখেও পড়তে হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ সূত্রের দাবি, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করে ফৌজদারি প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব। কারণ, তিনি কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর ডাকা পর্যালোচনা বৈঠকে যোগ না দিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ভেঙেছেন। এই আইন ভাঙলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানারও বিধান রয়েছে।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মোদী সরকার ফৌজদারি প্রক্রিয়া করলে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত নতুন মাত্রা নেবে বলেই রাজনীতিকদের মত। আর এ ক্ষেত্রে যে ভাবে সব দলই মমতার পাশে, তাতে কেন্দ্র অনড় থাকলে জাতীয় রাজনীতিতেও এর ছায়া পড়বে।এর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবর্গ মন্ত্রক ১৯৫৪ সালের ‘ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (ক্যাডার) রুলস’-এর ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আলাপনকে দিল্লিতে তলব করেছিল। তখন কেন্দ্র
বলেছিল, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন সরকারি মহলে প্রশ্ন উঠেছে, আইএএস (ক্যাডার) রুলসে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয় বুঝেই কি এ বার বিপর্যয় মোকাবিলা আইন কাজে লাগাতে চাইছে কেন্দ্র? কর্মিবর্গ মন্ত্রকের একটা বড় অংশই মনে করছে, আইএএস (ক্যাডার) রুলসের অধীনে আলাপনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। এমনিতেই রাজ্যের অধীন কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যবস্থা নিতে পারে না। আলাপনের পক্ষে যুক্তি হল, তাঁকে রাজ্য সরকার দিল্লিতে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়নি।সোমবার মুখ্যমন্ত্রীই প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, তিনি আলাপনকে ছাড়ছেন না। এর পর আলাপন অবসর নেন। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেন। সোমবার ফের কর্মিবর্গ মন্ত্রক আইএএস (ক্যাডার) রুলস উল্লেখ করে আলাপনকে মঙ্গলবার দিল্লিতে তলব করে। একইসঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট)-এ আলাপনকে শো-কজ নোটিস পাঠানো হয়।বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে কী ভাবে আলাপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে? কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, সোমবার আলাপনকে পাঠানো শো-কজ নোটিসেই বলা রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কলাইকুন্ডায় পৌঁছে রাজ্যের আমলাদের জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেন। মুখ্যসচিবকে ফোনে জানতে চাওয়া হয়, তিনি বৈঠকে যোগ দিতে চান কি না। তার পরে মুখ্যসচিব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিলেও, কিছুক্ষণ পরেই বেরিয়ে যান আলাপন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। তিনি ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনায় বসেছিলেন। আলাপন সেখানে কিছুক্ষণ হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করেছেন। তা বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১(বি) ধারার লঙ্ঘনের সমান বলে ওই সূত্রের দাবি। এই ধারায় কেন আলাপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা তাঁকে তিন দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ওই ধারায় বলা রয়েছে, এই আইন অনুযায়ী জারি নির্দেশ কেউ মানতে রাজি না হলে বা অমান্য করার যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে না পারলে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে ১ বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা বা দুই-ই হতে পারে। আলাপনের জবাব সন্তোষজনক না হলে মামলা করে চার্জশিট দায়ের করা হতে পারে।তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুখেন্দুশেখর রায়ের যুক্তি, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে মুখ্যসচিবকে কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি। ফলে ওই আইনে শো-কজ নোটিস আইনত ধোপে টেকে না। উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ সূত্রের পাল্টা যুক্তি, মুখ্যসচিব সর্বভারতীয় সার্ভিসের অফিসার। তাঁকে দিল্লিতে তলবের নির্দেশ পুরোপুরি সংবিধান সম্মত। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে না থেকে সাংবিধানিক দায়িত্ব অবহেলা করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন