হেপাটাইটিস নিয়ে চাই কেন্দ্রীয় নীতি

এ দিনের আলোচনায় উঠে আসে, লিভারের এই সমস্যায় বাংলার প্রায় তিন শতাংশ মানুষ আক্রান্ত। কিন্তু নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় হয় না অধিকাংশেরই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে রোগ এত দেরিতে ধরা পড়ে যে, চিকিৎসার সুযোগ থাকে না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, হেপাটাইটিস টিকাকরণের প্রয়োজন কতটা, সেই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৪০
Share:

দেশ জুড়ে দাপট বাড়ছে। কিন্তু সচেতনতার বালাই নেই। তাই হেপাটাইটিস বি এবং সি নিয়ে নানান ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে। রোগ রুখতে প্রয়োজন সুস্পষ্ট কেন্দ্রীয় নীতি।

Advertisement

হেপাটাইটিস বি এবং সি-র প্রকোপ রুখতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প নিয়ে রবিবার কলকাতায় একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড ডায়জেস্টিভ সায়েন্সেস’। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রতিনিধিরা তাতে যোগ দেন। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা তুলে ধরেন এই রোগের সমস্যা ও ছুতমার্গ।

এ দিনের আলোচনায় উঠে আসে, লিভারের এই সমস্যায় বাংলার প্রায় তিন শতাংশ মানুষ আক্রান্ত। কিন্তু নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় হয় না অধিকাংশেরই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে রোগ এত দেরিতে ধরা পড়ে যে, চিকিৎসার সুযোগ থাকে না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, হেপাটাইটিস টিকাকরণের প্রয়োজন কতটা, সেই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। জন্মের পরে টিকা দিলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। রোগ নির্ণয় খুব জরুরি। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শহরাঞ্চল, রোগ নির্ণয়ের ব্যাপারে পর্যাপ্ত সরকারি ব্যবস্থা থাকা দরকার।

Advertisement

এই রোগ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার দিকটিও উঠে আসে এ দিনের আলোচনায়। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই হেপাটাইটিস বি নিয়ে এ রাজ্যে নানান ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, হাঁচি-কাশি কিংবা স্পর্শের মাধ্যমে এই রোগ সংক্রমিত হয়। কিন্তু সেটা ভুল। এই রোগের সংক্রমণ ঘটে রক্তের মাধ্যমে। যেমন, হেপাটাইটিস বি সংক্রমিত কোনও ব্যক্তির দেহে ব্যবহৃত ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ অন্য ব্যক্তির দেহে ব্যবহার করলে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘দেশের অন্যান্য জায়গার মতো পশ্চিমবঙ্গেও এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এর দাপট রুখতে একটি সুস্পষ্ট কেন্দ্রীয় নীতি দরকার। এই রোগে শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি সামাজিক ছুতমার্গের দিকটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই সর্বত্র লাগাতার প্রচার জরুরি।’’

উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরাও জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন জেলায় কত সংখ্যক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, সেই সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য সরকারের কাছে নেই। ফলে এই রোগ নিয়ে কাজ চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। অধিকাংশ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। মণিপুর ও মিজোরামের প্রতিনিধিরা বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করছে। কিন্ত তারা অনেক সময়েই সরকারি দফতরে রিপোর্ট পেশ করে না। হেপাটাইটিসে আক্রান্তদের ব্যাপারে কোনও তথ্য পেলে সেগুলো তৎক্ষণাৎ সরকারকে জানালে মোকাবিলা করা সহজ হবে।

উপসংহার হিসেবে সকলেই একটি বিষয়ে একমত। সেটা হচ্ছে: একক ভাবে কোনও রাজ্যের পক্ষে পরিস্থিতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। দেশ জুড়ে এই রোগের দাপট কমাতে কেন্দ্রের নির্দিষ্ট নীতি জরুরি। হু-র প্রতিনিধি জানান, এ রোগের দাপট বা়ড়ছে বিশ্ব জুড়ে। বিশেষত চিন ও ভারতে রোগের প্রকোপ খুব বেশি। তাই কেন্দ্র যত তাড়াতাড়ি এই নিয়ে একটি নীতি তৈরি করে, ততই মঙ্গল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন