ছেলেমেয়েকে যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ালে টাকা মা-বাবাকে

নতুন ব্যবস্থায় যক্ষ্মারোগীর মা বা বাবা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে অসুস্থ সন্তানকে ওষুধ খাওয়ান, তা হলে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে টাকা পাবেন তাঁরাও। ঠিক যেমন এত দিন ডট প্রোভাইডারেরা পেয়ে এসেছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এটাকে বলছে, ‘ফ্যামিলি ডট’ বা পরিবারকেন্দ্রিক ডিরেক্ট অবজার্ভড ট্রিটমেন্ট।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

অসুখ হলে বাবা-মা তো ওষুধ খাওয়াবেনই। সময়ে-অসময়ে কপালে মায়ের হাত আর বাবার উদ্বিগ্ন পায়চারিটা উপরি পাওনা। বাবা-মায়ের স্নেহ অপরিমেয়। টাকায় তার পরিমাপ চলে না। তবু যক্ষ্মারোগীদের নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ওষুধ খাওয়ানোর লক্ষ্য পূরণ করতে মরিয়া কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সেই অপত্যস্নেহেরও মূল্য ধরে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে!

Advertisement

নতুন ব্যবস্থায় যক্ষ্মারোগীর মা বা বাবা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে অসুস্থ সন্তানকে ওষুধ খাওয়ান, তা হলে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে টাকা পাবেন তাঁরাও। ঠিক যেমন এত দিন ডট প্রোভাইডারেরা পেয়ে এসেছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এটাকে বলছে, ‘ফ্যামিলি ডট’ বা পরিবারকেন্দ্রিক ডিরেক্ট অবজার্ভড ট্রিটমেন্ট।

টাকার প্রয়োজন মানুষের নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সন্তানের যত্নের জন্য বাবা-মাকে টাকা দেওয়ার নতুন এই সরকারি নিয়মে অপত্যের সনাতন ধ্যানধারণা ধাক্কা খাবে না তো?

Advertisement

‘‘আমরা তো টাকা দিয়ে বাবা-মা বা আত্মীয়দের ছোট করতে চাইছি না। টাকাটা গরিব পরিবারে রোগীর পথ্যে খরচ করা যেতে পারে।
একান্ত কেউ টাকা নিতে না-চাইলে তাঁকে আমরা দেব না,’’ বলছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (যক্ষ্মা) সুনীল খাপাডে। এই টাকার অঙ্ক চিকিৎসার প্রথম পর্যায়ে (ক্যাট-১) ছ’মাসে হাজার টাকা, পরবর্তী ছ’মাসে (ক্যাট-২) ১৫০০ টাকা। আর রোগী যদি ‘মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ হন অর্থাৎ যক্ষ্মার প্রচলিত ওষুধ যদি তাঁর শরীরে কাজ না-করে, তখন টাকার অঙ্ক হবে ২৪ মাসে পাঁচ হাজার।

গত অক্টোবরের শেষ থেকে কলকাতা-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ থাকলেও এ ক্ষেত্রে ‘ফ্যামিলি ডট’ ব্যবস্থাকে সমর্থনই করছে রাজ্য। কারণটা মূলত দেশে বিপুল যক্ষ্মারোগীর তুলনায় স্বাস্থ্যকর্মী বা ডট প্রোভাইডারের অভাব। এত দিন নিয়ম ছিল, রোগী এক দিন ছাড়া ওষুধ খাবেন। প্রথম দু’মাস কোনও ডট প্রোভাইডারের মাধ্যমে ওষুধ খাওয়ানোর পরে রোগীকে এক সপ্তাহের ওষুধ হাতে দিয়ে দেওয়া হতো।

নতুন নিয়মে কিন্তু যক্ষ্মার ওষুধ খেতে হচ্ছে প্রতিদিন। এবং প্রথম দু’মাসের পরেও তা একসঙ্গে রোগীর হাতে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ হয় রোগীকে প্রতিদিন ডট সেন্টারে যেতে হবে অথবা ডট প্রোভাইডারকে রোজ নিয়ম করে ওষুধ নিয়ে যেতে হবে রোগীর কাছে। বাস্তবে দু’‌টোই বেশ অসুবিধাজনক। কোনও কারণে এক দিনের ওষুধ বাদ পড়লেই চিকিৎসা প্রক্রিয়া এলোমেলো হয়ে যাবে।

‘‘এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে ভাল ফল পাওয়া যাবে যদি রোগীর বাবা-মা বা তাঁর পরিবারের অন্য কাউকে ডট প্রোভাইডার করা যায়। বিশেষ করে শিশু, মহিলা এবং বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অনেক ভাল ফল দেবে,’’ বলছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা বরুণ সাঁতরা। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে সিকিম, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, কেরল ও হিমাচলপ্রদেশে গত বছর ফ্যামিলি ডটস চালু করে ভাল সাড়া মিলেছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর।

২০১২ সালে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গুজরাতে যক্ষ্মা-আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। দেখা যায়, কোনও ছেদ না-দিয়ে ওষুধ খাওয়ানোয় ৯৬ শতাংশ সাফল্য এসেছে পরিবারের লোকের ক্ষেত্রে। অন্য ক্ষেত্রে সাফল্য ৯৩ শতাংশ। কলকাতার যক্ষ্মা অফিসার বিজয় কর জানান, ওষুধ খাওয়ানোর জন্য মহানগরীর ১৪৪টি ওয়ার্ডে মাত্র ১৫০ জন কমিউনিটি বেসড ডট প্রোভাইডার এবং ৫৮ জন হেলথ ভিজিটর আছেন। নজরদার আছেন ৪১ জন। কিন্তু রোগীর ঘাটতি নেই। কয়েক মাস অন্তর নতুন যক্ষ্মারোগী খোঁজার কার্যক্রমে শুধু কলকাতাতেই ১২৫-১৩০ জন রোগী মিলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন