আতঙ্কের হাসপাতাল

দলের নেতাকে জেরা, আন্দোলনে কংগ্রেস

কখনও চিকিৎসক, কখনও বা হাসপাতালের ঝাড়ুদার, কখনও অগ্নিকাণ্ডের সময়ে কর্মরত নার্স— বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগার কারণ খুঁজতে রবিবার সকলকেই জেরা করল সিআইডি।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১৬
Share:

তদন্তে সিআইডি। — নিজস্ব চিত্র

কখনও চিকিৎসক, কখনও বা হাসপাতালের ঝাড়ুদার, কখনও অগ্নিকাণ্ডের সময়ে কর্মরত নার্স— বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগার কারণ খুঁজতে রবিবার সকলকেই জেরা করল সিআইডি। তবে হাসপাতালের কর্মীদের গতানুগতিক প্রশ্ন করে ছাড় দিলেও দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ চলল স্থানীয় কংগ্রেস নেতা অমল গুপ্তর।

Advertisement

অমলবাবু হাসপাতাল চত্বরে পল্টু নামেই পরিচিত। হাসপাতালে কংগ্রেসের তরফে রোগী সহায়তা কেন্দ্রটি চলে তাঁরই তত্ত্বাবধানে।

শনিবার সকালে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে দুই মহিলার মৃত্যু হয়। অগ্নিকাণ্ডের সময় পালাতে গিয়ে ভিড়ের চাপেই তাঁদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া একটি শিশুও মারা গিয়েছে। তবে হাসপাতাল সুপারের দাবি, অগ্নিকাণ্ডের কারণে নয়, শিশুটি আগেই মারা গিয়েছিল। এই ঘটনায় অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করে শনিবারই ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেয় রাজ্য সরকার। রবিবার সকালে তদন্তে নেমে সিআইডি-র স্পেশাল সুপার শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি দল সটান হাজির হয় বহরমপুর শহরের গোরাবাজার এলাকায়। পল্টুকে জেরা শুরু হয় সেখানেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই তলব করা হয় রোগী পরিষেবার সঙ্গে জড়িত আরও এক কংগ্রেস কর্মী সাইন হোসেনকে। দু’জনকে পাশাপাশি বসিয়েই শুরু হয় জেরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী পরে অভিযোগ করেন, ‘‘হাসপাতালের গাফিলতি ঢাকতে মুখ্যমন্ত্রীর অনুগতরা এ বার চেনা পথেই ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব সাজাতে শুরু করে দিলেন। তাঁদের লক্ষ্য এখন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা।’’ রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও তদন্ত নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই অন্তর্ঘাতের কথা বলছে রাজ্য সরকার।’’

Advertisement

ডিআইজি (সিআইডি) ভরতলাল মিনা অবশ্য অধীরবাবু ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘তদন্তের স্বার্থে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ যে অনিচ্ছাকৃত খুন ও নাশকতার অভিযোগ করেছিলেন, তার তদন্তে নেমেই সবাইকে জেরা করা হচ্ছে।’’ জেলা কংগ্রেস নেতারা এ দিন রাতেই দাবি করতে থাকেন, অমলবাবুকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। প্রতিবাদে সোমবার থেকে জেলা জুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, ‘‘সোমবার থেকেই শুরু হবে অবস্থান বিক্ষোভ। মিছিলও করব আমরা।’’ সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরার চাপে রাতের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে অমলবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সিআইডি-র একটি দল যখন কংগ্রেস নেতাদের জেরা করছে, তখন হাসপাতালেরই একটি ঘরে ঘাঁটি গেড়ে বসেন ডিআইজি (সিআইডি)। সেখানে প্রথমেই তলব করা হয় উত্তম মণ্ডল নামে এক চিকিৎসককে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা আগেই জানিয়েছিলেন, হাসপাতালের ওই ভিআইপি ঘরটি চিকিৎসকরা তাঁদের বিশ্রামকক্ষ হিসেবেও ব্যবহার করেন। তার জেরেই খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তমবাবু ওই ঘরে ছিলেন। ঘরটির সামনেই অর্থোপেডিক ওয়ার্ড। জেরায় সিআইডি জানতে পারে, রাত কাটানোর পর শনিবার সকালে ঘর বন্ধ করে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের নার্সদের হাতে চাবি দিয়ে চলে গিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। বন্ধ ছিল এসি-ও। সিআইডি-র প্রশ্ন, তা হলে বন্ধ এসি থেকে আগুন লাগল কী করে?

হাসপাতালে বৈদ্যুতিক কাজ দেখভালের জন্য রয়েছে পূর্ত দফতরের একটি ঠিকাদার সংস্থা। সেই সংস্থার তিন ইলেক্ট্রিশিয়ানকেও সিআইডি এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে। শ্রীরাম মণ্ডল তাঁদেরই এক জন। সিআইডি সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময় সিআইডিকে শ্রীরাম বলেন, ‘‘২০১৫ সালের পর থেকে ওই কেবিনে বিদ্যুতের কোনও কাজই হয়নি।’’

দিনভর এই জেরা আর ঘন ঘন পুলিশ কর্তাদের আনাগোনা, পূর্ত দফতরের কর্মীদের ছোটাছুটির মাঝে মেডিক্যাল কলেজ এ দিন তার পরিচিত চেহারা ফিরে পায়নি। রোগীর সংখ্যা ছিল নিতান্তই কম। ইমার্জেন্সির চাতাল জুড়ে যে চেনা ভিড়টা থিকথিক করে, রবিবার তা ছিল না। হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, দিনে গড়ে প্রায় ৩৫০ জন রোগী ইমার্জেন্সিতে আসেন এখানে। রবিবার এসেছিলেন সাকুল্যে ১৪০ জন!

কেন? পেটের ব্যথায় ছটফট করা মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে আসা গফুর আলি বলছেন, ‘‘দায়ে পড়ে এনেছি বাবু। ভয় লাগছে, আবার না আগুন লাগে!’’

সবুজ পাড় সাদা শাড়ির আয়াদের ব্যস্ততাও এ দিন চোখে পড়েনি। শুধু পুরুষ ওয়ার্ডেই অন্তত ৬০ জন আয়া কাজ করেন। এ দিন তাঁদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েক জন ছাড়া কাউকেই দেখা যায়নি। এক জন বলে ফেললেন, ‘‘হাসপাতাল জুড়ে ঝুলছে ইলেকট্রিকের তার। ভয় হচ্ছে, আবার যদি আগুন লাগে! পেটের দায়, তাই আসতে হল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন