অব্যাহত পতন, পৌষের শেষ লগ্নে দুরন্ত ফর্মে শীত

১ জানুয়ারি আলিপুর আবহাওয়া দফতরের হিসেবে মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার তা নেমেছে ১০.৬ ডিগ্রিতে। দমদমে আরও কিছুটা কম, ৯.৫ ডিগ্রি! সব মিলিয়ে পৌষের শেষ লগ্নে দুরন্ত ফর্মে রয়েছে শীত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৬
Share:

আঁচ: কলকাতার চাঁদনি চক এলাকায়। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

তার পতন-কামনায় এককাট্টা হয়ে উঠেছিলেন শীতপ্রেমীরা। সেই কামনার জোরেই হোক বা অভিমানে পতনের খেল্ দেখিয়ে চলেছে পারদ। সাত দিনে সে নেমে গিয়েছে প্রায় পাঁচ ডিগ্রি নীচে। বিদ্যাসাগরের ভাষায় ‘ঢপাস করিয়া পতন’ হয়তো নেই। তবে তার এই হুড়মু়ড়িয়ে পতনের জেরেই ক্রমশ ইতিহাসের কাছাকাছি পৌঁছচ্ছে কলকাতার তাপমাত্রা। পারদের ছন্দপতনের কোনও খবর আপাতত নেই হাওয়ামোরগের কাছে।

Advertisement

১ জানুয়ারি আলিপুর আবহাওয়া দফতরের হিসেবে মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার তা নেমেছে ১০.৬ ডিগ্রিতে। দমদমে আরও কিছুটা কম, ৯.৫ ডিগ্রি! সব মিলিয়ে পৌষের শেষ লগ্নে দুরন্ত ফর্মে রয়েছে শীত।

১৮৯৯ সালের ২০ জানুয়ারি কলকাতার তাপমাত্রা নেমেছিল ৬.৭ ডিগ্রিতে। মহানগরে পারদ পতনের রেকর্ড সেটাই। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি দমদমের তাপমাত্রা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল সেই রেকর্ডকে। সে-দিন ৬.৮ ডিগ্রিতে থিতু হয় তাপমাত্রা। এ বার যে-ভাবে পারদ নামছে, তাতে রেকর্ড শেষমেশ ভেঙে যায় কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে আবহবিদদের মধ্যে। গত বুধবারকে মরসুমের প্রথম শীতলতম দিন ঘোষণা করা হয়েছিল। পারদের অবনমন অব্যাহত থাকায় সেই খেতাব আপাতত রবিবারের।

Advertisement

মরসুমের গোড়া থেকেই শীত এ বার ঝিমিয়ে ছিল। বারবার হোঁচট খেয়ে শীত শেষ পর্যন্ত থিতু হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল অনেকের। নতুন বছর পড়তেই অবশ্য গা-ঝা়ড়া দিয়েছিল শীত। সেই পুনরুত্থান যে এমন চেহারা নেবে, তা ভাবতে পারেননি শীতপ্রেমীদের অনেকেই। ‘শীত উধাও, শীত উধাও’ রব তুলেছিলেন যাঁরা, উত্তুরে হাওয়ার দাপটে তাঁরাও এখন কম্পমান। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়ায় এ দিনও শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে। শ্রীনিকেতনের তাপমাত্রা নেমেছে ৫.৮ ডিগ্রিতে। দমদমের শীত-ছবি দেখা যাচ্ছে সল্টলেক, বারাসত, নিউ টাউনের মতো শহর সংলগ্ন এলাকাতেও।

অনেকেরই বক্তব্য, তাপমাত্রা যত না কমছে, তার থেকে যেন বেশি মালুম হচ্ছে শীতের অনুভূতি। কেন? হাওয়া অফিসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় দিনে মাটি গরম হচ্ছে এবং রাতে সেই তাপ দ্রুত বিকিরিত হয়ে ঠান্ডা হচ্ছে। ফলে দিন ও রাতে তাপমাত্রার ফারাক হয়ে যাচ্ছে অনেকটাই। আলিপুরে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪.১ ডিগ্রি। রাতে সেটাই নামতে নামতে রবিবার ভোরে ১০.৬ ডিগ্রিতে থিতু হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ১৪ ডিগ্রির ফারাক! ‘‘তাপমাত্রার এই বিপুল ফারাক এবং উত্তুরে হাওয়ার ঝাপটার ফলেই শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে,’’ বলছেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা।

এই বাড়তি শীত-অনুভূতির জন্য স্থানীয় পরিবেশও দায়ী। পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ফাঁকা জায়গা এবং গাছপালা যত বেশি হবে, ঠান্ডা বেশি লাগবে। সেই জন্যই খাস কলকাতার থেকে শহরের উপকণ্ঠে সল্টলেক-দমদমেও শীত মালুম হচ্ছে বেশি। আরও বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে দূরের জেলাগুলিতে।

৫.৮ (-৫)
৭.১ (-৫)
৭.৮ (-৪)
৮.৪ (-৪)
৯.৫ (-৪)
৯.৬ (-৩)
১০.৬ (-৩)

বাঙালির শীতপ্রেম সোশ্যাল মিডিয়া, হোয়্যাটসঅ্যাপে নিত্যদিনই নতুন নতুন রসরসিকতার রসদ জোগাচ্ছে। তার একটি হল ‘আর কত নীচে নামবি শীত?’ সত্যিই তো, আর কত নামবে তাপমাত্রা?

‘‘শীতের কাঁপুনি আপাতত থাকছে। কলকাতার তাপমাত্রা ১০-১১ ডিগ্রির কাছেপিঠেই থাকবে,’’ বলছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন