Mamata Banerjee on SIR

খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে ‘ভয়াবহ অবস্থা’ হবে! আশঙ্কা মমতার, মতুয়াভূমে অভয় দিয়ে জানালেন, পথে নামবে সরকারও

সোমবার দলের প্রায় ২৫ হাজার নেতার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, এসআইআর-এর দ্বিতীয় পর্বের কাজ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে মন দিয়ে কাজ করতে হবে। মঙ্গলবার মমতা স্পষ্ট করে দিলেন, দ্বিতীয় পর্বে দলের পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে ময়দানে থাকবে তাঁর সরকারও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৩১
Share:

মঙ্গলবার বনগাঁয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার (এসআইআর) প্রথম ধাপ শেষ হবে ৪ ডিসেম্বর। তার পর ৯ ডিসেম্বর প্রকাশ হবে খসড়া ভোটার তালিকা। সেই খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে বলে মঙ্গলবার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশিই, মতুয়াভূম বনগাঁর মানুষকে আশ্বস্ত করে দলীয় মঞ্চ থেকে তৃণমূলনেত্রী এ-ও জানিয়ে দিলেন, সেই পর্বে রাজ্য সরকার মাঠে নেমে মানুষকে সাহায্য করবে। মূলত নথি পেতে যাতে সাধারণ মানুষের কোনও সমস্যা না হয়, সেটাই নিশ্চিত করবে রাজ্য সরকার।

Advertisement

মমতা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘খসড়া তালিকা বেরোলে দেখবেন ভয়াবহ অবস্থা! এটা অনুমান করতে পারছি।’’ এই প্রসঙ্গেই কমিশন নিযুক্ত বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলও)-দের কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে, তার উদাহরণ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘ইন্টারনেট নেই। বিএলও-রা (এনুমারেশন ফর্ম) আপলোড করতে পারছেন না। রামের জায়গায় শ্যাম, শ্যামের জায়গায় যদু চলে যাচ্ছে। এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার হচ্ছে। ফলে আসলের বদলে নকল জায়গা পেয়ে যাবে।’’

বুথস্তরে সরকারকে পৌঁছে দিতে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি করেছে নবান্ন। সেই সব শিবিরে সাধারণ মানুষ নিজেদের এলাকায় চাহিদার কথা বলেছেন। বুথপিছু ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে সেই সব কাজ করা শুরু করেছে প্রশাসন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে মানুষের পাশে থাকতে একই পদ্ধতিতে শিবির হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়ে দিলেন মমতা। মতুয়াদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘কথার খেলাপ করি না। ভোটের রাজনীতি করি না। মানুষের রাজনীতি করি। ভয় পাবেন না। তৃণমূল থাকতে কারও গায়ে হাত দিতে দেব না। পরিষ্কার বলছি।’’

Advertisement

সোমবার দলের প্রায় ২৫ হাজার নেতার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, এসআইআরের দ্বিতীয় পর্বের কাজ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে মন দিয়ে কাজ করতে হবে। কোনও শৈথিল্য দেখালে চলবে না। মঙ্গলবার মমতা স্পষ্ট করে দিলেন, দ্বিতীয় পর্বে দলের পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে ময়দানে থাকবে তাঁর সরকারও। জাতিগত শংসাপত্র হোক বা অন্য নথি— মানুষকে তা দিয়ে সাহায্য করবে প্রশাসন। সভা শেষে চাঁদপাড়া পাটপট্টি মোড় থেকে ঢাকুরিয়া হাইস্কুল মোড় পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার পথে পদযাত্রাও করেন মমতা।

বাংলা কিন্তু বিহার নয়

সদ্যসমাপ্ত বিহারের নির্বাচনের আগেও পড়শি রাজ্যে এসআইআর হয়েছিল। তার পর দেখা গিয়েছিল ৬০ লক্ষ লোকের নাম বাদ পড়েছে। ভোটের ফলে দেখা গিয়েছে স্থিতাবস্থা বিরোধিতাকে ধুয়েমুছে দিয়ে প্রবল শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে নীতীশ কুমার এবং বিজেপির জোট। সেই প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার মমতা বলেন, ‘‘বিহারে ওরা (মহাগঠবন্ধন) বেচারা লড়তে পারেনি। আপনাদের (নির্বাচন কমিশন) গেম ধরতে পারেনি। আমরা সব ধরিনি। মনে রাখবেন, বাংলা কিন্তু বিহার নয়। বিজেপি বাংলা দখলের জন্য হ্যাংলার মতো করছে।’’

দেশ হিলিয়ে দেব

তাঁকে আক্রমণ করা হলে, তিনি গোটা দেশকে হিলিয়ে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে আঘাত করলে সারা ভারত হিলিয়ে দেব। ইলেকশনের পরে দেশটা চষে বেড়াব।’’ বনগাঁর সভা থেকে ফের একবার বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনকে এক বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানান তিনি। নাম না-করে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে ‘ইয়েস স্যর’ এবং ‘ছোট স্যর’ বলে আক্রমণ করেন তিনি। কেন এত কম সময়ে ‘অপরিকল্পিত’ এসআইআর, সেই প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।

নিশানায় শান্তনু ঠাকুর

বনগাঁ থেকে বনগাঁরই সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নাম না-করে সরব হলেন মমতা। অর্থের বিনিময়ে মতুয়া মহাসঙ্ঘের কার্ড বিলি নিয়ে শান্তনুকে নিশানা করেন তিনি। মতুয়াসঙ্ঘের একাংশ যখন এসআইআরের প্রতিবাদে ঠাকুরবাড়িতে অনশনে বসেছিলেন, সেই সময়ে সপরিবার শান্তনুর বিলেত সফরের ছবি নিয়ে সমাজমাধ্যম সমালোচনায় নেমেছিল। মঙ্গলবার মমতা বলেন, ‘‘আপনাদের থেকে টাকা নিয়ে ফর্ম বিলি করে কেউ কেউ নাকি বিদেশে! কেন গেছে, বিরাট একটা রহস্য রয়েছে। কেন পালিয়েছে? কারণ, নিজেকে ‘সেফ’ করার জন্য। যতই চেষ্টা করুন, রেকর্ড পেয়ে গেছি। অন্যায় করলে গ্রেফতারের দাবি আমরাও তুলব।’’

বাজার গরম করতে চাইছেন উনি: শান্তনু

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘মহাসংঘ কী সিদ্ধান্ত নেবে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দেবেন না। ভোটের আগে এখানে এসে বাজার গরম করতে চাইছেন তিনি। মতুয়াদের অপমান করে উনি এই সব কথা বলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে এসে যা বলছেন, তা নীতি বিরুদ্ধ কথা।’’ ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন নিয়ে মমতার দাবি নস্যাৎ করেন শান্তনু। মমতার উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ভোটে জেতার জন্য আপনি বড়মার পা ধরতে কত বার এসেছেন? তা ভুলে গেলেন।’’

শীঘ্রই দুর্গাঙ্গন

দিঘায় জগন্নাথ ধাম তৈরির পরে মমতা জানিয়েছিলেন, এর পর কলকাতায় তিনি ‘দুর্গাঙ্গন’ তৈরি করবেন। সেই মতো নিউ টাউনে ইকোপার্কের বিপরীতে জমিও চিহ্নিত করে ফেলেছে হিডকো। মঙ্গলবার মমতা জানিয়ে দিলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই দুর্গাঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে মমতা ঘোষণা করেছেন শিলিগুড়িতে সবচেয়ে বড় মহাকাল মন্দির তৈরি হবে। সেই মতো সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিলিগুড়ি লাগোয়া উজানু মৌজায় ২৫ একর এবং গৌরচরণ মৌজায় ৪ একর জমিতে সিলমোহর দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement