নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করবেন না, জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
গণবিদ্রোহের জেরে পুড়ছে নেপাল। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন কেপি শর্মা ওলি। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, প্রতিবেশী দেশ নেপালকে তিনি ভালবাসেন। কিন্তু সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে পারেন না। এ নিয়ে ভারত সরকার কিছু বললে তবেই তিনি বলতে পারেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অগস্টে বাংলাদেশে যখন গণআন্দোলন হয় এবং তার জেরে সে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তখনও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্র যা বলবে, তা-ই করবে রাজ্য। নেপালের প্রসঙ্গেও একই অবস্থান নিলেন মমতা। এমনিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে চাপানউতর থাকলেও বৈদেশিক বিষয়ে যে তিনি কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া মন্তব্য করবেন না, তা আরও এক বার স্পষ্ট করলেন মমতা।
মঙ্গলবার কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গ সফরে প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে তাঁর। যাওয়ার সময়ে কলকাতার বিমানবন্দরে মমতা বলেন, তিনি নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘নেপাল আমার দেশ নয়। বিদেশি রাষ্ট্র নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না। প্রতিবেশী দেশ বলে আমরা তাকে ভালবাসি। এখন ভারত সরকার আমাদের কিছু বললে তবে কিছু বলতে পারব।’’ তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে কোনও বার্তা আসেনি।
তার পরেই তিনি জানান, শিলিগুড়ি, কালিম্পঙে নেপালের সঙ্গে বিস্তীর্ণ সীমান্ত রয়েছে। সেখানে শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যে হেতু আমাদের ব্যাপার নয় (নেপালের পরিস্থিতি), তারা তাদেরটা ঠিক করুক। আমাদের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। কেউ যাতে সমস্যায় জড়িয়ে না পড়েন, সেই অনুরোধ করব।’’ মমতা এর পরে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে শান্তিও কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি প্রতিবেশী ভাল থাকলে আমরা ভাল থাকি। শান্তি থাক, সকলে ভাল থাক। এটুকু বলার।’’
এর আগে গত বছরের অগস্টে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘‘শান্ত থাকুন। উস্কানিমূলক কথা ছড়াবেন না।’’ সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশে যে সরকার আছে তাদের উপর ছেড়ে দিন। আপনারা নিজেরা এমন কোনও মন্তব্য করবেন না যাতে কোনও হিংসা বা প্রতিরোধ শুরু হতে পারে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন, কিন্তু সেটা নিয়ে এমন কিছু লিখবেন না বা বলবেন না যাতে বাংলা বা ভারতের শান্তি নষ্ট হয়। এটা আমার সবার কাছে অনুরোধ। বিশেষ করে বিজেপি নেতাদের বলছি, কারণ আপনারা ইতিমধ্যেই নানা কিছু পোস্ট করছেন। যে পোস্টগুলো করা উচিত নয় বলেই আমি মনে করি। আমি আমাদের নেতাদেরও বলছি, কেউ কোনও পোস্ট করবেন না।’’ সূত্রের খবর ছিল, রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠকেও তিনি সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রীদের কোনও রকম মন্তব্য করতে বারণ করেছিলেন তিনি। এ বার নেপালের গণবিদ্রোহের সময়েই একই অবস্থান নিলেন তিনি।
সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নেপাল সরকার। তা ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দেয় ওলির ওই সিদ্ধান্ত। প্রতিবাদে পথে নামে দেশের ছাত্র-যুবেরা। তাদের বিক্ষোভে সোমবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল রাজধানী কাঠমান্ডু। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গুলি চালায়। তাতে মৃত্যু হয় অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারীর। এর পর বিক্ষোভের ঝাঁজ আরও বেড়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন ওলি।