তোলা না চাঁদা, ভিন্ন সুর শাসক-বিরোধীর

‘তোলা’ না ‘চাঁদা’, প্রশ্ন সেটাই! তা নিয়ে দুই বিধায়কের মতানৈক্যেই সরগরম সভা। বিরোধী বিধায়ক বললেন, ‘‘শিল্প সংস্থার অনেকের অভিযোগ, তাঁদের কাছে তোলা দাবি করা হয়।’’ শুনেই শাসক দলের বিধায়ক শুধরে দিলেন, ‘‘তোলা কেন কেন হবে? সে তো চাঁদা!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৫
Share:

অশোক ভট্টাচার্য

‘তোলা’ না ‘চাঁদা’, প্রশ্ন সেটাই! তা নিয়ে দুই বিধায়কের মতানৈক্যেই সরগরম সভা।

Advertisement

বিরোধী বিধায়ক বললেন, ‘‘শিল্প সংস্থার অনেকের অভিযোগ, তাঁদের কাছে তোলা দাবি করা হয়।’’

শুনেই শাসক দলের বিধায়ক শুধরে দিলেন, ‘‘তোলা কেন কেন হবে? সে তো চাঁদা!’’

Advertisement

প্রথম জন শিলিগুড়ির সিপিএম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় জন তৃণমূলের চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। দু’জনেই বিধানসভার শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য, অশোকবাবু কমিটির চেয়ারম্যানও। দু’দিন ধরে শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকার নানা সংস্থা, শিল্প তালুকে পরিদর্শনের পরে বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির সরকারি অতিথিশালায় বৈঠকে বসেছিল কমিটি। বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠকে চেয়ারম্যান অশোকবাবু বলেন, ‘‘অনেক সংস্থাই জানিয়েছে তাদের থেকে তোলা নেওয়া হয়। আমরা পুলিশকে বিষয়টি জানাব।’’

তখনই তৃণমূল বিধায়ক অসিতবাবুর সংযোজন, ‘‘অশোকবাবু তোলা হিসেবে যা বলছেন, তা আসলে চাঁদা। তোলা নয়। যাই হোক সেটাও মেনে নেওয়া যায় না।’’ তবে বিরোধীদের অভিযোগ, শব্দচয়ন নিয়ে মতানৈক্য যাই থাকুক, বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে আসা তথ্য ফের একবার শিল্পক্ষেত্রে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে।

শিলিগুড়ির মেয়র অশোকবাবুর নেতৃত্বে কমিটির দল বুধবার ফুলবাড়ি ক্যানেল লাগোয়া ফুডপার্কে গিয়েছিল। সেখানে একটি বিস্কুট-কেক প্রস্তুতকারী সংস্থার কারখানা পরিদর্শন করেন। ফুডপার্কের কোনও সীমানা পাঁচিল না থাকায় গাড়ি আসা-যাওয়ার পথে বহিরাগতরা তোলা দাবি করে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে কমিটির কাছে অভিযোগ করা হয়। এরপর নিউ জলপাইগুড়ি লাগোয়া টি পার্কেও বিভিন্ন সংস্থা দাবি করে, মাঝেমধ্যেই বহিরাগতরা নানা অছিলায় টাকা দাবি করে। বৃহস্পতিবার বিধাননগরে আনারস তালুক, এবং শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে গিয়েছিল কমিটি। পরিদর্শনের শেষে বিভিন্ন বণিক সভা, সংস্থাকে নিয়ে বৈঠক ছিল এ দিন। সেখানেও এমনই নানা অভিযোগ ওঠে বলে সূত্রের খবর।

সেই অভিযোগ প্রসঙ্গে এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে ‘তোলা’ শব্দটি ব্যবহার করেন অশোকবাবু। বস্তুত, এর আগে তোলাবাজির অভিযোগ নিয়ে বারেবারেই অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল আমলে শিল্প থেকে একতলা বাড়ি নির্মাণেও তোলা দিতে হয়। তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন খোদ শাসক দলের কাউন্সিলর। মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার তোলা-সিন্ডিকেট রুখতে বার্তা দিলেও অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে, তা নিয়ে দলের নেতাদের মাথাব্যথাও রয়েছে। তারপরে এ দিন সরকারি বৈঠকে অশোকবাবুর মুখে ‘তোলা’ শব্দটি শুনেই দ্রুত প্রতিবাদ করেন অসিতবাবু। যুক্তি দেন, ‘‘একটি সংস্থা জানিয়েছে, কয়েকজন মহিলা কোনও একটি পুজো বা অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা চেয়েছিল। তোলা বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু ওঁরা বলেননি, অশোকবাবুও বোঝাতে চাননি।’’ সরকারি সভায় বির্তক বাড়াতে চাননি অশোকবাবুও। পরে তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘তোলা হোক বা চাঁদা, শিল্পক্ষেত্রে এ সব বন্ধ করতে হবে।’’

তবে বির্তক থামেনি। পরে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক তথা রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব দাবি করেন, ‘‘বাম আমলেই এ সব এলাকায় তোলাবাজির সূত্রপাত। তাই কোনটা তোলা আর কোনটা চাঁদা তা বাম নেতারাই ভাল জানেন।’’

অশোকবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘ফুডপার্ক হোক বা টি পার্ক, শিলিগুড়িতে শিল্পের শুরু বাম আমলেই। তবে তোলাবাজি শিল্প হয়েছে এই আমলেই।’’ শিল্পসংস্থাগুলি অবশ্য বিতর্কে যেতে নারাজ। তাদের দাবি, নাম যাই হোক, জোর করে টাকা আদায় চলতে থাকলে, শিল্প চালানো সম্ভব হবে না। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বণিকদের সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘তোলাবাজি বন্ধ করতে সব রকম পদক্ষেপ করুক সরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন