Tiljala Murder

যুদ্ধক্ষেত্র তিলজলা, শিশুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সম্মুখসমরে কেন্দ্র-রাজ্য

তিলজলাকাণ্ডে মৃত শিশুর বাড়ির ভিতরেই তরজায় জড়ালেন কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগো এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৭:৩৬
Share:

প্রিয়ঙ্কের অভিযোগ, তদন্ত প্রক্রিয়াকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ছবি: পিটিআই ।

তিলজলার শিশুমৃত্যুর ঘটনায় সংঘাত চরমে পৌঁছল জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের মধ্যে। মৃত শিশুর বাড়ির ভিতরেই তরজায় জড়ালেন জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগো এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়। তিলজলাকাণ্ডে রাজ্যের কমিশনের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগের পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার তিলজলায় মৃত শিশুর বাড়িতে একটি দল নিয়ে উপস্থিত হন প্রিয়ঙ্ক। কেন্দ্রীয় দল পৌঁছনোর কিছু ক্ষণের মধ্যে আধিকারিকদের নিয়ে সেখানে পৌঁছন সুদেষ্ণাও। সেখানেই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ায় কেন্দ্র এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন।

Advertisement

সুদেষ্ণার অভিযোগ, তিনি ওই শিশুটির বাড়িতে প্রবেশ করার পর তাঁকে ‘গেট আউট’ বলে বেরিয়ে যেতে বলেন প্রিয়ঙ্ক। তাঁর দাবি, এই ঘটনায় কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথ ভাবে কাজ করার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান কোনও সহযোগিতা করছেন না। উল্টে তিনি অভব্য আচরণ করছেন।

সুদেষ্ণার কথায়, ‘‘উনি (প্রিয়ঙ্ক) জোর করে আমাদের বার করে দিয়েছেন। আমাদেরও অধিকার রয়েছে কাজ করার। নিয়ম অনুযায়ী, দুই পক্ষের ভাই-বোনের মতো একসঙ্গে কাজ করার কথা। কিন্তু কেন্দ্র ভাবে আমরা কিছু কাজ করছি না। উনি যখন আমাকে বার করে দেওয়ার কথা বলছেন, তখন শিশুটির বাবা নিজে জানিয়েছেন আমি সাহায্য করেছি। অপরাধীকে ধরা হয়ে গিয়েছে। তদন্ত হচ্ছে। আমি ভিতরে ঢুকতেই আমাকে অভদ্র ভাবে আঙুল তুলে বলেন ‘গেট আউট’। আমাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোক বলেও মন্তব্য করা হয়।’’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও একটা মিথ্যা প্রচার করতে এসেছে কেন্দ্রের দল। উনি সেটা লুকিয়ে রাখছেন। আমরা কিছু গোপন করছি না। কিন্তু উনি আলাদা করে কথা বলতে চাইছেন। নিশ্চয়ই কোনও অভিসন্ধি রয়েছে। পরিবারের লোককে প্ররোচনা বা উস্কানি দেওয়ার চেষ্টাও করা হতে পারে। আমি এখানে সাহায্য করতে এসেছি।’’

অন্য দিকে প্রিয়ঙ্কের অভিযোগ, তদন্ত প্রক্রিয়াকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনিও পাল্টা অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণার বিরুদ্ধে। ‘গুন্ডামি’ করে তাঁকে মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও তাঁর অভিযোগ।

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গুন্ডামি করে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। নিশ্চয়ই কিছু লুকোনোর চেষ্টা চলছে এবং তদন্ত অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা চলছে। আমি বুঝতে পারছি না, কেন আমাকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা কোনও দুর্নীতির ঘটনা নয়। এক জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে।’’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘আমাকে এক বার চিঠি লিখে বলা হল আপনি আসবেন না। এখন যখন এসেছি তখন সাহায্য করতে এসেছি বলে পৌঁছে গিয়েছেন। আমার মনে হয় পুলিশ প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেদের কাজ ঠিক করেনি। আর তার জন্যই শিশুর প্রাণ গিয়েছে। মনে হয় সেই পুলিশ আধিকারিকদেরই বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।’’

তবে বাগ্‌বিতণ্ডার কিছু ক্ষণ পর দু’পক্ষই তিলজলা থানায় গিয়ে উপস্থিত হয়। থানায় আসেন মৃত শিশুর বাবা-মাও। এর কিছু ক্ষণ পরে অবশ্য নিজের আধিকারিকদের নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যান সুদেষ্ণা। যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের জেদের জয় হল। শিশুটির কথা ভেবে আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি। মানবিকতার কারণে বেরিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নৈতিক জয় হয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক টুইট করে জানিয়েছিলেন, তিলজলার ঘটনায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং পুলিশের ডিজিকে এই নিয়ে একটি নোটিস পাঠায় কমিশন। ওই নোটিসে তিলজলার ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর পর বৃহস্পতিবার তিলজলাকাণ্ডে রাজ্যের তরফে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই চিঠিতে তিলজলার ঘটনায় রাজ্যের কমিশনের তরফে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, কেন্দ্রকে দেওয়া চিঠিতে তা বিস্তারিত জানিয়েছেন রাজ্য কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা। কিন্তু বিতর্ক চিঠির শেষাংশ নিয়ে। সেখানে লেখা হয়েছে, কেন্দ্রের কমিশনের বাংলায় এসে তিলজলাকাণ্ডের তদারকি করার কোনও প্রয়োজন নেই।

গত রবিবার তিলজলাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত অলোক কুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সন্তানলাভের আশায় এক তান্ত্রিকের কথা শুনে ৭ বছরের শিশুকন্যাকে খুন করেন নিঃসন্তান আলোক।

এই ঘটনার প্রতিবাদে তিলজলায় সোমবার সকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। অশান্ত হয়ে ওঠে বন্ডেল গেট এবং পিকনিক গার্ডেন এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা বন্ডেল গেট এলাকায় যান চলাচল আটকে প্রতিবাদে নামেন। বালিগঞ্জে অবরোধ করে আটকে দেওয়া হয় ট্রেন চলাচলও। দুপুরে পরিস্থিতি সামলাতে আসা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুন নেভাতে আসা দমকলের ইঞ্জিনেও ইট-পাটকেল ছোড়েন বিক্ষুব্ধরা। এর পরই র‌্যাফ নামিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জ এবং ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়। এর পর সোমবার বিকেলের দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন