প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে আজাদ স্মরণ। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) আবহে বিজেপির বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতি করার অভিযোগে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল। এই পরিস্থিতিতে দেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজ়াদের জন্মদিনকে সামনে রেখে মঙ্গলবার সেই অভিযোগ সপ্তমে চড়াল কংগ্রেস। পাশাপাশি, এই দিনে সম্প্রীতির বার্তায় জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসকে পাল্টা বিঁধেছে বিজেপি।
সমাজমাধ্যমে মৌলানা আজ়াদের জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁকে ‘হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির প্রতীক’ হিসাবে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকে দলের রাজ্য দফতর বিধান ভবন-সহ রাজ্য জুড়েই দিনটি পালিত হয়েছে। বিধান ভবনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের অভিযোগ, “জওহরলাল নেহরুকে বা মৌলানা আজ়াদকে বলতে হয়নি ‘আমি হিন্দু না মুসলমান’। এখন যাঁরা দেশ চালাচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থে এই বিষয়টিকেই কাজে লাগাচ্ছেন। আর সেটা করছেন এসএইআর, সিএএ, এনআরসি-র নাম করে।”
মৌলানা আজাদ কলেজের প্রাক্তনী সংগঠনের অনুষ্ঠান। —নিজস্ব চিত্র।
এই প্রেক্ষিতে পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপি-ও। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের প্রশ্ন, “কংগ্রেস আগে বলুক দেশ কেন ভাগ হয়েছিল? রাহুল গান্ধী আলাদা দেশকে নেতৃত্ব দেবেন বলে, না কি ধর্মের ভিত্তিতে, ধর্মীয় পরিচয় সামনে রেখে দেশ ভাগ হয়েছিল?”
এ দিকে, একই উপলক্ষে মৌলানা আজ়াদ কলেজের প্রাক্তনী সংগঠনের আয়োজিত বক্তৃতাসভা থেকে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের নিশানা করেছেন ইতিহাসবিদ সৈয়দ ইরফান হাবিব। ‘বর্তমান ভারতে মৌলানা আজ়াদকে ফিরে দেখা’ শীর্ষক বক্তৃতায় হাবিব বলেছেন, “বর্তমানে যাঁরা নিজেদের জাতীয়তাবাদী বলে দাবি করেন, তাঁদের অনেকেরই এই নিয়ে ধারণা নেই। তাঁরা কখনও দেশে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় সংগ্রামের ধারণা গঠনের প্রক্রিয়াতেও ছিলেন না। অথচ, তাঁরাই আজ এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করছেন।” এই সূত্র ধরেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন দ্বারা মৌলানা আজ়াদের চিন্তা-ভাবনায় বদল, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ বলতে তিনি কী বুঝতেন, এমন নানা বিষয় উঠে এসেছে আলোচনায়। হাবিবের সংযোজন, “মৌলানা আজ়াদের মতে, দেশপ্রেমকে কোনও ধর্ম প্রশ্ন করতে পারে না। আর তিনি কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম নয়, সব মানুষের কথা বলেছেন।” আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন হুসনারা সেলিম, প্রসেনজিৎ বসু, তনবীর আহমেদ খান প্রমুখ।