বীরভূমের মাখড়ায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ এবং প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে আসরে নামল সব দলই। বীরভূমের ওই এলাকায় হতাহত এবং আক্রান্তরা সকলেই সংখ্যালঘু। রাজ্যে যখন মেরুকরণের রাজনীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন সংখ্যালঘু ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে সব দলই সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে।
মাখড়ায় যুযুধান দু’পক্ষের অন্যতম বিজেপি মঙ্গলবার কলকাতায় দলের রাজ্য দফতর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেছে। আজ, বুধবার প্রভাকর তিওয়ারি, শিশির বাজোরিয়া, শর্মিষ্ঠা কর পুরকায়স্থদের নিয়ে বিজেপি-র একটি প্রতিনিধিদল চৌমণ্ডলপুর এবং মাখড়া গ্রামে যাবে। তৃণমূলকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ দল হিসাবে চিহ্নিত করার আর্জি নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল আজ মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গেও দেখা করবে। কাল, বৃহস্পতিবার বিজেপি সাংসদদের প্রতিনিধিদল পাড়ুইয়ের অকুস্থলে যাবে। তার নেতৃত্বে মুখতার আব্বাস নকভির থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে দলের জাতীয় নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রকে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা।
বসে নেই বামফ্রন্টও। পাড়ুই-কাণ্ডকে ‘জঘন্য ঘটনা’ আখ্যা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বামফ্রন্ট বিধায়কদের একটি পরিষদীয় প্রতিনিধিদল আজ, বুধবারই পাড়ুই ও মাখড়ায় যাচ্ছে। বর্ধমানের বিস্ফোরণ, ভাঙড় এবং পাড়ুইয়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে অবিলম্বে সর্বদল বৈঠকের দাবি তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। তিনি এ দিন বলেছেন, “বিপজ্জনক দিকে এগোচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী নীরব দর্শক হয়ে আছেন! এখনই সর্বদল বৈঠক ডেকে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিন মুখ্যমন্ত্রী!” একই সঙ্গে মানসবাবুর মন্তব্য, “যে তৃণমূল এত সংখ্যালঘু দরদ দেখায়, তাদের নেত্রীকে মনে করিয়ে দিতে চাই, বীরভূমে নিহতদের সকলেই কিন্তু সংখ্যালঘু!”
পাড়ুইয়ের লড়াইকে আদালতেও টেনে নিয়ে গিয়েছে বিজেপি। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিনই মাখড়ার সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তোলেন বিজেপি-র আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, এই ব্যপারে বিজেপি-র বক্তব্য বা আবেদন হলফনামা দাখিল করে জানাতে হবে। আজ বিজেপি মাখড়া কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করবে। মাখড়ার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা এবং আহত ও আক্রান্তদের জন্য ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে বিজেপি।
বস্তুত, বিজেপি-র অভিযোগ, চৌমণ্ডলপুর ও মাখড়া গ্রামে পুলিশ এবং তৃণমূল চক্রান্ত করে নিরীহ গরিব গ্রামবাসীদের উপর হামলা করেছে। রাহুলবাবুর কথায়, “আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, আক্রমণ হচ্ছে জেনে নবান্ন থেকে ফোন করে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় থাকতে বলা হয়েছিল। এখন সে প্রমাণ প্রকাশ করছি না।” তাঁর দাবি, বিজেপি-র প্রতিরোধেই মাখড়ায় মহিলাদের সম্ভ্রম রক্ষা পেয়েছে।