বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা
Coronavirus In West Bengal

অসচেতন জনতা, ১৫ জেলায় ‘বিপদসঙ্কেত’ দেখছে স্বাস্থ্য দফতর

পুজোর চারদিন আগে শনিবার প্রকাশিত রিপোর্টে কেস পজ়িটিভিটি হারের মাপকাঠিতে রাজ্যের ১৫টি জেলার নামের নীচে লালকালির দাগ পড়েছে।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৩৭
Share:

লেকটাউন এলাকার এক পুজো-মণ্ডপে ভিড়। রবিবার রাতে। ছবি: সুমন বল্লভ

প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যায় বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবুও নির্বিকার পুজো উন্মাদনায় বিভোর ‘অসচেতন’ জনতা। চিকিৎসকদের আশঙ্কা যে অমূলক নয় তা জানান দিল স্বাস্থ্য ভবনের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বঙ্গে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হারের (কেস পজ়িটিভিটি রেট) নিরিখে ২৩টি জেলার মধ্যে ১৫টি জেলায় ‘বিপদসঙ্কেত’ দেখছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাব্যক্তিরা।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রতিটি জেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধি, মৃত্যুহার, নমুনা পরীক্ষার চিত্র, অ্যাক্টিভ কেস কত, সুস্থতার হার কী— সেই সংক্রান্ত একটি সাপ্তাহিক রিপোর্ট জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রকাশ করা হয়। পুজোর চারদিন আগে শনিবার প্রকাশিত রিপোর্টে কেস পজ়িটিভিটি হারের মাপকাঠিতে রাজ্যের ১৫টি জেলার নামের নীচে লালকালির দাগ পড়েছে। করোনায় মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পর্যালোচনা করে আটটি জেলার পরিসংখ্যান নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য ভবন।

জেলা স্বাস্থ্য পরিষেবা সূত্রে খবর, রিপোর্টে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ৮-১৪ অক্টোবরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার কেস পজ়িটিভিটি হার (সিপিআর) ২৪.৪৮ শতাংশ! সারা দেশে সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। গত ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহারাষ্ট্রের (১৯.৯৯) কেস পজিটিভিটি হারও উত্তর ২৪ পরগনা থেকে কম। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, ওই জেলায় সরকারি ল্যাবের পজ়িটিভিটি রেট ১৬.৯। তার সঙ্গে বেসরকারি ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার হাত ধরে প্রায় ২৫ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলেছে জেলার পজ়িটিভিটি রেট। তাঁর কথায়, ‘‘সংক্রমণে বাঁধ দেওয়ার আর জায়গা রয়েছে বলে মনে হয় না। এখন মৃত্যুর হার কমানোই মূল লক্ষ্য।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: বঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি সঙ্গত: অমিত

আরও পড়ুন: উৎসবে বেপরোয়া মনোভাব ও ভিড়ে বিপদ হতে দেরি হবে না

কলকাতা (১৮.৭৭), হাওড়া (৮.৬৮), পশ্চিম মেদিনীপুর (৮.৭০), জলপাইগুড়ি (৭.৯৯), নদিয়া (৭.৪৬), মালদহ (৬.৯১), হুগলির (৬.৮৫) পাশাপাশি যে জেলার সিপিআর একলাফে অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে তা হল ঝাড়গ্রাম। অক্টোবরের প্রথম থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ঝাড়গ্রামের সিপিআর ছিল ৫.৬৯ শতাংশ। সাতদিনের ব্যবধানে (৮-১৪ অক্টোবর) তা বেড়ে হয়েছে ১৩.১১ শতাংশ! স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে নমুনা পরীক্ষার নিরিখে আক্রান্তের হদিস মেলার মাপকাঠিতে আর যে সকল জেলার নামের পাশে লালকালির দাগ পড়েছে তা হল কালিম্পং (৫.৯৩), পশ্চিম বর্ধমান (৫.৬১), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৫.৫৯), পূর্ব বর্ধমান (৫.২৩), বীরভূম (৪.৮৩), পুরুলিয়া (৪.৩৮) এবং দক্ষিণ দিনাজপুর (৩.৫৬)।

(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)

জেলাগুলির মধ্যে মৃত্যুহার বৃদ্ধির সূচকে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২.৩৫)। আর যে সকল জেলার পরিসংখ্যানে (৮-১৪ অক্টোবর) করোনায় মৃত্যু হারে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে তা হল, পূর্ব মেদিনীপুর (১.৯৮), মুর্শিদাবাদ (১.৫৩), দার্জিলিং (১.৫১), কালিম্পং (১.২৯), মালদহ (১.২২), জলপাইগুড়ি (১.২০) এবং বীরভূম (১.১৫)। উত্তর ২৪ পরগনা সিপিআরে শীর্ষ থাকলেও ওই সময়ের (৮-১৪ অক্টোবর) মধ্যে সেই জেলার মৃত্যুহার ১.৯০ শতাংশ। কলকাতা (২.১৬) এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের (২.১৯) তুলনায় মৃত্যুহারে এগিয়ে রয়েছে হাওড়া (২.৭৯)।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে মৃত্যুহার হল ১.৫৩ শতাংশ। মোট নমুনা পরীক্ষার মাপকাঠিতে আক্রান্তের হার ৮.২০ শতাংশ। সেখানে উৎসবের মুখে বঙ্গের বিভিন্ন জেলার এই পরিসংখ্যান মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। কার্ডিয়াক সার্জন কুণাল সরকারের কথায়, ‘‘সংক্রমণকে নিজের গতিতে বাড়তে দেব নাকি নমুনা পরীক্ষার সংখ্যায় বৃদ্ধি ঘটিয়ে আক্রান্তদের চিহ্নিত করে আইসোলেট করার কাজে আরও গতি আনা হবে তা ঠিক করতে হবে। যে সকল রাজ্য সংক্রমণকে নিজের গতিতে বাড়তে দিয়েছে তাদের কিন্তু নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে।’’

(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)

স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম অবশ্য জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাঁর কথায়, ‘‘বেশিরভাগ কেসই হয় উপসর্গহীন নয় মৃদু উপসর্গযুক্ত। রাজ্যে সুস্থতার হার ৮৭ শতাংশ। রাজ্যবাসীর কাছে অনুরোধ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। উপসর্গ ফুটে ওঠার সঙ্গে নমুনা পরীক্ষা করে নিজেতে আইসোলেট করা উচিত। বয়স্ক মানুষদের বিশেষত সতর্ক থাকা উচিত। হাসপাতালগুলিতে যথেষ্ট বেড রয়েছ। আইসিইউ, জেনারেল বেড আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন