ফাইল চিত্র।
করোনা আক্রান্তেরা ওড়িশার বাসিন্দা। পড়শি সে রাজ্যেই তাঁদের করোনা ধরা পড়েছে। তবে ওই খবরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের একাংশও তটস্থ। কারণ, আক্রান্তরা বাংলা ফেরত। তাঁরা পশ্চিম মেদিনীপুর হয়েই ওড়িশায় ফিরেছেন।
ওই করোনা আক্রান্তরা ঠিক কবে বাংলা থেকে পড়শি রাজ্যে গিয়েছেন, কোন পথে গিয়েছেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেউ বা কারা তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন কি না, সে সবের খোঁজখবরও না কি শুরু হয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন অবশ্য মুখে কুলুপ দিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা শুধু বলছেন, ‘‘আমাদের কাছে এমন কোনও খবর নেই। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতেও পারব না।’’ জেলার অন্য এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের অবশ্য স্বীকারোক্তি, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। ওড়িশায় বাংলা ফেরত কয়েকজনের না কি, করোনা ধরা পড়েছে। তবে এ নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কিছু নেই। কারণ, ওঁরা ওড়িশার বাসিন্দা, সেখানেই ওঁদের করোনা ধরা পড়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এ জেলার কেউ ওঁদের কারও সংস্পর্সে এসেছেন জানা গেলে তাঁকে কোয়রান্টিন করা হবে। শুনেছি, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খোঁজখবর করছেন।’’
সূত্রের খবর, সোমবার পর্যন্ত ওড়িশায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৪। মঙ্গলবার বালেশ্বরের আরও ৫ জনের করোনা ধরা পড়েছে। ওই সূত্রে খবর, সোমবার ওড়িশা সরকার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে যাঁদের করোনা ধরা পড়েছে, তাঁদের মধ্যে ১০ জনই বাংলা ফেরত। এর মধ্যে ভদ্রকের ৫ জন এবং জাজপুরের ৫ জন রয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের একপাশেই ওড়িশার সীমানা। ওই খবরে পশ্চিম মেদিনীপুরেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বিশেষ করে মোহনপুর, দাঁতনের মতো এলাকায়। বাংলা ফেরত ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ওড়িশা সরকার ঘোষণা করেছে, যাঁরা ২৮ দিনের মধ্যে বাংলা থেকে রাজ্যে ফিরেছেন, তাঁদের স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। যোগাযোগ করে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। সূত্রের খবর, ভদ্রক এবং জাজপুরে মঙ্গলবার সে রাজ্যের ‘র্যাপিড রেসপন্স টিম’ পরিদর্শনে গিয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন ওড়িশার শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তারা। সূত্রের খবর, ভদ্রকের ওই ৫ জনের বয়স যথাক্রমে ৪৮ বছর, ৫৫ বছর, ৫৭ বছর, ৫৮ বছর এবং ৬৬ বছর। অন্যদিকে, জাজপুরের ওই ৫ জনের বয়স যথাক্রমে ২৮ বছর, ৩২ বছর, ৫০ বছর, ৫৮ বছর এবং ৬৪ বছর।
সূত্রের খবর, সম্ভবত ওই ১০ জন লরি কিংবা অন্য কোনও গাড়িতে করেই পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে ওড়িশা ফিরেছেন। ওই সূত্রে খবর, জাজপুরের ৫ জন হাওড়া এবং কলকাতার বড়বাজারে শ্রমিকের কাজ করতেন। আগেই দাঁতনের এক বৃদ্ধের করোনা ধরা পড়েছিল ওড়িশায়। তা নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে কম তোলপাড় হয়নি। ওই বৃদ্ধ আবার মেদিনীপুরের দুই হাসপাতাল ঘুরে ওড়িশার এক হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এ বার ওড়িশায় করোনা ধরা পড়া ১০ জনের বাংলা যোগেও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘অহেতুক উদ্বেগের কিছুই নেই। এ ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে কোনও পদক্ষেপ করার থাকলে নিশ্চিতভাবেই করা হবে।’’ সূত্রের খবর, ওই আক্রান্তদের ‘ট্রাভেল হিস্ট্রি’ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা পাওয়া গেলে জানা যাবে, আক্রান্তরা কবে বাংলা থেকে ওড়িশায় ফিরেছেন, কোন পথে ফিরেছেন প্রভৃতি।