আর্সেনিক দমন কী ভাবে, রিপোর্ট চাইল আদালত

রোগটা ধরা পড়েছে বছর বত্রিশ আগে। তা সত্ত্বেও স্থায়ী নিরাময়ের ব্যবস্থা হয়নি। এই অবস্থায় রাজ্যের আর্সেনিক দূষণের সমস্যা এ বার পৌঁছল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

রোগটা ধরা পড়েছে বছর বত্রিশ আগে। তা সত্ত্বেও স্থায়ী নিরাময়ের ব্যবস্থা হয়নি। এই অবস্থায় রাজ্যের আর্সেনিক দূষণের সমস্যা এ বার পৌঁছল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালতে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আদালত তার রিপোর্ট চেয়েছে রাজ্যের কাছে।

Advertisement

বাংলার হাজারো দূষণ সমস্যার মধ্যে আর্সেনিকের বিপদ প্রথম ধরা পড়ে ১৯৮৪ সালে। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কিছু সমীক্ষা-গবেষণা হলেও এই সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধান এখনও হয়নি। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে পারেনি রাজ্য সরকার। আর্সেনিক-প্রভাবিত এলাকায় জল ও শস্যবাহিত ওই বিষে প্রাণহানিও ঠেকানো যায়নি।

অথচ বিভিন্ন সময়ে দেশি ও বিদেশি গবেষকেরা আর্সেনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন। কিন্তু যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো পুরোপুরি রূপায়ণ করা হয়নি। সেই সব সুপারিশের সাহায্যে রাজ্যের আর্সেনিক-প্রভাবিত ন’টি জেলাকে ওই দূষণ থেকে মুক্ত করার নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত।

Advertisement

আর্সেনিক দূষণ সংক্রান্ত মামলাটি গ্রহণ করেছে ওই আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি, পরিবেশ, নগরোন্নয়ন দফতর এবং কেন্দ্রীয় ভূগর্ভস্থ জল পর্ষদকে। সুভাষবাবু জানান, পশ্চিমবঙ্গে আর্সেনিক দূষণের বর্তমান হাল কী এবং এ বিষয়ে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং কেন্দ্রীয় ভূগর্ভস্থ জল পর্ষদের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

সুভাষবাবু সোমবার পরিবেশ আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে জানান, রাজ্য জুড়ে যে-ভাবে যথেচ্ছ সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভের জল তোলা হচ্ছে, তাতে আর্সেনিকের বিপদ আরও বাড়ছে। আর্সেনিক-দানবের মোকাবিলায় কী কী করা দরকার, তার তালিকাও দিয়েছে ওই পরিবেশ কর্মী। তিনি জানান:

• নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ জল তোলা বন্ধ করতে হবে।

• সংরক্ষণ করতে হবে বৃষ্টির জল (রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং) ।

• আর্সেনিক কবলিত এলাকায় জলের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে নিয়মিত। কলকাতা পুরসভা-সহ রাজ্যের জল পরীক্ষাগারে পরিকাঠামো ও লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। তা পূরণ করতে হবে।

• আর্সেনিক-পীড়িত এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল দিতে হবে।

• আর্সেনিক-আক্রান্ত মানুষের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

• বাড়াতে হবে জনসচেতনতা।

বাংলায় এই মুহূর্তে আর্সেনিকের বিপদের ব্যাপকতা ঠিক কতটা?

২০০৬ সালে প্রকাশিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এ রাজ্যে কলকাতা-সহ অন্তত ন’টি জেলার ১১১টি ব্লক মারাত্মক ভাবে আর্সেনিকের কবলে পড়েছে। আবার ২০০৯ সালে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ভূগর্ভস্থ জল পর্ষদের একটি সমীক্ষায় রাজ্যের ৭৯টি ব্লককে আর্সেনিক কবলিত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও জল বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আর্সেনিকমিশ্রিত জল পানের ফলে সেখানকার বাসিন্দারা রোগাক্রান্ত হচ্ছেন। যাঁরা আর্সেনিক-বৃত্তের বাসিন্দা নন, ওই বিষ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তাঁরাও। আর্সেনিকমিশ্রিত জল সেচের কাজে ব্যবহার করায় ধান ও সব্জির মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকে পড়ছে আর্সেনিক। ফলে যাঁরা আর্সেনিক কবলিত এলাকায় থাকেন না, তাঁদের শরীরেও আর্সেনিক ঢুকছে। খড়ের মধ্যে আর্সেনিক থাকে। গরু-মহিষ সেই খড় খাওয়ায় তাদের শরীরে ঢুকছে ওই বিষ। গবাদি পশুর দুধেও এই রাসায়নিক মিশছে। সেই বিষ-মিশ্রিত দুধ খেয়ে বিপন্ন হচ্ছে মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন