Buddhadeb Bhattacharjee

বুদ্ধদেবের স্মরণানুষ্ঠানে এল না শিল্পায়ন প্রসঙ্গ, উঠল মন্ত্রিসভা ছেড়ে দেওয়ার কথা! নতুনদের অনুকরণ-বার্তা দিলেন বিমান

গত বছর ৮ অগস্ট সকালে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে প্রয়াত হন বুদ্ধদেব। সিপিএম রাজ্য দফতরে ঘরোয়া ভাবেই তাঁর স্মরণানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৫ ২০:৩৫
Share:

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভায় (বাঁ দিক থেকে) শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু। —নিজস্ব চিত্র।

শিল্পায়নের স্লোগান দিয়েই তাঁর নেতৃত্বে ২৩৫ আসন জিতে তৈরি হয়েছিল সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার। সেই শিল্পায়নের পথে এগোতে গিয়েই তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বকালেই ভেঙে পড়ে ৩৪ বছরের ‘ইমারত’। শুক্রবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রথম প্রয়াণ বার্ষিকীতে সিপিএমের স্মরণ-কর্মসূচিতে সে ভাবে এলই না বুদ্ধদেবের শিল্পায়ন দর্শনের কথা। বরং এক বার হলেও উঠে এল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিতর্কিত অধ্যায়, জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভা ছেড়ে বেরিয়ে আসার প্রসঙ্গ। তুললেন মন্ত্রিসভায় তাঁরই একদা সতীর্থ তথা সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

Advertisement

গত বছর ৮ অগস্ট সকালে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে প্রয়াত হন বুদ্ধদেব। সিপিএম রাজ্য দফতরে ঘরোয়া ভাবেই তাঁর স্মরণানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে শ’দুয়েক লোক ছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সেখানেই বুদ্ধদেবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মন্ত্রিসভা ছাড়ার প্রসঙ্গ তোলেন সূর্য। তিনি বলেন, ‘‘বুদ্ধদা একটা বিরাট ব্যাপার। জীবনের বেশির ভাগ সময়ে যখন মন্ত্রী থেকেছি, তখন উনিও মন্ত্রী ছিলেন। মাঝে ছিলেন না। ছেড়ে দিয়েছিলেন।’’

১৯৯৩ সালে রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন বুদ্ধদেব। শোনা যায়, তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি সচিবের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছিল তাঁর। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সেই সচিবের পক্ষ নেওয়ায় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব মন্ত্রিসভা ছেড়ে চলে এসেছিলেন। এ-ও শোনা গিয়েছিল, তিনি নাকি বলেছিলেন, ‘‘চোরেদের মন্ত্রিসভায় থাকব না।’’ কিন্তু তার কোনও সমর্থন কোনও তরফেই মেলেনি। বুদ্ধদেবের মন্ত্রিত্ব-ত্যাগ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। পরে অবশ্য তিনি আবার মন্ত্রিসভায় ফিরে যান। মন্ত্রিসভা ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর্বেই তিনি একটি নাটক লিখেছিলেন ‘সময়, অসময়, দুঃসময়’। তা-ও নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় বঙ্গ রাজনীতির আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল।

Advertisement

সরাসরি শিল্পায়নের প্রসঙ্গ না-উঠলেও সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায় উঠে এসেছে বুদ্ধদেবের ‘উদ্দেশ্যের সততা’র কথা। সেলিম বলেন, ‘‘বুদ্ধদা সম্পর্কে অনেকে একটা সময়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর এমন মানুষ পাওয়া যাবে না, যিনি বুদ্ধদার উদ্দেশ্যের সততা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন। তাঁর কোনও ব্যক্তিস্বার্থ ছিল না, তবে ব্যক্তিভাবনা ছিল।’’ নিজের রাজনৈতিক জীবনে বুদ্ধদেবের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেলিম কিছুটা হালকা ছলেই জানান, যাদবপুরের পড়ুয়া থাকাকালীন তিনি জিন্স আর টি-শার্ট পরতেন। কিন্তু বুদ্ধদেবের ‘ধমকেই’ তাঁকে সে সব ছেড়ে পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ধরতে হয়েছিল।

বুদ্ধদেবের স্মৃতিচারণ করেন তাঁর বন্ধু তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। তিনি এই প্রজন্মের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘দলের দেওয়া দায়িত্ব পালনে বুদ্ধদেব যে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতেন, তা এখনকার নেতাদের অনুকরণ করা উচিত।’’ শুক্রবার সকালে বুদ্ধদেবের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য এবং সন্তান সুচতনের সঙ্গেও দেখা করে আসেন বিমান, সেলিমেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement