Cyclone Amphan

তেষ্টার জলও নেই নদীবাঁধে আশ্রয় নেওয়া নীলিমাদের  

এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান পারুল গাজি বলেন, ‘‘গ্রামগুলি জলে ডুবে থাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ফ্লাড শেল্টারগুলিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সকলকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ

পাটলি খানপুর (হাসনাবাদ) শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০৩:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

জলে ডুবে আছে গ্রাম। ভাঙাচোরা বাঁধই এখন আশ্রয়। সেখানে বাঁশ পুঁতে টাঙানো হয়েছে ত্রিপল। পাশে খুঁটোয় বাঁধা গরু-ছাগল। সেখানে বসেই নীলিমা কয়াল বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে শুধু দু’গাল মুড়ি চিবোতে পেরেছি। আর কোনও খাবার নেই। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ। খাবার জল নেই এতটুকুও।’’ বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন তিনি। পাশে বসে থাকা নমিতা মণ্ডল, অমৃতা প্রামাণিকেরাও আঁচলের খুঁট দিয়ে চোখ মোছেন। নমিতা বলেন, ‘‘তাড়াহুড়োয় রেশন কার্ডটুকুও সঙ্গে আনতে পারিনি। এ বার যে কী হবে?’’

Advertisement

শুক্রবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের বনবিবি সেতু থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ বাইকে গিয়ে, দু’কিলোমিটার হাঁটুজল ঠেলে হেঁটে ঢোকা গেল পাটলি খানপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। গ্রামের মানুষের ক্ষোভের আঁচ টের পাওয়া গেল সেখানেই। ঝড়ে প্রাণটুকু বেঁচেছে বটে। তবে জল থইথই সংসারে খাবার-জল না পেয়ে কত দিন লড়াইটা চালাতে পারবেন, তা জানেন না গ্রামের মানুষজন। সবার মুখে একই কথা, ‘‘সরকার কি আমাদের কথা ভুলে গেল?’’

এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান পারুল গাজি বলেন, ‘‘গ্রামগুলি জলে ডুবে থাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ফ্লাড শেল্টারগুলিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সকলকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।’’ পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ কোনও না কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হাজার দু’য়েক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকশো বিঘার ফসল ও মাছ চাষ নষ্ট হয়েছে। নদীবাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ।

Advertisement

আরও পড়ুন: ক্ষতি অন্তত লক্ষ কোটি টাকা: মমতা ॥ হাজার কোটির প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর

টিয়ামারিতে গিয়ে দেখা গেল, নদীর প্রায় ৫০০ ফুট অংশে বাঁধ ভেঙেছে। পানসিঘাটায় দু’জায়গা মিলিয়ে বাঁধ ভেঙেছে প্রায় ৬০০ ফুট। এলাকায় আরও তিনটি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে বলে পঞ্চায়েত সূত্রের খবর। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই ৬টি গ্রামের অসংখ্য মানুষের। খাবার নেই একদানাও। নেই পানীয় জলটুকুও।

আরও পড়ুন: ‘কেন্দ্র জাতীয় বিপর্যয় বলুক’, দাবি বিরোধী বৈঠকে

গ্রামবাসীরা জানালেন, বুধবারের পর থেকে জোয়ার হলেই জল ঘরে ঢুকে পড়ছে। কিন্তু এই আশ্রয়টুকু ছেড়ে অন্যত্র যেতে চান না কেউ। ঘুনি পুলপাড়ায় ডাঁসা নদীর জল হু হু করে গ্রামে ঢুকছে। পুলের পাশেই ডাঁসা নদীর বাঁধের উপরে ত্রিপল, বাঁশ, চটা দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করছেন অনেকে। জানালেন, ঝড়ের সময়ে ঘর থেকে প্রায় কিছুই নিয়ে বেরোতে পারেননি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নয়। গ্রাম ছেড়ে দূরে যেতে চান না কেউই। তাই ঘরের কাছাকাছি বাঁধের উপরেই আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন