আলুর সহায়ক মূল্য বেঁধে দেওয়ার দাবি ব্যবসায়ীদের

এতদিন লাগাম ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি রুখতে আলুর সহায়ক মূল্য বেঁধে দিত সরকার। এ বার ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সহায়ক মূল্য নির্ধারণের দাবি জানাবে আলু ব্যবসায়ীরা। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রগ্রতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। গড়বেতায় শুক্র-শনি দু’দিন ধরে সংগঠনের ১৩ তম সম্মেলনে দু’হাজার আলু ব্যবসায়ীর মতামত নিয়ে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০৩:৫৩
Share:

এতদিন লাগাম ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি রুখতে আলুর সহায়ক মূল্য বেঁধে দিত সরকার। এ বার ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সহায়ক মূল্য নির্ধারণের দাবি জানাবে আলু ব্যবসায়ীরা। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রগ্রতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। গড়বেতায় শুক্র-শনি দু’দিন ধরে সংগঠনের ১৩ তম সম্মেলনে দু’হাজার আলু ব্যবসায়ীর মতামত নিয়ে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

Advertisement

গত বছর আলু সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্য ছিল কেজি প্রতি ১৩ টাকা। এ বার উত্‌পাদন বেশি হওয়ায় খোলাবাজারে আলু কেজি প্রতি ৫ টাকায় বিকোচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মতে, কেজি প্রতি ন্যূনতম ৮ টাকা দাম না পেলে চাষি ও ব্যবসায়ী উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সংগঠনের বিদায়ী সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের কাছে আলুর সহায়ক মূল্য নির্ধারণের দাবি জানানো হবে। অন্তত কেজি প্রতি ৮ টাকায় আলু বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। না হলে চূড়ান্ত ক্ষতির মুখে পড়তে হবে চাষি, ব্যবসায়ী, হিমঘর মালিক সকলকেই।’’

চলতি বছরে আলুর ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা কাঁচা আলুর দাম পাননি। বেশিরভাগই হিমঘরে আলু মজুত রেখেছেন। প্রশাসন ও হিমঘর সংগঠন সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের হিমঘরগুলিতে প্রায় ৩ কোটি প্যাকেট (প্রতি প্যাকেট ৫০ কেজি) আলু রয়েছে। মার্চের মধ্যেই আলু রাখা শেষ হয়ে যায়। এপ্রিলের মাঝামাঝি হিমঘর খোলে। সেই আলুর বেশিরভাগটাই চলে যায় ভিন্‌ রাজ্যে। হিমঘরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ আলু বেরিয়ে যায়। কিন্তু এ বার মাত্র ৫ শতাংশ আলু বেরিয়েছে। জেলা কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানসুনীল রানা বলেন, “হিমঘর থেকে আলু না বের করলে হিমঘর মালিকেরা ভাড়া পাবেন না। ফলে বিদ্যুত্‌ বিল, কর্মীদের বেতন দেওয়া যাবে না। এ ছাড়াও বহু আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। ভাড়া না পেলে মার খাবে হিমঘর ব্যবসা।”

Advertisement

কিন্তু কেন হিমঘর থেকে আলু বের করা হচ্ছে না?

চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ১০ টন অর্থাত্‌ ১ লরি আলু হিমঘরে রাখতে ন্যূনতম ৩২-৩৫ হাজার টাকা খরচ (বস্তা কেনা, শ্রমিক, পরিবহণ খরচ মিলিয়ে) হয়েছে। তার উপর হিমঘর ভাড়া, আলু নামানো, বাছাই সব মিলিয়ে আরও ২২ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। অর্থাৎ এক লরি আলু হিমঘর থেকে বের করার পর খরচ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫৪ হাজার টাকা। কুইন্টাল প্রতি দাম ৫৪০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে কুইন্টাল প্রতি ৪৮০ টাকায়। ফলে, কেউই হিমঘর থেকে আলু বের করতে রাজি হচ্ছেন না।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, এ বার ওড়িশায় কিছু আলু চাষ হওয়ায় চাহিদা কমেছে। আর পশ্চিম মেদিনীপুরে উৎপন্ন আলুর গুণগত মান তুলনায় খারাপ হওয়ায় তা কলকাতা-সহ এ রাজ্যের অন্যত্র রফতানি হয় না। সেখানে হুগলি ও বর্ধমানের আলুরই রমরমা। এই অবস্থায় পশ্চিম মেদিনীপুরের আলু ব্যবসায়ীরা জেলার আলু ভিন্‌ রাজ্যে পাঠাতে সরকারের কাছে আবেদন জানানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর সেই আলুই সরকারকে ন্যূনতম কেজি প্রতি ৮ টাকা দরে কিনতে হবে বলে দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। শীঘ্রই এই দাবিতে প্রগ্রতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির তরফে সরকারকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

সমিতির চলতি সম্মেলনে ৭০ জনের জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বার সভাপতি, সম্পাদক নির্বাচনের পাশাপাশি এক্সিকিউটিভ বডি গঠন করা হবে বলে বিদায়ী সম্পাদক বরেনবাবু জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন