হাড়োয়ার নারায়ণপুর গ্রামের পুকুরে মিলল বোমা। —নিজস্ব চিত্র।
ভোট কেন পড়ল বিজেপির ঘরে, এই প্রশ্ন তুলে দলের বেশ কয়েক জন সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অন্য একটি ঘটনায়, সিপিএমেরও কয়েক জনকে মারধরে অভিযুক্ত শাসক দল।
সন্দেশখালির সরবেড়িয়া-আগারকাটি পঞ্চায়েতের গোলবুনিয়া গ্রামে গণ্ডগোলের সূত্রপাত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে। কিছু দিন ধরেই এই এলাকায় প্রভাব বেড়েছে বিজেপির। বিশেষত, আদিবাসীদের মধ্যে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে তাদের সংগঠন। তৃণমূলের ছেলেরা জেলেতলা ও ডুগিপাড়া থেকে লোক ডেকে এনে এ দিন হামলা চালায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তারা বাঁশ, লাঠিসোঁটা নিয়ে মারধর করে বিজেপি সমর্থকদের। জখম হন জনা কুড়ি। তাঁদের চিকিৎসা করানো হয় রাজবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গুরুতর জখম ৫ জনকে রাতে আনা হয়েছে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে। বিজেপির অভিযোগ, জখমদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পথেও বাধা দেয় তৃণমূল। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রশান্ত সর্দারের বক্তব্য, “তৃণমূল নেতাদের ইন্ধনেই হামলার ঘটনা ঘটেছে আদিবাসীদের উপরে। কয়েক দিন ধরেই ওরা মোটর বাইক নিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে।”
অন্য দিকে, তৃণমূল নেতা নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “এটা নিছকই আদিবাসীদের নিজেদের গোলমালের ফল। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। বিজেপি আদিবাসীদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে।”
প্রসঙ্গত, এই এলাকারই ঝুপখালিতে ভোটের আগে এক আদিবাসী পরিবারের ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরিবারের কিশোরীকে বাইরে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ। দুষ্কৃতীরা তৃণমূল-আশ্রিত বলে অভিযোগ ওঠে। পরে কিশোরীকে দেখতে আসেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। তৃণমূলের লোকজন তাঁকে ঘিরে ধরে হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। বিজেপির লোকজন এক তৃণমূল কর্মীকে মারধর করেছিলেন। পরে বিজেপির জনা দ’শেক কর্মী-সমর্থককে বেধড়ক মারধর করে শাসক দলের লোকজন। শমীকবাবু এ দিন বলেন, “আদিবাসীদের কোনও নিরাপত্তা নেই। আমার উপরে আক্রমণ হওয়ার পরেও তৃণমূল বলেছিল, আদিবাসীদের নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল যে আদিবাসীদের বার বার আক্রমণ করছে, এ দিনের ঘটনায় তা আরও এক বার প্রমাণ হল।”
অন্য একটি ঘটনায়, উত্তর ২৪ পরগনারই আমডাঙায় এ দিন আক্রান্ত হয়েছে কয়েকটি সিপিএম পরিবার। বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থল বোদাই গ্রাম। রাজ্যে পঞ্চম তথা শেষ দফায় ভোটের দিন এখানে কয়েক জন তৃণমূলের লোকজনে গোলমালের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়। মঙ্গলবার হামলার ঘটনায় তারাই জড়িত বলে দাবি সিপিএমের। জখম তিন জনকে আমডাঙা ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভোটের পরে অশান্তি থামার লক্ষণ নেই দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। ক্যানিং থানার মিঠাখালিতে আবুল খয়ের মোল্লা, সত্যনারায়ণ দাস, হাইস্কুল পাড়ার সুব্রত ঘোষ এবং নোনাঘেড়ির প্রসাদ বিশ্বাসদের বাড়ি ভাঙচুর চালিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আক্রান্তেরা সকলেই বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের বলেই পরিচিত। জীবনতলা থানার ঘুটিয়ারিশরিফের শ্রীনগর এলাকাতেও তৃণমূল নেতা-সমর্থকেরা আরএসপি এবং সিপিএম সমর্থকদের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সব ক’টি ক্ষেত্রেই অভিযোগ মানতে নারাজ শাসক দল।