Dilip Ghosh’s martyr commemoration

‘আদি’ কর্মীদের ডেকে সোমবার খড়্গপুরে ‘শহিদ’ স্মরণ করবেন দিলীপ, তার আগে ‘গুরুদক্ষিণা’ দিয়ে ছুঁয়ে নিলেন সঙ্ঘ-শিকড়

দিল্লি-ফেরত দিলীপ শুধু নিজের প্রথম নির্বাচনীক্ষেত্রে ফিরছেন এমন নয়। তাঁর সাংগঠনিক জীবনের ‘শিকড়’ হিসেবে পরিচিত আরএসএসের শাখায়ও রবিবার দেখা গিয়েছে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতিকে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ১৯:৩৮
Share:

দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

দিল্লির বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যে ফিরে জোরদার লড়াই শুরু করুন।’’ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সম্ভবত সে পথেই পা বাড়ালেন। শুধু রাজ্যে ফিরে নয়, একেবারে শিকড়ে ফিরে নতুন করে রাজনৈতিক লড়াই শুরুর আয়োজন করলেন। যে এলাকা তাঁকে প্রথম বার জনপ্রতিনিধি করে আইনসভায় পাঠিয়েছিল, ২১ জুলাই সেখানেই ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ সভা পালন করবেন দিলীপ ঘোষ। সভায় ডাক পড়েছে মূলত বিজেপির ‘আদি’ নেতা-কর্মীদেরই। ঘটনাচক্রে যুব মোর্চার ডাকে ‘উত্তরকন্যা অভিযানে’ যোগ দিতে রাজ্য বিজেপির অন্যতম শীর্ষনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোমবার থাকছেন শিলিগুড়িতে। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দিলীপ থাকছেন ঠিক বিপরীত প্রান্তে।

Advertisement

২১ জুলাই দিলীপকে কোন মঞ্চে দেখা যাবে, তা নিয়ে গত সপ্তাহ দুয়েক ধরেই নানা জল্পনা চলছিল। দিলীপ নিজে বলছিলেন, ‘‘২১ জুলাই কোনও না কোনও মঞ্চে তো আমাকে দেখা যাবেই। উত্তর ২১ জুলাইতেই পেয়ে যাবেন।’’ রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির এই মন্তব্যের নানা ব্যাখ্যা নানা মহল থেকে করা হচ্ছিল। ফলে দিলীপকে নিয়ে জল্পনা ক্রমশ বাড়ছিল। কিন্তু ১৮ জুলাই বঙ্গে মোদীর সফরের দিন নড্ডার ডাকে দিলীপ দিল্লি রওনা দেওয়ায় সে সব জল্পনা অনেকটাই মিইয়ে যায়। আর দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে দিলীপ যখন জানিয়ে দেন যে, ২১ জুলাই খড়্গপুরে সভা করবেন, তখন যাবতীয় গুঞ্জনে ইতি পড়ে।

সোমবার বেলা ৩টে নাগাদ খড়্গপুরের গিরি ময়দানে জমায়েতের ডাক দিয়েছেন দিলীপ। কর্মসূচির নাম দিয়েছেন ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা’। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রবিবার আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘তৃণমূলের হাতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আড়াইশোর বেশি কর্মী খুন হয়েছেন। সোমবার খড়্গপুরের সভায় তাঁদেরই স্মরণ করব, শ্রদ্ধা জানাব।’’ কিন্তু তৃণমূল যে তারিখে ‘শহিদ দিবস’ পালন করে, দিলীপও সেই দিনকেই ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি’র জন্য বেছে নিলেন কেন? দিলীপের কথায়, ‘‘প্রকৃত শহিদ স্মরণ আমরাই করছি, তৃণমূল নয়। কারণ আমাদের কর্মীরা রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছেন। তৃণমূল যাঁদের স্মরণ করবে, তাঁরা প্রথমত, কংগ্রেসকর্মী ছিলেন। দ্বিতীয়ত, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের হাতে খুন হননি, তাঁরা পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন। আরা যাঁরা গুলি চালিয়েছিলেন বা যাঁদের নির্দেশে গুলি চলেছিল, তৃণমূল তাঁদেরই মঞ্চে বসিয়ে রাখবে।’’

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শহিদ দিবসে’ই বিজেপির পাল্টা কর্মসূচি রয়েছে উত্তরবঙ্গে। শিলিগুড়িতে যুব মোর্চার ডাকে ‘উত্তরকন্যা চলো’র আয়োজন হয়েছে। সেই কর্মসূচিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যোগ দিচ্ছেন। যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ জানাচ্ছেন, ‘‘তিনবাত্তি মোড় থেকে উত্তরকন্যা হয়ে মিছিল পৌঁছোবে চুনাভাটি ময়দানে। সেখানে জনসভা হবে। বিরোধী দলনেতা পুরো কর্মসূচিতেই হাজির থাকবেন।’’ তবে গত আড়াই মাসে দিলীপ যেমন দলের কোনও কর্মসূচিতে ডাক পাননি, শিলিগুড়ির এই কর্মসূচির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। অতএব, যে বিধানসভা আসন থেকে জীবনে প্রথম বার ভোটযুদ্ধে জিতেছিলেন দিলীপ, সেই খড়্গপুর সদরেই তিনি ফিরে গিয়েছেন ‘শহিদ স্মরণ’ করতে। শিলিগুড়িতে ডাক পাননি বলে খড়্গপুরে ফিরলেন, এমন কথা দিলীপ বলেননি। তবে সোমবার খড়্গপুরের সভায় বিজেপির ‘আদি’ কর্মীদের ডাকা হয়েছে বলে দিলীপ রবিবার আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে সব শহিদের পরিবার কাছাকাছি রয়েছে, সেই সব পরিবার আমাদের সভায় থাকতে পারে।’’

রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য় দিলীপের সভাকে ‘বিজেপির সভা’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লি যাওয়ার আগে শমীক বলেন, ‘‘একুশ জুলাই খড়গপুরে দিলীপ ঘোষ যে সভা করবেন, তাতে আমাদের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উপস্থিত থাকবেন। দিলীপ ঘোষ যখন সভা করতেন, তখন বিজেপির হয়েই সভা করতেন।’’

দিল্লি-ফেরত দিলীপ শুধু নিজের প্রথম নির্বাচনীক্ষেত্রে ফিরছেন এমন নয়। তাঁর সাংগঠনিক জীবনের ‘শিকড়’ হিসেবে পরিচিত আরএসএসের শাখায়ও রবিবার দেখা গিয়েছে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতিকে। নিউটাউনে আরএসএসের বার্ষিক ‘গুরুদক্ষিণা’ কর্মসূচিতে রবিবার সকালে যোগ দেন দিলীপ। তার পরের দিন নিজের প্রথম নির্বাচনীক্ষেত্রে গিয়ে নিজের আয়োজনে হওয়া সমাবেশে দিলীপ কী বলবেন, সে দিকে নজর থাকছে অনেকেরই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement