CAA Application

সিএএ আবেদনের বিষয়ে জোর করবেন না: বঙ্গ বিজেপি-কে বার্তা বনসলের! আস্থা-অনাস্থার অঙ্ক মাথায় রেখে নয়া কৌশল পদ্মের

বিজেপি সূত্রের খবর, বনসলের বার্তা হল— কেউ যদি মনে করেন সিএএতে আবেদন না-করে তিনি সুরক্ষিত থাকবেন, তা হলে তাঁর ব্যাপারটা তাঁকেই বুঝে নিতে দিন। খারাপ-ভাল যা হবে, তার দায় বিজেপির নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:০৭
Share:

(বাঁ দিকে) সুনীল বনসল, শমীক ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সচেতন করুন, কিন্তু জোর করার দরকার নেই। সিএএ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিকে বার্তা দিলেন দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা শরণার্থী হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে এসেছেন, সিএএ-র আওতায় তাঁদের নাগরিকত্বের আবেদন জমা করাতে বিজেপি গত বছর দেড়েক ধরেই তৎপর। রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরু হওয়ার মাসখানেক আগে থেকে সে তৎপরতা আরও বেড়েছে। প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ‘সিএএ সহায়তা শিবির’-ও খুলতে শুরু করেছে। বিজেপিচালিত শিবিরগুলির বিরুদ্ধে তৃণমূল পাল্টা প্রচারও শুরু করেছে। এমন আবহে বনসলের বার্তা— যাঁরা বিজেপির উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না, তাঁদের জোর করে বোঝানোর দরকার নেই।

Advertisement

গত ১ নভেম্বর বিজেপির রাজ্য দফতরে এসআইআর, সিএএ, এবং বুথ সশক্তিকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আলাদা আলাদা গোষ্ঠীকে একসঙ্গে ডেকে বৈঠকে বসেছিলেন বনসল। রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, সংগঠন সম্পদক অমিতাভ চক্রবর্তী, নির্বাচন সহ-প্রভারী বিপ্লব দেবও সে বৈঠকে হাজির ছিলেন। এসআইআর প্রক্রিয়ার উপরে নজরদারির দায়িত্বে থাকা নেতা-কর্মীরা, বিএলএ-রা এবং সিএএ সেলের কর্মীরা কী ভাবে পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন, তা বুঝিয়ে দেওয়াই ছিল বৈঠকটির মূল লক্ষ্য।

বৈঠকে সিএএ সংক্রান্ত বিষয়ে ‘বিভ্রান্তির’ প্রসঙ্গ ওঠে। বিজেপির ‘ফাঁদে’ পা দিয়ে সিএএতে আবেদন জমা দিলে নাগরিকত্ব চলে যাবে বলে উদ্বাস্তু এবং মতুয়া এলাকায় প্রচার করছে তৃণমূল। সে প্রচার যেমন স্থানীয় স্তরে টোটোয় মাইক বেঁধেও হচ্ছে, তেমনই সর্বোচ্চ স্তর থেকে আসা বয়ানের মাধ্যমেও হচ্ছে। ৪ নভেম্বর কলকাতায় যে মিছিলের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল, তার সমাপ্তি মঞ্চ থেকে খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘মতুয়া ভাইবোনেদের কাছে অনুরোধ করব, বিজেপির ফাঁদে পা দেবেন না। তা হলে আপনাদের অবস্থাও অসমের ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালির মতো হবে।’’ তৃণমূলের এই প্রচারে যে অনেকের মনে সংশয় তৈরি হচ্ছে, তা বিজেপি নেতারাও জানেন। সেই সংশয় কাটাতে তৃণমূলের চেয়েও জোরগলায় বিজেপির প্রচার শুরু করা উচিত কি না, তা নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার কোনও প্রয়োজন নেই বলে বনসল বার্তা দিয়েছেন।

Advertisement

বিজেপি সূত্রের খবর, বনসলের বক্তব্যের সারকথা হল, যাঁরা সিএএ-র আওতায় নাগরিকত্বের আবেদন জমা দিতে চান, তাঁদের সহযোগিতা করুন। যাঁরা জমা দিতে চান না, তাঁদের ছেড়ে দিন। কেউ যদি মনে করেন সিএএতে আবেদন না-করে তিনি সুরক্ষিত থাকবেন, তা হলে তাঁর ব্যাপারটা তাঁকেই বুঝে নিতে দিন। খারাপ-ভাল যা হবে, তার দায় বিজেপির নয়। বনসলের নির্দেশ, সকল শরণার্থীর কাছে সিএএতে আবেদন জমা করার পরামর্শ পৌঁছে দিতে হবে, প্রয়োজনে সহায়তা করতে হবে। কিন্তু যাঁরা তার পরেও জমা দিতে চাইবেন না, তাঁদের নিয়ে ভাবার দরকার নেই।

বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের এই নীতি কি রাজ্য বিজেপির জন্য ভাল হবে? রাজ্য নেতাদের দাবি, খারাপ হওয়ার কিছু নেই। তাঁদের ব্যাখ্যা, শরণার্থীদের মধ্যে যাঁরা বিজেপিকে সমর্থন করেন, তাঁরা বিজেপির পরামর্শেই আস্থা রাখবেন এবং সিএএ আবেদন জমা দেবেন। যাঁরা আস্থা রাখতে পারবেন না, তাঁরা আসলে বিজেপি-কে বিশ্বাস বা সমর্থন করেন না। অতএব তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়লে বিজেপির ক্ষতি নেই।

বনসলের নির্দেশমতো বিজেপি আপাতত শুধু সিএএ আবেদনের ‘সুফল’ প্রচারে জোর দিচ্ছে। ভোটার তালিকায় নাম টিকিয়ে রাখতে আপাতত শুধু সিএএ আবেদন জমা করাই যে যথেষ্ট, সে কথাই বিজেপি কর্মীরা উদ্বাস্তুপ্রধান এলাকায় বোঝাচ্ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement