হরিপুরে মেঘ কবে কাটবে, ধন্দে কর্তারা

তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় চুল্লিটি তিন দিন আগে উৎপাদন শুরু করেছে। অথচ এখনও কপাল খুলল না এ রাজ্যের হরিপুরের। প্রশাসনের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের ওই উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে আগ্রহী পরমাণু শক্তি নিগম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:০৩
Share:

তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় চুল্লিটি তিন দিন আগে উৎপাদন শুরু করেছে। অথচ এখনও কপাল খুলল না এ রাজ্যের হরিপুরের। প্রশাসনের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের ওই উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে আগ্রহী পরমাণু শক্তি নিগম। কিন্তু রাজ্য এখনও আগের অবস্থানেই অনড়। এই প্রেক্ষাপটে নবান্নের কর্তাদের ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণের আর্জি জানালেন নিগম কর্তারা।

Advertisement

হরিপুর প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্তা অনুতোষ চক্রবর্তীর সোমবার বলেন, ‘‘পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কী ভাবে তৈরি করা হবে তার যাবতীয় পরিকল্পনা তৈরি। রাজ্য সরকার ডাকলেই সব নথি নিয়ে আমরা হাজির হতে পারি।’’ নিগম সূত্রের খবর, গত বছরের মাঝামাঝি তাদের এক কর্তা হরিপুর নিয়ে কথা বলতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি। প্রশাসনের বক্তব্য, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে সায় নেই নবান্নের। তাই নিগমের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার প্রশ্নও নেই। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল এ দিন বলেন, ‘‘হরিপুর নিয়ে কোনও নির্দেশ আমার কাছে আসেনি।’’

এ রাজ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব প্রথম আসে জ্যোতি বসুর আমলে। ফ্রান্সের সহযোগিতায়, সাগরে। কিন্তু দলের সায় না থাকায় তিনি এগোননি। ২০০৬ সালে হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দেয় নিগম। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সায় দিলেও বেঁকে বসে সিপিএম। পরিবেশকর্মীদের একাংশও বিরোধিতা করে। পথে নামে তৃণমূল। রাশিয়াকে কথা দিয়েও শরিক তৃণমূলের চাপে এই প্রকল্প নিয়ে এক সময় পিছু হটতে হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে।

Advertisement

এ দিন হরিপুর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জুনপুটে এক নির্বাচনী সভায় তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “যতক্ষণ শুভেন্দু অধিকারীর দেহে প্রাণ আছে, ততক্ষণ হরিপুরবাসীকে উদ্বাস্তু করে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেব না।’’

হরিপুরে পরিবেশকর্মীদের যুক্তি ছিল, ওখানে প্রচুর মৎস্যজীবী এবং ঘন জনবসতি রয়েছে। পরমাণু কেন্দ্র হলে তাঁদের জীবনজীবিকায় প্রভাব পড়বে। সেই যুক্তিতে এখনও অনড় তাঁরা। কেউ কেউ পরমাণু চুল্লির বিপদ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও যাদবপুরের স্কুল অব নিউক্লিয়ার স্টা়ডিজের অধিকর্তা অমিতাভ গুপ্তের মতে, পরমাণু বিদ্যুৎ নিরাপদ। একই সুর কেন্দ্রীয় সরকারি পরমাণু গবেষণা সংস্থা ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারের অধিকর্তা অমিতাভ রায়ের কথাতেও।

হরিপুর প্রকল্পে পরিবেশগত দিক নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় গত দু’বছর ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলীয় এলাকার পাখিদের উপরে সমীক্ষা করায় নিগম। এ দিন তার রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়েছে। অনুতোষবাবুর দাবি, ‘‘হরিপুরের একটি কলেজের ছাত্রদের আমরা একটি পরমাণু কেন্দ্র ঘুরিয়ে এনেছি। স্থানীয় মানুষও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চান। তবে সেটা তখনই সম্ভব, যখন রাজ্য চাইবে।’’

রাজ্য কি আদৌ চাইবে? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন