অবসাদের তিমি দমনে স্কুলে এ বার মনোবিদ

মুশকিল আসান হিসেবে এ বার মনোবিদদের আঁকড়ে ধরতে চাইছে রাজ্য সরকার। তাঁদের বিশেষ ক্লাসে স্কুলপড়ুয়াদের মনের শুশ্রূষা করানোর পরিকল্পনা করছে তারা। পুজোর ছুটির পরেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানান স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাড়িতে বাৎসল্য আর স্কুলে একই সঙ্গে স্নেহ ও শাসনের যুগলবন্দিতে চারাগাছগুলোর অবাধে বেড়ে ওঠার কথা। অথচ কখনও সম্পর্কে ভাঙন, কখনও না-পাওয়ার বেদনা ক্রমশই গ্রাস করছে স্কুলপড়ুয়াদের। রয়েছে ‘ব্লু হোয়েল’ বা নীল তিমির মতো মারণ খেলার করাল হাতছানি। সেই সঙ্গে পঠনপাঠনের চাপ আর খেলাধুলোর অভাব যে বহু পড়ুয়াকে অকালে অবসাদের অতলে ঠেলে দিচ্ছে, সেটা মেনে নিচ্ছেন স্কুলশিক্ষা কর্তারাও।

Advertisement

মুশকিল আসান হিসেবে এ বার মনোবিদদের আঁকড়ে ধরতে চাইছে রাজ্য সরকার। তাঁদের বিশেষ ক্লাসে স্কুলপড়ুয়াদের মনের শুশ্রূষা করানোর পরিকল্পনা করছে তারা। পুজোর ছুটির পরেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানান স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা। শিক্ষা শিবিরের একটি বড় অংশ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, শুধু বহিরঙ্গের সুরক্ষা দিয়েই ছাত্রছাত্রীদের বিপদ আটকানো যাবে না। নানান অন্ধকারের আগ্রাসন থেকে তাদের অপরিণত মনের সুরক্ষা দরকার। মনোবিদদের দিয়ে সেই কাজ অনেকটা করানো যেতে পারে।

আরও পড়ুন: সুদিনের আশা নিয়ে পাহাড়ে ‘দশাই’

Advertisement

কী করবেন মনোবিদেরা?

সমস্যার মূলে পৌঁছতে স্কুলবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের কাউন্সেলিং চালু করাই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তাদের মতে, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ুয়াদের মানসিক ভিত মজবুত করতে পারলে অবসাদ অনেকটাই ঠেকানো যাবে। প্রলোভনের রঙিন মোড়ক সরিয়ে বিপদের কালো মুখটা চেনানো সম্ভব হবে। পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার জানাচ্ছেন, মনোবিদেরা স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বললে তাদের নানাবিধ সমস্যা সামনে আসবে। সমস্যার কারণ জেনে সমাধানসূত্র খুঁজতেও সাহায্য করবেন মনোবিদেরা। ‘‘স্কুলশিক্ষা দফতর বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এই নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে,’’ বললেন অভীকবাবু।

সরকারি সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, জেলায় এলাকা-ভিত্তিক মনোবিদদের অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হবে। এক-এক জন মনোবিদদের হাতে থাকবে কয়েকটি স্কুল। তাঁরা নিজেদের মতো করে প্রতিটি স্কুলে বিশেষ ক্লাসের জন্য সব ক’টি শ্রেণিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেবেন। সপ্তাহে অন্তত এক দিন পড়ুয়াদের ক্লাস করবেন। বেশ কিছু ইংরেজি স্কুলে এই ব্যবস্থা আছে। এ বার বাংলা মাধ্যমের সরকারি এবং সরকারি পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলেও এই ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে। এই কাজে একসঙ্গে কাউন্সেলিংয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনেক মনোবিদ প্রয়োজন। রাজ্যের অসংখ্য স্কুলে একসঙ্গে এত মনোবিদ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা। মনোবিদ বাছাইয়ের যোগ্যতা-মাপকাঠি কী হবে, সেটাও চূড়ান্ত করা যায়নি।

রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করছেন অনেক মনোবিদ। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম জানান, এর ফলে সমাজে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে যে, স্কুল শুধুমাত্র পঠনপাঠনের জায়গা নয়, এটা আদতে মনের এবং চরিত্রের সার্বিক উন্নয়নের পীঠস্থান। ‘‘শিশুদের সঙ্গে কাজ করতে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁদের সকলেই এই কাজ করতে পারবেন। সব পড়ুয়াকে মূলত এটাই বোঝাতে হবে যে, আমি তোমার সঙ্গে আছি,’’ বললেন ওই মনোচিকিৎসক।

এই ধরনের পদক্ষেপের সার্বিক উপযোগিতা স্বীকার করেও কিছু সংশয় প্রকাশ করছেন শিক্ষাজগতের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য স্কুলের তো ন্যূনতম পরিকাঠামোই নেই বলে নিত্যদিন অভিযোগ উঠছে। সেখানে এই পরিকল্পনা কতটা সুষ্ঠু ভাবে রূপায়ণ করা যাবে? আদৌ করা যাবে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন