WB SIR draft list 2025

খসড়া ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে না! এ বার আসল ঝাড়াইবাছাই শুরু করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন

খসড়া তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের সকলের তথ্য নিয়ে নিশ্চিত নয় কমিশন। দেড় কোটিরও বেশি ভোটারের তথ্যে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করছে তারা। ওই তথ্য যাচাই করা হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:০৪
Share:

নির্বাচনের সময়ে বুথের বাইরে ভোটারদের লাইন। — ফাইল চিত্র।

খসড়া তালিকায় নাম উঠে গিয়েছে দেখেই নিশ্চিন্ত হওয়ার জো নেই। তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এখনও। বলা ভাল, এখন থেকেই কমিশনের আসল ঝাড়াইবাছাই পর্ব শুরু হচ্ছে। কারণ, এনুমারেশন ফর্ম যাঁরা পূরণ করেছেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই নাম তুলে দেওয়া হয়েছে খসড়া তালিকায়।

Advertisement

গত ২৭ অক্টোবর রাজ্যে এসআইআরের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিল কমিশন। সে দিন পর্যন্ত রাজ্যে মোট ভোটার ছিলেন ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯। কমিশন সূত্রের দাবি, এনুমারেশন ফর্মে শুধুমাত্র সই থাকলেই খসড়া তালিকায় নাম তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই সূত্র জানাচ্ছে, মঙ্গলবার প্রকাশিত খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে ৭ কোটি ৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৬৩১ জনের। তবে এদের সকলেই রাজ্যের বৈধ ভোটার কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় কমিশন।

এর মধ্যে দেড় কোটিরও বেশি (প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ) রাজ্যবাসীকে চিহ্নিত করেছে কমিশন। তাঁরা রাজ্যের বৈধ ভোটার কি না, তা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছে না কমিশন। এই ভোটারদের তথ্যে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুসারে তাঁদের কমিশনের শুনানিতে ডেকে পাঠানো হবে। তথ্য যাচাই করা হবে। শুনানিতে সন্তুষ্ট না-হলে বাদ যেতে পারে নাম। প্রথমে কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছিল, এই ধরনের ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি। পরে কমিশন জানায়, সংখ্যাটি আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে।

Advertisement

কাদের শুনানিতে ডাকা হবে, তা স্থির করার জন্যও নির্দিষ্ট মাপকাঠি রয়েছে কমিশনের। খসড়া তালিকার মধ্যে ৩০ লক্ষেরও বেশি ভোটারকে অবশ্যই কমিশনের শুনানির মুখোমুখি হতে হবে। বাকি এক কোটিরও বেশি ভোটারের মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে কাউকে কাউকে ডাকা হবে শুনানিতে।

৩০ লক্ষের ‘নো ম্যাপিং’

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর জন্য বাড়ি বাড়ি এনুমারেশন ফর্ম বিলি করেছিল কমিশন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকার (রাজ্যে এর আগে শেষ এসআইআর হয়েছিল ওই বছরে) সঙ্গে কী যোগসূত্র রয়েছে, তা ভোটারদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় ওই ফর্মে। জানা যাচ্ছে, রাজ্যের ৩০ লক্ষ ৫৯ হাজার ২৭৩ জন ভোটার ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে কোনও যোগসূত্র দেখাতে পারেননি। অর্থাৎ, ২০০২ সালের সঙ্গে কোনও ‘ম্যাপিং’ করা যায়নি তাঁদের তথ্য। এদের সকলের নামই কমিশনের প্রকাশিত খসড়া তালিকায় রয়েছে। তবে তাঁরা রাজ্যের বৈধ ভোটার কি না, তা নিশ্চিত নয় কমিশন। তাই তাঁদের সকলকেই ডেকে পাঠানো হবে শুনানির জন্য।

সন্দেহে আরও ১ কোটি ৩৬ লক্ষ

‘নো ম্যাপিং’ শ্রেণিভুক্ত ভোটারদের পাশাপাশি আরও এক কোটির বেশি ভোটারকে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কমিশনের। এই শ্রেণিতে রয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ভোটার। তাঁদের নামও খসড়া তালিকায় রয়েছে। তবে তাঁদের এনুমারেশন ফর্মে পাওয়া তথ্য সন্দেহজনক ঠেকছে কমিশনের। সেই কারণে তাঁদেরও তথ্য যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে এই ১ কোটি ৩৬ লক্ষের মধ্যে সকলকেই যে শুনানিতে ডাকা হবে, এমন নয়। এঁদের বিভিন্ন জনের বিভিন্ন ধরনের তথ্যে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করছে কমিশন। যেমন, কোনও ক্ষেত্রে ভোটারের চেয়ে তাঁর বাবা বা মা মাত্র ১৫ বছরের বড়। কোথাও আবার ঠাকুরদা বা ঠাকুরমার চেয়ে ভোটার ৪০ বছরেরও ছোট নয়। মাঝে এক প্রজন্ম ব্যবধানের পরেও বয়সের ফারাক ৪০ বছরের কম। কোথাও ভোটারের সঙ্গে তাঁর বাবা-মায়ের বয়সের ফারাক ৫০ বছরেরও বেশি। আবার কোথাও ছয়ের বেশি ভোটারের বাবার নাম একই রয়েছে। এঁদের সকলের বাড়ি বাড়ি যাবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএলও-রা। এনুমারেশন ফর্মে যে ভোটারের কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবেও তিনি একই ব্যক্তি কি না— তা যাচাই করে দেখবেন বিএলও-রা। যাঁদের তথ্য যাচাই করার সময়ে বিএলও-রা সন্তুষ্ট হবেন না, তাঁদের ডেকে পাঠানো হবে শুনানির জন্য।

শুনানি করবেন এইআরও-রা

খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে এসআইআর প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপের কাজ। শুনানি পর্বের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। যাঁদের শুনানিতে ডাক পড়বে, আগামী কয়েক দিন তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নোটিস ধরাবেন বিএলও-রা। কবে কোথায় শুনানির জন্য ‘হাজিরা’ দিতে হবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই মতো নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যেতে হবে প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে পৌঁছে যেতে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে। তবে ওই শুনানির দায়িত্বে আর বিএলও-রা থাকবেন না। শুনানি করবেন কমিশন নিযুক্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এইআরও)-এরা। এর জন্য প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় ১০ জন করে এইআরও নিয়োগ করেছে কমিশন। সেখানে সংশ্লিষ্ট ভোটারের তথ্য যাচাইয়ের সময়েও যদি কমিশন নিযুক্ত আধিকারিক সন্তুষ্ট না হন, তবে তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে নাম।

খসড়া তালিকায় বাদ ৫৮ লক্ষ

পশ্চিমবঙ্গের যে খসড়া তালিকা মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে, তা থেকে বাদ পড়েছে ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার ৮৯৮ জনের নাম। এসআইআর শুরুর আগে সর্বশেষ ভোটার তালিকায় নাম ছিল ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯। তবে কমিশন সূত্রে খবর, প্রকৃত অর্থে ‘ঝাড়াইবাছাই’ বলতে যা বোঝায়, তা এই পর্বে হয়নি। যাঁদের সরাসরি নাম বাদ যাওয়ার কথা, শুধুমাত্র সেই ভোটারদেরই নাম বাদ গিয়েছে। মৃত, স্থানান্তরিত, নিখোঁজ এবং একাধিক জায়গায় নাম থাকা ভোটারদের নাম বাদ পড়েছে খসড়া তালিকা থেকে। এ ছাড়া অনেকে এনুমারেশন ফর্মই পূরণ করেননি। অর্থাৎ, রাজ্যের তাঁরা ভোটার হতে চান না। এই নামগুলিই বাদ পড়েছে খসড়া তালিকা থেকে। সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটি হল ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার ৮৯৮ জন।

২০০২-এর তালিকা: কত জনের যোগসূত্র

খসড়া তালিকায় থাকা ভোটারদের মোট তিনটি তালিকায় ভাগ করেছে কমিশন— নিজস্ব ম্যাপিং, প্রজিনি ম্যাপিং এবং নন-ম্যাপিং। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা নিজস্ব ম্যাপিংয়ের তালিকায় পড়ছেন। এমন ২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ১৮৮ জন ভোটারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাঁদের নাম ২০০২ সালের তালিকায় না-থাকলেও বাবা-মা বা আত্মীয়ের নাম আছে, তাঁরা প্রজিনি ম্যাপিং তালিকায় রয়েছেন। রাজ্যে তেমন ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৩৯ জন। এ ছাড়া, ৩০ লক্ষ ভোটার রয়েছেন, যাঁদের নিজেদের নাম বা আত্মীয়ের নামও ২০০২ সালের তালিকায় নেই। তাঁরা নন-ম্যাপিং তালিকাভুক্ত। এই তৃতীয় তালিকার সকলকেই কমিশনের তরফে শুনানিতে ডাকা হবে।

খসড়া তালিকা দেখবেন কোথায়

রাজ্যের সর্বত্র বিএলও-দের কাছে খসড়া তালিকা পৌঁছে গিয়েছে। রাজনৈতিক দলের বুথস্তরের এজেন্ট (বিএলএ)-রাও পেয়ে গিয়েছেন তালিকা। তাঁদের কাছ থেকে নিজ নিজ এলাকার খসড়া তালিকা দেখে নিতে পারবেন ভোটারেরা। এ ছাড়া কমিশনের ‘ইসিআইনেট’ মোবাইল অ্যাপ থেকেও তা জানা যাবে। খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে কি না, তা দেখে নেওয়া যাবে কমিশনের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর ওয়েবসাইট থেকেও। নির্বাচন কমিশনের অ্যাপটি খোলার পরে সেখানে বেশ কিছু অপশন পাওয়া যাবে। তার মধ্যে সবুজ রঙের একটি বক্সের মধ্যে লেখা আছে ‘সার্চ ইয়োর নেম ইন ভোটার লিস্ট’। সেটিতে ‘ক্লিক’ করলে নতুন একটি পাতা খুলে যাবে। নতুন পাতায় উপরের বাঁ দিকে একটি অপশন থাকবে ‘সার্চ ইয়োর নেম ইন ভোটার লিস্ট’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। তার পরে ক্লিক করতে হবে সার্চ বাই ‘ভোটার আইডি/এপিক’ অপশনে। সেটিতে ক্লিক করলে নীচে ভোটার আইডি বা এপিক নম্বর দেওয়ার একটি জায়গা থাকবে। সেখানে নিজের এপিক নম্বর দিয়ে সার্চ অপশনে ক্লিক করলেই সংশ্লিষ্ট ভোটার জেনে যেতে পারবেন, তাঁর নাম খসড়া তালিকায় রয়েছে কি না।

তালিকায় যাঁদের নাম নেই

এই খসড়া তালিকায় যাঁদের নাম থাকবে না, তাঁদের ভোটার তালিকায় নতুন করে নাম তোলার জন্য আবেদন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের পূরণ করতে হবে কমিশনের দেওয়া ফর্ম ৬। এ ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি থাকছে কমিশনের। নতুন করে নাম তোলার জন্যও এসআইআর প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে হবে ভোটারদের। ফর্ম ৬-এর সঙ্গে এনুমারেশন ফর্মের মতো দেখতে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে তাঁদেরও। যাঁরা আগে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করেননি, তাঁদের এখন ভোটার তালিকায় নাম তুলতে হলে নতুন করে আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা নতুন নাম তুলছেন, বা সর্বশেষ ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল না, তাঁদেরও ফর্ম ৬ পূরণ করতে হবে। অন্য রাজ্য থেকে আসা ভোটারেরা এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে চাইলে পূরণ করতে হবে ফর্ম ৮। সে ক্ষেত্রেও এনুমারেশন ফর্মের মতো দেখতে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে।

জীবিতের নাম ‘মৃতের’ তালিকায়

কোন বুথে কত জন মৃত, কত জন স্থানান্তরিত, খসড়া তালিকা প্রকাশের আগেই সেই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। হুগলির ডানকুনি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর সূর্য দে-র নাম সেই মৃতের তালিকায় উঠে গিয়েছে। অথচ, তিনি জীবিত। মঙ্গলবার খসড়া তালিকায় খুঁজতে গিয়ে মৃত এবং স্থানান্তরিতদের তালিকায় নিজের নাম দেখতে পান তিনি। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে রিপোর্ট তলব করেছে কমিশন। সূত্রের খবর, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক হুগলির ডিইও-র কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement