Accident

‘বেঁচে আছি! এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না’

কত ক্ষণ হবে ঠিক খেয়াল নেই। আপন মনেই গান শুনছিলাম। হঠাৎ করে একটা বিকট শব্দ। গানের আওয়াজ ছাপিয়ে কয়েকশো গুণ বেশি সেই শব্দে তাকিয়ে দেখি বাসটা শূন্যে উড়ছে।

Advertisement

মৌমিতা মণ্ডল

(গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি-র স্নাতকস্তরের ছাত্রী) শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ১৩:২১
Share:

মৌমিতা মণ্ডল। ডোমকল হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

হাত-পা এখনও কাঁপছে। বিশ্বাসই করতে পারছি না, বেঁচে আছি!

Advertisement

কী ভাবে বাসের ভিতর থেকে বেরিয়ে, সাঁতরে পাড়ে উঠেছি, বলতে পারব না। কিছুই মনে নেই। তার পর তো ওঁরা এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। বার বার নিজের গায়েই হাত দিয়ে দেখছি, এই আমিটাই আসল আমি তো!

সকাল সওয়া ৬টা থেকে দাঁড়িয়েছিলাম পুরনো বিডিও অফিসের মোড়ে। পাশেই আমার বাড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব বলে মালদহের বাসের অপেক্ষা করছিলাম। সাড়ে ৬টা নাগাদ এই বাসটি এসেছিল। ভিড়ে ঠাসা। তার মধ্যেই সেঁধিয়ে গিয়েছিলাম। উঠেই বসার জায়গা পাইনি। সব সিট ভর্তি ছিল। অনেকে দাঁড়িয়েও ছিলেন। সব মিলিয়ে জনা ষাটেক মানুষ তো ছিলেনই।

Advertisement

আরও পড়ুন
যাত্রিবোঝাই বাস বিলে, মুর্শিদাবাদে বহু মৃত্যুর আশঙ্কা, ৩ দেহ উদ্ধার

মহিলাদের আসনে এক ভদ্রলোক বসেছিলেন। তিনিই উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জায়গা দেন। বসে পড়ি। মোবাইলে গান শুনব বলে ব্যাগ থেকে হেডফোনটা বার করি। তার পর চোখ বন্ধ করে গানই শুনছিলাম।

কত ক্ষণ হবে ঠিক খেয়াল নেই। আপন মনেই গান শুনছিলাম। হঠাৎ করে একটা বিকট শব্দ। গানের আওয়াজ ছাপিয়ে কয়েকশো গুণ বেশি সেই শব্দে তাকিয়ে দেখি বাসটা শূন্যে উড়ছে। মুহূর্তেই জলের মধ্যে পড়ে যায় বীভৎস শব্দে। তার পর তলিয়ে যেতে শুরু করে। এর পর আর তেমন করে কিছু মনে নেই।

আরও পড়ুন: ঝাপসা কাচে লেখা ‘ইমার্জেন্সি এক্সিট’, ও পারে নিথর শাখা-পলা

তবে, জলের ভিতরে একটা আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছিলাম। কনকনে ঠান্ডা জল। তবে বেশ স্বচ্ছ। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কিছুতেই শ্বাস নিতে পারছিলাম না। শুধু মনে আছে, ওই আলোকে লক্ষ্য করে হাত-পা ছুড়ছিলাম। সাঁতারটা জানতাম। সেই সময় কারা যেন আমার পা ধরে টানছিল। গাল, মুখ, হাত— সবখানেই অন্যদের শরীরের ঝাপটা লাগছে। কে যেন আঁকড়ে ধরতেও চেয়েছিল। কিন্তু, তার পরেও কী ভাবে যেন উপরে ভেসে উঠি। হাত-পা ছোড়াটা থামাইনি এক মুহূর্তের জন্য।

ভাগ্যিস সাঁতারটা জানতাম। তাই কোনও রকমে পাড়ে উঠতে পেরেছি। পাড়ে ওঠার পর আর যেন পারছিলাম না। শুয়ে পড়ি। তখনই কারা যেন এসে আমাকে তুলে নেয়। তার পর তো এই ডোমকল হাসপাতাল। কপালের কাছটায় অনেকটা কেটে গিয়েছে। কী ভাবে, কে জানে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন