Jagdeep Dhankhar

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার নিয়ে চরম সংঘাতে ধনখড়-রাজ্য

এক নির্দেশিকায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় জানান, উপাচার্যদের তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। কোনও মাধ্যম দিয়ে নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০৫:২১
Share:

—ফাইল চিত্র।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্ব মঙ্গলবার আরও বাড়ল।

Advertisement

এ দিন এক নির্দেশিকায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় জানান, উপাচার্যদের তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। কোনও মাধ্যম দিয়ে নয়। তাঁর নির্দেশ না-মানলে আইনি ব্যবস্থার মুখেও পড়তে হবে বলেও হুঁশিয়ারি তাঁর। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, রাজ্যপাল যে ভাবে গায়ের জোর দেখিয়ে মস্তানসুলভ কথা বলছেন, তাতে উপাচার্যরা ও রাজ্য সরকার ব্যথিত।

২০১৯ সালে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য যে বিধি তৈরি হয়েছে, তাতে উপাচার্যেরা সরাসরি রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। তাঁদের উচ্চ শিক্ষা দফতরে বিষয়টি জানাতে হয়। উচ্চ শিক্ষা দফতর মনে করলে তা রাজ্যপালকে জানায়। কিন্তু রাজ্যপালের এ দিনের নির্দেশে দাবি করা হয়েছে, ‘কোনও বিধি সংশ্লিষ্ট আইনের ধারাকে লঙ্ঘন করতে পারে না।’ রাতে শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকায় পাল্টা দাবি করা হয়, ২০১৭ সালের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) আইনেই রাজ্য সরকারকে বিধি তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেই ক্ষমতাবলেই রাজ্য সরকার বিধি তৈরি করেছে ও বিধানসভা তা অনুমোদন করেছে। সমস্ত উপাচার্যকে এই বিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বঙ্গে অমিত শাহের ‘ভার্চুয়াল র‌্যালি’! সাজ সাজ রব রাজ্য বিজেপিতে

আরও পড়ুন: গরমে ট্রেনযাত্রা শেষে মৃত্যু কিশোর শ্রমিকের

সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে রাজ্যপালের নির্দেশ থেকেই সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক গৌতম চন্দ্রকে ওই পদে নিয়োগ করেন। পার্থবাবু সে দিনই দাবি করেন, রাজ্যপাল এ কাজ করতেই পারেন না। রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদে বেছে বেছে বিজেপির লোক বসানোর চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। উচ্চশিক্ষা দফতর জানায়, নতুন বিধি অনুযায়ী, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই সহ-উপাচার্য পদে কে বসবেন, তা ঠিক করতে হবে আচার্যকে। আইন অনুযায়ী, একই নাম দু’বার আচার্যের কাছে পাঠালে তাতেই তিনি সম্মতি দিতে বাধ্য। তা না-করে গৌতমবাবুকে সহ-উপাচার্য পদে নিয়োগ করাটা আইনসঙ্গত হয়নি। সোমবার রাতেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক আশিস পাণিগ্রাহীকে সহ-উপাচার্য পদে নিয়োগ করে উচ্চ শিক্ষা দফতর।

এ দিন গোটা বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় রাজভবন। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই আচার্য সহ-উপাচার্যের নাম ঘোষণা করেছেন বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। এর পাশাপাশিই রাজ্যপালের সই করা নির্দেশিকা পাঠানো হয় উপাচার্যদের।

বিতর্কের মধ্যেই এ দিন দুপুরে সহ-উপাচার্য পদে যোগ দিয়েছেন আশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার সন্ধ্যায় উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশ পেয়েছি। সেই নিয়োগপত্র নিয়েই পদে যোগ দিলাম।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহা বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশে আশিসবাবু সহ-উপাচার্য পদে যোগ দিয়েছেন। আজ থেকেই তিনি দায়িত্ব সামলাবেন।’’ উপাচার্যদের উদ্দেশে জারি করা রাজ্যপালের নির্দেশিকা নিয়ে নিমাইবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই মুহূর্তে কোনও কথা বলব না।’’ কিন্তু বহু উপাচার্যই এই ঘটনায় স্তম্ভিত বলে খবর। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘সহ-উপাচার্য পদে নিয়োগের যোগ্যতা ‘বায়োডেটা’ দেখেই মাপা উচিত বলে মনে করি। রাজ্যপাল তা দেখে আমাকে মনোনীত করেছিলেন। আমার কাছে নিয়োগপত্র এলে পদে যোগ দিতে যাব।’’

শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান, রাজ্যপাল কোনও নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেন, এমনটা তিনি জীবনে শোনেননি। পার্থবাবুর অভিযোগ, উপাচার্য পরিষদ তাঁকে জানিয়েছে, রাজ্যপাল উপাচার্যদের ফোন করে ভয় দেখাচ্ছেন। বলছেন, সাসপেন্ড করে দেবেন, খতম করে দেবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি রাজ্যপালকে বলতে চাই এ কাজ যেন উনি না করেন।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘রাজ্যপাল এক্তিয়ারের মধ্যে থেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন। আচার্য হিসেবে তিনি উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলতেই পারেন। পার্থবাবুরা কি ভেবেছিলেন যে উপাচার্যেরা সকাল-বিকেল তাঁদের সেলাম করবেন আর রাস্তায় ধর্নায় বসবেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন