Eyewitness

দু’টো রুটি খেতে চেয়েছিল

রুটি তৈরির জন্য সবে বাড়ির ভেতরে ঢুকেছি। হঠাৎ একটা হট্টগোলের আওয়াজ পেলাম বাইরে, বেরোনোর চেষ্টা করলেও আমার বৌ হাতটা চেপে ধরল।

Advertisement

হাফিজুল বিশ্বাস, প্রত্যক্ষদর্শী

সাহেবনগর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:০৭
Share:

হাফিজুল বিশ্বাস

সকাল সকাল বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখি, জনাকয়েক নাগরিক মঞ্চের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা একেবারে আমার বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করছেন। রাস্তার উপরে পাতা হয়েছে দু’টো বেঞ্চ। সেখানে বসেই তাঁরা আবদার করলেন, গরম কলাইয়ের রুটি লঙ্কা বাটা দিয়ে খাবেন। ওঁরা যে এলাকায় নয়া আইনের বিরোধিতায় বন‌্ধ ডেকেছেন জানতাম। সমর্থন ‌ছিল আমারও। তাই ওঁদের আবদারে সাড়া দিয়ে রুটি তৈরির জন্য সবে বাড়ির ভেতরে ঢুকেছি। হঠাৎ একটা হট্টগোলের আওয়াজ পেলাম বাইরে, বেরোনোর চেষ্টা করলেও আমার বৌ হাতটা চেপে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে উঠে গেলাম বাড়ির ছাদে। সেখান থেকেই গোটা ঘটনা দেখলাম। যা দেখলাম, তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। দিনের আলোয় প্রকাশ্যে যে ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে দাপাদাপি শুরু করল তৃণমূলের কয়েক জন নেতা-কর্মী তা ভাবলেও চমকে উঠছি। প্রথমে চলছিল কংগ্রেস নেতা জাব্বার সাহেবের সঙ্গে কথা কাটাকাটি, তার পরেই তার কলার ধরে মারধোর শুরু করল তৃণমূল নেতা তহিরুদ্দিন মণ্ডল, পিছনে থাকা তার সাঙ্গোপাঙ্গরা লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করল পিঠে মাথায়। ইতিমধ্যেই নাগরিক মঞ্চের অন্য সদস্যরা, এমনকি স্থানীয় মানুষেরাও ক্ষেপে ওঠেন। তাঁরা প্রতিবাদ করতেই ক্ষেপে ওঠে তহির সহ তার সঙ্গীরা। শুরু হল এলোপাথাড়ি গুলি, পড়তে শুরু করে বোমা। দিশেহারা মানুষ তখন ছুটতে থাকে এ দিক ও দিকে। আমরাও ভিতরের দিকে চলে যাই।

Advertisement

একটু পরে দেখি একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন, তহির ও তার সঙ্গীরা গাড়িতে উঠে পালাচ্ছে। অন্য দিকে ততক্ষণে নাগরিক মঞ্চের সদস্যরাও তেড়ে আসছে তাদের গাড়ির দিকে। ঘিরে ফেলেছে প্রায় গাড়ি। তহিরের বাহিনী তখন পালাতে পারলে বাঁচে। সেই সময়ে গাড়ি ছুটিয়ে এলাকা ছাড়ল তারা। আর এলাকা ছাড়ার সময়ে এলোপাথাড়ি গুলি এবং বোমা ফেলতে ফেলতেই চলে যায় গেল। একটু পরে শুনতে পেলাম যাওয়ার সময় মসজিদের কাছে আরও এক জনকে গুলি করে চলে যায় তারা।

যে মানুষগুলো আমার বাড়িতে রুটি খেতে চেয়েছিল তাদের ইচ্ছেটাও পূরণ করতে পারলাম না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন