B Tech Student

বছর পার, খোঁজ নেই বি-টেক ছাত্রের, হাইকোর্টে গেল পরিবার

নিঁখোজ ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের তদন্তে গাফিলতি রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:১৪
Share:

নিঁখোজ ছাত্র শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

প্রায় এক বছর ঘুরে যাওয়ার পরেও ছেলে ঘরে ফেরেনি। শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায় নামে নিঁখোজ ওই বি-টেক ছাত্রের হদিশ পেতে এ বার কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হল পরিবার। নিঁখোজ ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের তদন্তে গাফিলতি রয়েছে। পুলিশের উপর আস্থা না রাখতে পেরেই হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছেন বর্ধমানের বাসিন্দা সুখময় বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। পশ্চিম বর্ধমানের নতুনডাঙার বাসিন্দা মেধাবী ছাত্র শিবাজি বেলঘরিয়ার একটি মেসে থেকে গ্রাজুয়েট অ্যাপটিটিউট টেস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (গেট) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর কাকা সুখময় বলেন, ‘‘গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আমরা ওই মেস থেকে খবর পাই যে, আমার ভাইপোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” খবর পেয়েই তিনি কলকাতায় আসেন এবং নিমতা থানায় অভিযোগ জানান।

সুখময়ের দাবি, বেলঘরিয়ার ওই মেসে আরও কয়েক জন ছাত্রের সঙ্গেই থাকতেন তাঁর ভাইপো। তিনি শিবাজির মেসের সঙ্গীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, যে প্রতিষ্ঠান থেকে শিবাজি গেট-এর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ওই দিন সেখানেও যাননি। বন্ধুরা তাঁকে মেসেই শেষ বারের মতো দেখেন। এর পর শিবাজি কী ভাবে উধাও হয়ে গেলেন তা নিয়ে কোনও তথ্য দিতে পারেননি মেসের বন্ধুরা। সুখময়ের কথায়, ‘‘উধাও হওয়ার সময় সঙ্গে মোবাইল ফোন বা কোনও এটিএম কার্ডও সঙ্গে নেয়নি শিবাজি। এক দম এক কাপড়ে খালি হাতে বেরিয়েছিল।”

Advertisement

সুখময়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে নিমতা থানা একটি এফআইআর দায়ের করে। কিন্তু শিবাজির পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ শিবাজিকে খুঁজে বার করার জন্য উদ্যোগীই হয়নি। সুখময় বলেন, ‘‘আমি একের পর এক চিঠি দিয়েছি ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পদস্থ কর্তাদের। এমনকি নিজে গিয়ে দেখা করেছি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে। কিন্তু তাতেও তদন্তে কোনও গতি আসেনি।” শিবাজির পরিবারের দাবি, কোনও রকম মানসিক অবসাদের চিহ্ন মাত্র ছিল না শিবাজির মধ্যে। তবে, সুখময় জানিয়েছেন আধ্যাত্মিক বিষয়ে আগ্রহ ছিল শিবাজির।

আরও পড়ুন: জলঙ্গিতে সিএএ-বিরোধী বন্‌ধে গুলি, মৃত ২, অভিযুক্ত তৃণমূল

আরও পড়ুন: তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে অনুরাগ, প্রবেশকে সরিয়ে দিতে বলল নির্বাচন কমিশন

পুলিশের কাছ থেকে কোনও আশ্বাস না পেয়ে গত বছরের শেষ দিকে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ জানান। তাঁর জনস্বার্থ মামলা গৃহীত হয়েছে। ব্যারাকপুর পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা অবশ্য গাফিলতির কথা অস্বীকার করেছেন। ওই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই যুবক সঙ্গে এমন কিছু রাখেননি যা দিয়ে আমরা তাঁর কোনও হদিশ পেতে পারি। আমরা নিয়ম অনুযায়ী সমস্ত জায়গায় ওই যুবকের ছবি পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনও খবর আসেনি।” তদন্তকারীদের ইঙ্গিত, মোবাইল সঙ্গে থাকলে ওই যুবকের হদিশ পাওয়া অনেক সহজ হত।

সেই সূত্র ধরেই কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মোবাইল না থাকলে কারও সন্ধান পাওয়া যাবে না এটা কোনও কথাই নয়।” তিনি সম্প্রতি বাঁশদ্রোণী থানা এলাকার একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘ওই ছাত্রের সঙ্গে মোবাইল ছিল, তবে তা তদন্তে বিশেষ লাভ দেয়নি। তদন্তকারীরা ফোকাস করেছিলেন, কোথায় কোথায় যেতে পারেন ওই ছাত্র। সেই সূত্র ধরেই তদন্তে সাফল্য মিলেছিল।” ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘সেই সমস্ত তথ্য জানতে পুলিশকে খুব সতর্ক ভাবে খোঁজ করতে হয়, নিঁখোজ হওয়ার আগে ছাত্র কোনও ডায়েরি লিখেছেন কি না। কোন কোন ধরনের বই পড়েছেন বা বন্ধুদের সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলেছেন। এই সমস্ত জায়গা থেকেই মেলে সূত্র।’’ যদিও পরিবারের দাবি, নিমতা পুলিশ এতটা গুরুত্ব দিয়ে আদৌ তদন্ত করেনি।

এ সমস্ত অভিযোগ জানিয়ে শিবাজির পরিবার আদালতে যে অভিযোগ জানান, তা মামলা হিসাবে গ্রহণ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন