India

‘ভয় করছে খুব, আবার গর্বও হচ্ছে’

রংচটা আলমারির মাথায় জ্বলজ্বল করছে ছেলের ছবি, রূপচাঁদ শেখ। বার বার সে দিকেই যেন চোখ পড়ে যাচ্ছে খোস মহম্মদের।

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

নওদা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৫:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

ছোট্ট দাওয়া। চালায় অঝোর বৃষ্টি। খোস মহম্মদ ঘর-বার করছেন। টিভির নব ঘুরিয়ে খবরের চ্যানেলে মুখ রেখেই খাটের বাজু থেকে গামছাটা টেনে নিয়ে মুখ মুছে বাইরের সেই নিঝুম দাওয়ায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন— বড় অস্থির লাগে ভাই, বড় অস্থির। ছেলেডা কেমন আসে আল্লা জ়ানে। আসে কি না তাই বা কে বলতি পারে!’’ বাইরে বৃষ্টি পড়েই চলে, সেই বৃষ্টির শব্দে যেন গুম হয়ে আছে নওদার মধুপুর গ্রামের বাড়িটা।

Advertisement

রংচটা আলমারির মাথায় জ্বলজ্বল করছে ছেলের ছবি, রূপচাঁদ শেখ। বার বার সে দিকেই যেন চোখ পড়ে যাচ্ছে খোস মহম্মদের। বড় ছটফট লাগছে রূপচাঁদের স্ত্রীর, চেহারাতেও তার ছাপ স্পষ্ট। সোনিয়া বিবি বলছেন, ‘‘জানেন, খুব ভয় করছে আবার একটু গর্বও হচ্ছে। সীমান্তে বুক চিতিয়ে লড়ছে তো ও!’’

লাদাখ সীমান্তে কোথায় রয়েছেন রূপচাঁদ ওঁরা কেউ জানেন না। ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশে (আইটিবিপি) প্রায় সাত বছর ধরে রয়েছেন রূপচাঁদ। সরাসরি সেনা নয়, তবে শূন্যের নীচে হিমশীতল সেই অজানা দেশে বছরের পর বছর চিন সীমান্ত প্রহরাতেই তো কাটছে রুপচাঁদের। খোস মহম্মদ বলছেন, ‘‘এও তো এক ধরনের সেনাই হল নাকি!’’

Advertisement

লাদাখের চিন সীমান্তে নওদার মধুপুর, হরিহরপাড়ার ডাঙাপাড়ার বহু যুবক ছড়িয়ে রয়েছেন। কেউ সেনাবাহিনীতে কেউ বা আইটিবিপি’র মতো আধা-সেনায়। সোনিয়া ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘যেখানে যুদ্ধ হচ্ছে, শুনেছি সেখানেই পাহারায় রয়েছে রূপচাঁদ। প্রায় দু’বছর ধরে ওখানেই। এ বার বাবা ফিরে এলেই পারে, আর ভাল লাগে না।’’ তাঁর ঠোঁট কাঁপছে উৎকণ্ঠায়।

দিন কয়েক আগেও মা-বাবা, স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে, সাহস জুগিয়ে পরিবারের লোকজনকে রূপচাঁদ তখনই শুনিয়েছিলেন, ‘‘খুব উত্তেজনা, যুদ্ধ বাধতে পারে। তবে চিন্তা কোর না।’’ জানিয়েছেন ভাল আছেন, তবে এ বার আরও উপরে (পাহারের উপরে) সীমান্তে উঠে যেতে হবে। কিন্তু তারই মধ্যে টিভির পর্দায় ‘যুদ্ধ’।

তিন থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বাড়িতে উনুন জ্বলেনি। নমো নমো করে ভাত ফুটিয়ে রূপচাঁদের মা হারমিনা বিবি আর রাঁধতে পারেননি। বলছেন, ‘‘মন নেই, ভাল লাগছে না।’’ গ্রামের তহিদুল ইসলাম বলছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে ছেলেটা খুব সাহসী। বড্ড ডাকাবুকো। আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখছি ওর মধ্যে একটা ত্বেজ রয়েছে। দেখবেন ওর খারাপ হবে না, ভালই থাকবে ও।’’

দিন পনেরো অন্তর ফোন করেন রূপচাঁদ। দিন সাতেক আগে তেমনই একটা ফোন এসেছিল বাড়িতে। তার পর....শুধু বৃষ্টি পড়েই চলেছে, টিভিতে অনর্গল খবর ভেসে আসছে। শুধু চুপ করে থাকে মধুপুরের ছোট্ট বাড়িটা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন