ঝুপড়ি পুড়ে তিন শিশু-সহ মৃত ৭

তিন শিশুকে নিয়ে খেজুর ও তালপাতায় ঘেরা ছোট ঝুপড়িতে শুতে গিয়েছিলেন তিন বোন। গভীর রাতে আচমকা আগুনে সেই ঝুপড়ি পুড়ে যাওয়ায় মারা গেলেন ছ’জন। বোন এবং ভাগ্নে-ভাগ্নিদের উদ্ধার করতে জ্বলন্ত ঝুপড়িতে ঢুকে আটকে পড়ে মারা গেলেন এক যুবকও। 

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

পাড়া শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৪
Share:

তিন শিশুকে নিয়ে খেজুর ও তালপাতায় ঘেরা ছোট ঝুপড়িতে শুতে গিয়েছিলেন তিন বোন। গভীর রাতে আচমকা আগুনে সেই ঝুপড়ি পুড়ে যাওয়ায় মারা গেলেন ছ’জন। বোন এবং ভাগ্নে-ভাগ্নিদের উদ্ধার করতে জ্বলন্ত ঝুপড়িতে ঢুকে আটকে পড়ে মারা গেলেন এক যুবকও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুরুলিয়ার পাড়া থানার মহাদেবপুর গ্রামে ওই অগ্নিকাণ্ডে সাত জনের মৃত্যু ছাড়া, জখমও হন এক জন। জেলার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘আগুন লাগার কারণ জানতে ফরেন্সিক তদন্ত করানো হবে।’’

পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন ঝুপড়ির বাসিন্দা কালীপদ চৌধুরীর স্ত্রী খুশবু (২৫), তাঁর দুই সন্তান— গঙ্গা (৭) ও রাহুল (৫)। খুশবুর দুই বোন— প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী (১৫), গীতা চৌধুরী (২৮) ও গীতাদেবীর মেয়ে রাধিকা (৫)। তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারা যান কালীপদর শ্যালক সুনীল চৌধুরী (২৯)। আগুনে জখম কালীপদ বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

কালীপদর বাড়ি পুরুলিয়ার কাশীপুরের ধতলা গ্রামে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি শীতকালে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য মহাদেবপুরে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে আসতেন। তাঁর শ্যালক সুনীল মুম্বইয়ে দিনমজুরের কাজ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি পাড়া থানার দশারডিতে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। সেখান থেকে দুই বোন এবং ভাগ্নে-ভাগ্নিদের নিয়ে মহাদেবপুরে এসেছিলেন। কালীপদ, তাঁর বড় ছেলে শিবচরণ এবং গীতার দুই ছেলে রোহিত ও মোহিতের সঙ্গে ঝুপড়ির বাইরে এক ফালি মাটির দাওয়ায় শুয়েছিলেন সুনীল।

শুক্রবার পোড়া ঝুপড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বছর দশেকের শিবচরণ বলে, ‘‘আগুনের তাপে ঘুম ভেঙেছিল। বাবা আমাদের দূরে ঠেলে দেয়। মামা ততক্ষণে মা-মাসিদের বাঁচাতে ঘরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু বেরোতে পারেনি। বাবাও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জামা-কাপড়ে আগুন ধরে গেল।’’

পুলিশ জানায়, রাত প্রায় পৌনে ১২টা নাগাদ ওই ঝুপড়িতে আগুন লাগে। কাছাকাছি জনবসতি নেই। পুলিশ স্থানীয়দের নিয়ে দূর থেকে জল এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিছু পরে রঘুনাথপুর থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিনও পৌঁছয়। রাতেই ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার ও দমকলের বাঁকুড়া ডিভিশনাল অফিসার জয়দেব ঘোষাল। জয়দেববাবু বলেন, ‘‘দাওয়ায় উনুন রাখা ছিল। তাতে আগুন ছিল কি না বা ঝুপড়ির ভিতরে লম্ফ বা কুপি জ্বলছিল কি না দেখা দরকার।’’ তাঁর অনুমান, ঝুপড়ির ভিতরে যারা শুয়ে ছিলেন, তাঁরা সম্ভবত ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় জ্ঞান হারান। খেজুর ও তালপাতার ছাউনি থাকায় ঝুপড়িটিতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন