ভয়াবহ: মাটি কাটার যন্ত্র এনে উদ্ধার করা হচ্ছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির যাত্রীদের। রবিবার দেগঙ্গায়। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।
ইটবোঝাই লরির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লেগেছিল যাত্রী-বোঝাই মারুতি ভ্যানটির। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দু’টি গাড়িই ছিটকে পড়ে রাস্তার পাশের শুকনো নয়ানজুলিতে। ভ্যানের উপরেই পড়ে ইটবোঝাই লরিটি। দুমড়ে-মুচড়ে যায় ভ্যানটি। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একটি শিশু-সহ মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।’’ গুরুতর জখম অবস্থায় বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে আরও চার জনকে। এর মধ্যে রয়েছেন এক মহিলা ও একটি শিশু। সবাই ভ্যানটির যাত্রী। রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থানার উত্তর কাউকেপাড়ার বেড়াচাঁপা-বাদুড়িয়া সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন, আব্দুল মহিম মণ্ডল (২৯), ময়না খাতুন (৭), গাড়ির চালক হাবিবুর রহমান (২৫), হাসানুর জামান মণ্ডল (২৬) এবং আক্তারুল মণ্ডল (২৭)। সবাই বাদুড়িয়ার বাসিন্দা। হাড়োয়া এলাকায় একটি মেলা দেখতে আসছিলেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, লরিটির চালক পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফাঁকা রাস্তা পেয়ে দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল ইটবোঝাই লরিটি। সে সময় উল্টো দিক থেকে আসা ছোট গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রচণ্ড শব্দে শুনে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। পথ চলতি কয়েক জনের সামনেই ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার পরে ছোট গাড়ির ভিতর থেকে আর্তনাদ ভেসে আসে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই স্থানীয় লোকজন উদ্ধার কাজ শুরু করে দেন। সাধারণ মানুষ হাতে হাত লাগিয়ে ইট সরাতে থাকেন। ছোট গাড়ির ভিতর থেকে কোনও রকমে টেনে টেনে বের করা হয় রক্তাক্ত, জখম যাত্রীদের। পরে কাছের একটি ইটভাটা থেকে দু’টি মাটি কাটার যন্ত্র ঘটনাস্থলে এনে উদ্ধার কাজ চালানো হয়। জখমদের অটো ও ইঞ্জিন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে। সেখান থেকে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছু দিন আগে সড়কটি সংস্কার করে ঝাঁ চকচকে করা হয়েছে। তার পরই যান চালকেরা ওই সড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। যে এলাকায় এ দিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তার আগে পরে প্রায় এক কিলোমিটার পথটি ফাঁকা। ওই এলাকায় যান চালকেরা জোর গতিতে গাড়ি চালান। বসিরহাট থেকে ইট বোঝাই করে লরি ওই সড়ক দিয়ে চলে। স্থানীয় বাসিন্দা আয়ুব আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের দাবি, সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশও মোতায়েন করতে হবে।’’ ইটবোঝাই লরিটির বৈধ নথিপত্র ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।