গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দুর্যোগের পরে পাহাড়, সমতলে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। বৃষ্টি ধরেছে। দার্জিলিং, ডুয়ার্স থেকে পর্যটকেরা বাড়ি ফেরার তোড়জোড় শুরু করেছেন। অনেকে আবার সফর কাটছাঁট করেই বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছেন। সেই পর্যটকেরাই পড়ছেন বিপাকে। বাগডোগরা থেকে কলকাতাগামী বিমানের ভাড়া অন্যান্য সময়ের তুলনায় সোমবার প্রায় দু’ থেকে তিন গুণ। বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ডিজিসিএ জানিয়েছে, উৎসবের এই মরসুমে বিমানের ভাড়া যাতে লাগামছাড়া ভাবে বৃদ্ধি না পায়, সে দিকে নজর রাখছে তারা। যদিও তার পরেও বিপর্যয়ের সময়ে বাগডোগরা থেকে কলকাতাগামী বিমানের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার বিকেলে বাগডোগরা থেকে কলকাতাগামী বিমানের ভাড়া প্রায় ১৬ হাজার টাকা। দিল্লি ঘুরে যে বিমান কলকাতা আসছে, তার ভাড়া প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ফলে যাঁরা বিমানে চেপে কলকাতা ফিরতে চাইছেন, তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।
শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সহ সমতলে। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন। ডুয়ার্সের পরিস্থিতিও হয়ে ওঠে ভয়াবহ। নদীর জলস্রোত বৃদ্ধি পেয়ে ভেঙে যায় কাঠের সেতু। জলদাপাড়া টুরিস্ট লজে আটকে পড়েন প্রায় ২৫ জন পর্যটক। সোমবার তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে। পাহাড়ের আবহাওয়া ভাল হওয়ায় সেখান থেকেও নেমে আসছেন পর্যটকেরা। অনেকেই উদ্বেগে সফর কাটছাঁট করেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দা। অনেকে ভিন্রাজ্য থেকেও বেড়াতে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে। কিন্তু তাঁদের সামনে এখন বড় সমস্যা হল, কী ভাবে নিজেদের বাড়িতে ফিরবেন। অনেকেরই জরুরি কোনও প্রয়োজন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিমান ধরে তাড়াতাড়ি কলকাতা বা দিল্লি ফেরা দরকার।
যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, বিমানের ভাড়া সোমবার এতটাই বেশি, যে তাতে চেপে গন্তব্যে পৌঁছোনো এক প্রকার অসম্ভব। আরও অভিযোগ, বাগডোগরা থেকে কলকাতা যাওয়ার সরাসরি বিমানও কম চালানো হচ্ছে। বদলে তা দিল্লি বা বেঙ্গালুরু দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভাড়া হয়েছে তিন গুণ। যে পর্যটকদের রবিবার বাগডোগরা থেকে বিমান বা ট্রেন ধরার কথা ছিল, দুর্যোগের কারণে তাঁরা তা পারেননি। ফলে ওই পর্যটকেরা চেষ্টা করেছেন সোমবার বিমান ধরে কলকাতা ফেরার। আর তাতেই পড়েছেন বিপাকে। বিমানের ভাড়া বাদ সেধেছে। বিকেল ৫টা ০৫ মিনিটে বাগডোগরা থেকে কলকাতাগামী যে বিমান ছাড়বে, তার ভাড়া প্রায় ১৬ হাজার টাকা। বাগডোগরা থেকে সরাসরি কলকাতায় আসবে সেটি। এমনি সময়ে সেই বিমানের ভাড়া সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করে। যাত্রার দিনেই এমনি সময়ে কোনও কারণে বিমানের টিকিট কাটতে হলে সেই ভাড়া হতে পারে আট থেকে ১০ হাজার টাকা। সোমবার সেই বিমানের ভাড়াই প্রায় ১৬ হাজার টাকা।
বাগডোগরা থেকে বিকেল ৪টে ৪০ মিনিটে যে বিমান ছাড়বে, তা দিল্লি হয়ে কলকাতায় পৌঁছোবে ৬ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে। ওই বিমানের ভাড়া সোমবার প্রায় ৩৯ হাজার ১৫৮ টাকা।
এমনিতে বাসের ভাড়াও অস্বস্তিই বৃদ্ধি করেছে পর্যটকদের। ট্রেনে টিকিট না পেয়ে, বিমানের ভাড়ার জন্য অনেকেই বাসের দিকে ঝুঁকছেন। তাঁদের অনেককেই চড়া দামে বেসরকারি বাসের টিকিট কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, কিছু বাসের ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। রবিবার পাহাড় থেকে সমতলে নেমে আসা যাত্রীদের ঘরে ফেরাতে উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগম তাদের নিয়মিত পরিষেবার বাইরে তিনটি অতিরিক্ত বাস চালিয়েছে বলে খবর। তার পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি। অনেক যাত্রীকেই অতিরিক্ত ভাড়া গুণে ফিরতে হয়েছে বেসরকারি বাসে। যাত্রীদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রায় ২,৭০০ টাকা দিয়ে ভলভো বাসে টিকিট কেটে ফিরতে হয়েছে। এসি ছাড়া বাসের ভাড়াও ১,৩০০ টাকার আশপাশে।